বৃহস্পতিবার, মে ২৯, ২০০৮

আমি কখনো মানুষ হতে চাই নি

আমি কখনো মানুষ হতে চাই নি। আমি পাখি হতে পারতাম অথবা ফুল কিংবা সূর্যমূখী ফুলের গাছ। সবুজ পাতায় আর ডালপালায় ছড়ানো কোন মহাকায় বৃক্ষও হতে পারতাম হয়তোবা। মাছ হয়ে সাঁতরে বেড়ানোর সুযোগ দিলেও হয়তো আমি আক্ষেপ করতাম না এভাবে।
আমি বুঝে গেছি, মানুষ হওয়ায় বড্ড কষ্ট।

দুর্ভাগ্যবশতঃ মানুষ হয়ে জন্ম নিয়ে ফেলায় সামান্যতম গর্ববোধ হয় না আমার। মস্তিষ্কে ভাবনা নামের অনুভূতির বিকাশ হওয়ার বয়েস থেকে আমি দ্বিতীয় কোন মানুষের যাপিত জীবনের প্রতি ঈর্ষাবোধ করি নি। পরিপাটি পোশাকের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মানুষকে আমার ভীষণ অশ্লীল বোধ হয় সবসময়।

মানুষ হয়ে গেছি বলেই ভেজা মেঘেদের দেখে আমার কক্ষণো প্রেমভাব জেগে ওঠে না। ক্ষুদ্র মাছরাঙা পাখিদের দেখে আমি ঈর্ষাবোধ করি, পুরো পৃথিবী ভিজে যাবার পরেও একটা গা ঝাড়া দিলেই যার গায়ের সমস্ত ভেজা বৃষ্টি হেসে ওঠে খলখল করে। বৃষ্টির সাথে এইরকম ঈর্ষনীয় সম্পর্ক আমার কাছে অদ্ভূত মনে হয় সবসময়।

অথবা আমি শালিক হতে পারতাম, শীতের হালকা রোদে আধা-ঘোমটা নতুন বউয়ের ফেলে দেয়া মুড়ি বা চাল-ভাজার লোভে লাফিয়ে পড়তাম গেরস্থের উঠোনে। কিন্তু, আমি লজ্জ্বা মাখানো মাছরাঙা হতে পারি নি, শালিকও নয়।

মানুষ হিসেবে যাপিত জীবন আমার কাছে দুঃস্বপ্ন আর অনাকর্ষণীয় বোধ হয়।
শালিক অথবা মাছরাঙা কিংবা আমার রোজকার হাঁটার পথের মহাকায় বৃক্ষটি যন্ত্রণাময় স্মৃতি লালন করে না।
স্বপ্নময় শৈশবের নস্টালজিয়া অথবা সম্ভাবনাময় সময়ের ব্যর্থতা তাদেরকে পোড়ায় না। মানুষ হিসেবে প্রতিনিয়তই নানান যন্ত্রণায় পুড়তে থাকার নিয়তি আমার কাছে অসহনীয় মনে হয়।