শুক্রবার, মার্চ ১৩, ২০০৯

লিখতে পারি না


একটা সময় ছিলো, অনেক গল্প ছিলো বলার। নিজের ঘরের চাবি হারিয়ে ফেলে ঘরে ঢুকতে না পারার গল্প অথবা মন খারাপ করা কোন এক বিষন্ন সন্ধেতে শহরের কাছে পোষ-মানা ওই নদীটার কাছে গিয়ে বসে থাকবার গল্প কিংবা ছবি। সবই। এখন আর ইচ্ছে করে না সেইসব । মৃত্যু হয়েছে অনেক আগে সেই তরুণের।

কিন্তু, এখনো পড়ে আছে সে সেই নদীর তীরে, যেখানে নৌকো নেই, ভাসছে না কোন ভেলা। ওপারটা বড্ড দূরে। দেখা যায় না। যেনো বসে আছে, কেউ আসবে। অথবা, কারও অপেক্ষাতেও নেই। আসলে তাড়া নেই সম্ভবত। কোথাও যাবার নেই। সন্ধ্যেবেলা ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির মাঝে ভেজা শীতল ঘাসে পা দুটো মেলে দিয়ে বসে থাকে সে। দূরে, তৈরি হচ্ছে এরকম উঁচু ভবনগুলোর উপরে একগাদা ক্রেন। যেন জীবন্ত, একটা আরেকটার সাথে কাটাকুটি খেলছে।

আসলে কোন গল্প নেই। শরীর খারাপ কোন গল্প হতে পারে না। শুয়ে থেকে ছাদের দিকে চেয়ে থাকা কোন গল্প হতে পারে না। অলস বসে থেকে যান্ত্রিক ও লোকদেখানো ফেইসবুকে নাটকের সাজানো চরিত্রগুলোর স্ট্যাটাস মেসেজের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা নিয়ে কোন গল্প লেখা যায় না।

আমাকে নিয়ে আমি কোন গল্প লিখতে পারি না।

হ্যা, হয়তো গল্পে আসতে পারে, আমি ছয় বছরের লম্বা ছাত্রত্ব শেষে এবার বিশ্ববিদ্যালয় নামক প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিদায় নিচ্ছি। সহজ করে বললে, পড়াশোনায় ইস্তফা দিয়ে কর্পোরেট দাস হওয়ার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু, এসব দৈনন্দিন ঘটনা নিয়ে লেখা গল্পে আমি ছাড়া আর কোন চরিত্র আসবে না। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনায় আপাতত ফুলস্টপ দেয়া ও বৈশ্যিক কর্পোরেট বাজারের দাস হওয়া নিয়ে আমার মানসিক অনুভূতির কোন বিবরণও আসবে না।

অনুভূতিহীন এইসব দিনেও আমি তীব্রভাবে বিষাদময়তায় আক্রান্ত হই, দম বন্ধ হয়ে ওঠে। কানে গান লাগিয়ে, অনেক পুরনো কোন ফিকশন বইয়ে নিজের চেহারা আড়াল করে, ফাঁকা ট্রেনের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে অন্ধকার দেখি। স্মৃতির আয়নায় উপহাস করে আমার গত কাল । একান্তই নিজের গল্প। যে গল্প আমি আর লিখতে পারি না।

আমাকে পোড়ায় না রাষ্ট্রের সমরবাহিনীর যুদ্ধ অথবা বিদ্রোহ কিংবা নাশকতা, দেশ অথবা সময়ের পতন আমার কানে এসে থেমে যায়, মস্তিষ্কে কোন অনুভূতির তৈরি করে না। কান আমি বন্ধ করে রাখি, চোখে পড়ে থাকি ঠুলি। আগুন লেগেছে, বড়োজোর নিজের স্বজন আগুনের চারপাশে থাকার সম্ভাবনা না থাকলে আগ্রহ হারাই সে খবরে। কী দরকার যেচে পড়ে হাইপারটেনশন তৈরি করার? প্রতি মুহূর্তে স্বার্থপর অমানুষ হয়ে উঠি। প্রতি ক্ষণে ভালো মানুষ না হতে পারার ব্যর্থতা আমাকে বিদ্ধ করে। আমি অন্ধকার হেঁটে গিয়ে অন্ধ হয়ে উঠি, কূপমন্ডুক হওয়ার পথে আরেকটু এগিয়ে যাই।

কিন্তু এতকিছুর মাঝে, কিছু না লিখতে পারার কষ্টটাই বড্ড তীব্র হয়ে ওঠে।

২টি মন্তব্য:

নামহীন বলেছেন...

ami jodi konodin erokom likhte partam!
(apnar lekhar vokto ami...)

রাশেদ বলেছেন...

জ্বি।