শুক্রবার, জুলাই ২৫, ২০০৮

আমি দিনভিখারি, নাইকো কড়ি, দ্যাখো ঝুলি ঝেড়ে

অফলোড এর গল্প
দিনগুলো বড্ড তাড়াতাড়ি যায়। এইতো সেদিন এপ্রিল এলো, দেখতে না দেখতেই আগস্ট কড়া নাড়ছে। আগে আন্ডারগ্রেডে থাকতে অপেক্ষায় থাকতাম, কবে আগস্ট আসবে। আগস্ট-সেপ্টেম্বর দেশে থাকতাম পুরোটা সময়। শেষ দেশে গেছি গত ডিসেম্বরে, সেটাকে অবশ্য যাওয়া বলে না। সেই অর্থে দেশে গেছি দুই বছর আগে। দেশের স্মৃতি সেখানেই থেমে আছে। আস্ত একটা দেশকে কোথাও স্টিলশটে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে যেনো।

ডিসেম্বরে গিয়েছিলাম জনকের অসুস্থতায় হাজিরা দিতে, দিন চারেকের জন্যে। একটা ঘোরের মাঝে ছিলাম। দেশে যতটা সময় ছিলাম, তার চেয়ে বেশি ছিলাম বোধহয় যানবাহনের উপরে। ফেরার পথে ঘোরটা আরো বড্ড পেয়ে বসেছিল, এক ঘন্টা ধরে আমার নাম ডাকাডাকি হয়েছে জিয়া বিমানবন্দরে, আমি শুনতে পাই নি। সেই ফলাফল, প্লেন মিস। অফলোড।

অফলোড মানে ইমিগ্রেশন এর চেকিং এর দরজা আবার উল্টো দিকে বেরিয়ে আসা। অফলোড জিনিষটা বড্ড ঘোলাটে আর বিরক্তিকর। একটা সাদা কাগজে দরখাস্ত লিখতে হয়, মিথ্যে কথা বলতে হয়। যেমন, আমার পেট ব্যথা করছে। তাই আমার প্লেনে উঠতে ইচ্ছে করছে না। যেনো, স্কুলে টিফিন পিরিয়ডে ছুটি চাহিয়া প্রধান শিক্ষক বরাবর দরখাস্ত। উহু, এতো সহজ নয়। বড্ড ভেজালের । জিয়া বিমানবন্দরে যেসব খালামনিরা থাকেন, তাঁরা বড্ড রাগী। একবার শখ করে অফলোড করেই দেখুন নাহ!

তারপরও ভেজাল ছিলো, যে প্লেনটা মিস করেছিলাম, তার টিকেটটা অচল হয়ে যাওয়ায় আরেকটা টিকেট কিনতে হয়েছিল। একা গুলশান-কারওয়ানবাজার ছুটোছুটি। ঢাকা শহরে আমি এক অচল মানুষ। রাস্তাঘাট চিনি না। আমার দৌড় পলাশী-শাহবাগ-নীলক্ষেত বড়োজোর। কীভাবে পেরেছিলাম, জানি না।


পঁচা সময়
রোজ রাতে যে পঁচা নদীটার তীর ধরে দৌড়োই, তার পানিতে ভেসে গেছে এক নির্মাণ-কর্মী। গত সপ্তায়। হঠাৎ প্রচন্ড বৃষ্টির মাঝেও কাজ করতে গিয়ে। সেই জায়গাটায় গিয়ে মনে পড়ে, আহা এভাবেও "মানুষ" মুহূর্তেই নাই-মানুষ হয়ে যায়। হাসিকান্নায় মুখর কোন প্রাণ মুহূর্তেই টিভিতে দেখানো প্রাণহানির খবরে পরিণত হয়। সেইসব খবরের সাথে আরো শোনা যায় কোন এক হাইস্কুল পড়ুয়া মেয়ে তার বাবাকে মেরে ফেলেছে, অথবা অসুস্থ স্ত্রীর সেবায় বিরক্ত কোন বুড়োর স্ত্রীকে মেরে ফেলাটাও নিউজের একেবারে উপরের সারিতে থাকে। সেইসব কাহিনী নিয়ে স্মার্ট মিডিয়ার কাটাছেঁড়া দেখি। ভাবি, আহ, মৃত্যু! তুমি বড্ড হেডলাইনে থাকো।


লাট্টু
একটা লাট্টুতে আটকে গিয়েছিলাম বছর খানেক আগে। অনেকদিন পরেও সেই লাট্টু থেকে বেরুতে পারি নি। আসলে বেরুবার উপায় জানা নেই, সত্যি কথা বলতে।
তবে, এখন আর দুঃখ জাগে না অসময়ে। শুনতে ইচ্ছে করে না দুঃখজাগানিয়া কোন গান বারবার। সব কষ্ট জমে ওঠে, নিজের উপরে ক্রোধে পরিণত হয়, ক্ষোভের আশ্রয় নেয় দুঃখেরা। দম বন্ধ হয়ে আসে। মনে হয়, কোন এক মেঘেঢাকা ঘোলাটে চাঁদের রাতে উড়িয়ে দেই সবকিছু। তাও যদি মুক্তি মেলে। বলতে ইচ্ছে করে, মহারাজ, এবার ছুটি দাও। আমি আর অফলোড হতে চাই না। অফলোড হওয়ার বড্ড ঝামেলা। আমি জানি।
বলি, আমি দিনভিখারি, নাইকো কড়ি, তবু পার করো আমারে।

গান- হরি দিন তো গেলো, সন্ধ্যা হলো পার করো আমারে
কণ্ঠ- পরীক্ষিত বালা


-
অনলাইন রাইটার্স কমিউনিটি সচলায়তনে প্রকাশিত

৪টি মন্তব্য:

রাশেদ বলেছেন...

অফলোডের মজা নেবার কোন ইচ্ছে নাই। গালে হাত দিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকা চেহারার সাথে এই লেখাটা মানিয়েছে ভালোই।

সৌরভ বলেছেন...

ধন্যবাদ, রাশেদ ভাই। এতোদূর এসে কমেন্ট করবার জন্যে।
আচ্ছা, ভার্চুয়াল প্রোফাইল এর ছবিগুলোর এতো শক্তি ক্যানো?

এই যেমন, আপনার ছবি দেখলেই মনে হয়, একটা ছেলে এক্ষুণি পিঠের ব্যাগ থেকে ফুটবল বের করে বলবে, ইয়ো, ফুটবল খেলবা?

:-)

রাশেদ বলেছেন...

ধুরো! পোলাটা দেখি আমাকেও বিষন্ন বানানোর চেষ্টা করতেছে! :)

সৌরভ বলেছেন...

কী করি বলেন।
মজাদার মুচমুচে লেখা আসে না। :-(