বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৭, ২০০৮

কয়েকটা দিন : বিচ্ছিন্ন সুরে ছন্দহীন গান

বদ্ধ ঘরের কাঁচের ওপারে বৃষ্টি
একটা বড় ঘরে বসে আছি, এক দঙ্গল প্রায় বিরক্তিকর মানুষের মাঝে। একেবারে সামনে একজন বক্তা। PON, GPON কীসব ভারী ভারী শব্দ বেরিয়ে আসছে বক্তার মুখ থেকে, যেগুলোর কোনটাই আমি ঠিকমতো বুঝি না। মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে। ল্যাবের সারাদিনের একটা সেমিনার ইভেন্ট, সকালে আর দুপুরের সেশনে চেয়ার এর কাজ করে বিকেলে ঘরের এক কোনায় বসে ওয়াই-ফাই এর বদৌলতে সচলায়তন উপভোগ করছি। ঘরের এক ধারে কাঁচের দেয়াল, তার ওপারে কালো আকাশ, ভেজা গাছ আর ছাতার নিচে চলন্ত মানুষ।

বদ্ধ ঘরে হালকা গরম। বাইরে ভেজা বৃষ্টি।
বাইরে বেরুতে ইচ্ছে করছে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা এই গুরুগম্ভীর ঘর ছেড়ে।
বাইরে নতুন বসন্তের বৃষ্টি যেন আমায় ডাকে। অনেক অনেকদিন পর ইচ্ছে করে, ছুঁয়ে যাই অপ্রিয় ঠান্ডা বর্ষণকে খালি গায়ে।

এপ্রিল: মনপাখি ওড়ে কোন আকাশে
এপ্রিল একটা বিচ্ছিরি মাস আমার জীবনে। মন বসাতে পারি না কিছুতেই। বছর ছয়েক আগের এপ্রিলে আমি দেশ ছেড়ে এসেছিলাম। আমার নিজের ব্লগে ২০০৫ আর ২০০৬ এ কোন পোস্ট নেই। অবশ্য ২০০৬ এ থাকবার কথাও নয়। এপ্রিল-মে তে বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে ছিলাম। সে গল্প আমি কোথাও বলি না যদিও।
এপ্রিল আর আমার মাঝে কেমন যেন অদ্ভুতুড়ে শত্রুতা আছে। আমি ব্যক্তিগত জীবনে হালকা হতাশাবাদী হলেও মোটামুটি পরিশ্রমী, কিন্তু এপ্রিলে আমি অসুস্থ পাখির মতো ঝিমুতে থাকি কোন কাজকর্ম ছাড়া।

আনিসুল হক এবং সামরিক শাসন
হঠা‍‌‌ত লেখক আনিসুল হককে পাওয়া গেল টোকিওতে। বাঙালিদের বৈশাখি আয়োজনে অতিথি হয়ে এসেছেন। দুর্ঘটনাচক্রে খুব ছোট পরিসরে তার সাথে এক টেবিলে ভাত খাওয়ার সুযোগ (ভদ্রলোকেরা "ডিনার" বলে বোধহয়) পেয়েছিলাম।
জিজ্ঞেস করলাম "প্রথম আলো" নামের আমার একসময়ের পছন্দের দৈনিকটির সামরিক সরকার পোষণের কারণ নিয়ে। আমার প্রশ্নটা খুব মানানসই বোধহয় হয়নি আয়োজন আর সময়ের সাথে। (আমি ইদানিং এরকম হয়ে যাচ্ছি, খুব কড়া প্রশ্ন করি সব মানুষকে)

তবে তিনি বিব্রত হন নি। মতিউর-আনাম চাইছেন, পরিবর্তন আসুক, তাই তারা সামরিক সরকারের সমর্থনের স্ট্যান্স থেকে সরে আসছেন না। তবে আনিসুল হক তাদের সাথে একমত নন। আর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আকবর আলী খানের রেফারেন্স দিয়ে দৃষ্টিপাতের বাংলা ব্লগে(সম্ভবত প্রথম আলো তেও প্রকাশিত) যেমনটা লিখেছেন তেমনটাই শোনা গেলো সরাসরি তার মুখে। বললেন, "অর্থনৈতিক সমস্যার কোনো পুলিশি সমাধান নেই"।

আমি ভাতের বদলে আলু খেতে চাই না
আমি ভাত খেতে চাই।
তাই আমি আশায় থাকি কবে বোরো ফলবে।
এএফপি খবর দিচ্ছে, বোরোর বাম্পার ফলন হচ্ছে এবার। আর সেই ভয়ে চাল মজুত করে রেখেছিলেন যে ব্যবসায়ীরা, তারা বাজারে ছেড়ে দিচ্ছেন চাল।
রিপোর্টটিতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে।

আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে বোরোর বাম্পার ফলনের এই সংবাদ "চুলায় পানি সিদ্ধ করতে দিয়ে বাচ্চাকে ভাত হচ্ছে ভাত হচ্ছে বলে মা য়ের ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করা" র মতো কোন ব্যাপার নয়।
আমি আশায় বুক বেঁধে বসে আছি, এই রিপোর্টটি সত্য।
আমি ভাত খেতে চাই, আলু নয়।

এপ্রিল ২০, ২০০৮
অনলাইন রাইটার্স কমিউনিটি সচলায়তনে প্রকাশিত

বুধবার, এপ্রিল ০৯, ২০০৮

অসুখের গল্প, হালকা স্বস্তি আর চানাচুর পাঠক

সুখের পাখি, মরা পাখি, তোকে খুঁজি না
জ্বর দুদিন ধরে, সারাদিন নাক দিয়ে পানি পড়ে টপটপ করে, টিস্যু নষ্ট করি সারাদিন। সেই সাথে আছে দুইএক মিনিট পরপর হাঁচি-কাশি।
অসুখে পড়ে থাকলে যে জীবনের প্রতিদিনকার রুটিন বদলে ফেলবো, তা নয় অবশ্য। ঠিকই সকালে উঠি, ল্যাবে যাই, খুব একটা কিছু কাজ করতে ইচ্ছে করে না অবশ্য। সন্ধ্যেয় বাড়িতে ফিরে আসি, হালকা রান্না করি, খাই।

আজ খুব ভাত খেতে ইচ্ছে করছিলো, তাই একেবারে ডাল রেঁধে বেগুন ভাজি করে গরম ডাল-ভাতে কনুই ডুবিয়ে পেট ভরে ভাত খেয়ে নিলাম। মাঝেমাঝেই এরকম হয়, দু-তিনদিন পর হঠা‌‌ৎ ভাত খাওয়ার ইচ্ছেটা খুব পোড়ায়, মনে হতে থাকে শরীরের কোথায় যেন ছোটখাটো একটা ভেতো বাঙালি লুকিয়ে থাকে, মাঝেমাঝেই সেটা চাষার মতো জেগে ওঠে।

শরীর খারাপ হলে আরেকটা বড় ঝামেলা হয় ঘুম নিয়ে। রাত করে ঘুমোনো অভ্যাস, তাই বেশি তাত্তাড়ি শুয়ে পড়লে ঘুম ভেঙে যায় বেশ কয়েকবার। মাঝরাতে উঠে পড়ি, টিভি ছেড়ে দিই। রান্নার ছুরি, ফ্রাইং প্যান, হাড়িপাতিল, হাইস্পেক এর ভ্যাকুয়াম ক্লীনার, মেয়েদের কাপড়চোপড় বেচার জন্যে রাত করে বসে থাকেন টেলিশপিং এর খালা আর চাচুরা। বিনোদন হিসেবে নিলে এইসব অনুষ্ঠানও অনেক সময় বেশ মজার বোধ হতে থাকে। লোহা কাটাকুটি করে টুকরো টুকরো বানিয়ে ভ্যাকুয়াম ক্লীনার দিয়ে গেলানোর পরে পণ্যের গুণ ব্যাখ্যা করে যাওয়া লোকটিকে দেখে মনে হয়, এই ভাঁড়টা হাসির অনুষ্ঠান করলে আরো ভালো আয় করতে পারতো সম্ভবত।

এমনি করে মাঝরাতে উঠে আজ নিজের গল্প লিখতে বসলাম অনেকদিন পর। বাইরে বৃষ্টি। সন্ধ্যে থেকে ঘুমিয়ে ক্লান্ত। ঘুমটা কাটানোর জন্যে কিছু একটা টিভি প্রোগ্রামে মন বসাতে চাইলাম। মাঝরাতে দেখানো আম্রিকান দ্য হিলস নামের টিভি সিরিয়ালটিতে কথায় কথায় চুমু খাওয়ার দৃশ্য বিরক্তিকর ঠেকে, তাই NHK তে জীবন্ত জীবাশ্ম মাছদের উপরে শিক্ষামূলক ডকুমেন্টরি দেখে মাথাটা পরিষ্কার করার চেষ্টা করি।

সুড়ঙ্গ শেষের আলো, হালকা স্বস্তি
চেরি ফুটে ঝরে গেছে গত দুদিনের ঝড়ো বৃষ্টিতে। ইন্দোনেশিয়ার আশপাশের প্রশান্ত মহাসাগরে লা-নিনা প্রপঞ্চের প্রভাবে নাকি এ বৃষ্টি, প্রবল বাতাস আর ঝড়। সন্ধ্যেতে এক আবহাওয়াবিদকে দেখলাম, বেশ উত্তেজিত স্বরে বর্ণনার চেষ্টা করছেন।

গত মাস তিনেক বেশ ভালো রকম মানসিক অস্বস্তির উপরে ছিলাম। পড়াশুনা শেষের এখনো বছর খানেক বাকি আছে যদিও, প্রথাগত কারণে গ্রাজুয়েটদের জন্যে নিয়োগের মৌসুম এই বসন্তেই পড়ে। তাই দৌড়ুচ্ছিলাম কর্পোরেটের দরজায় গলায় দড়ি বেঁধে অনেকদিন। শেষ পর্যন্ত ইউরোপভিত্তিক এক বিনিয়োগ ও কর্পোরেট ব্যাংকে দস্তখত করেছি আগামী বছর এপ্রিল থেকে দাসত্ব করবো বলে।

সচলায়তনে ভারী লেখা, হালকা পাঠক
সচলায়তনে হালকা লেখা লিখতে কি সবাই ভয় পান? ইদানিং বেশ ভারী ভারী লেখা আর সাহিত্য বেশি চোখে পড়ে। আমার মতো হালকা পাঠকেরা খুব কষ্টে পড়ে যায়। মাথার আয়তন আমার খুব ছোট, তিনটে গল্প পড়লে একটা মিলার গান শুনতে ইচ্ছা করে। তাই আরেকটা উইন্ডোতে ইউটিউবে মিলা কে খুলে রাখি। সচলায়তন পড়তে পড়তে মিলার গান শুনি।
(আমি নিজেই অনেকদিন অনিয়মিত ছিলাম। তাই মায়ের কাছে মামাবাড়ির গল্প হয়ে গেলে ক্ষমা প্রার্থনা করি।)
হালকা চানাচুর ধরনের লেখা সচলায়তনে পোস্টের ব্যাপারে কোন বিধিনিষেধ আছে বলে আমার মনে পড়ছে না।
কাজেই, যারা ভালো চানাচুর-মুড়ি মাখাতে পারেন, তারা আমাদের বঞ্চিত করবেন না আশা করি।


--
NHK জাপানের রাষ্ট্রীয় প্রচার সংস্থা
দ্য হিলস, The Hills MTVর রিয়ালিটি টিভি সিরিজ
এই পোস্ট অনলাইন রাইটার্স কম্যুনিটি সচলায়তনে প্রকাশিত