শুক্রবার, মার্চ ২১, ২০০৮

অচেনা গান, চেনা শব্দ, টুকরো নীল কষ্ট

*স্মৃতিপোকাদের সাথে বসবাস*
অনেকদিন লিখিনা। লিখতে ইচ্ছে করেনা।
মাঝেমাঝে এইরকম বন্ধ্যা সময় আসে।
মাঝেমাঝে এইরকম অনুভূতিহীনতায় আক্রান্ত হই। আমার অনুভূতিরা চুরি হয়ে যায়, আমার মস্তিষ্ক কুরে কুরে খেয়ে ফেলে অনর্থক অহেতুক সব বাস্তবতা এবং ক্লান্তি। অবিন্যস্ততা যার জীবনের অংশ, তার মস্তিষ্কে বার্ধক্যের সংকেত দিয়ে যায় শরীর অথবা মন। উপেক্ষা করবার মতোন সাহস জোটে না। এই অদ্ভূত সময়ে ছেলেবেলার স্মৃতিপোকারা এসে আমার সাথে লুকোচুরি খেলতে বসে।

পুরো ছেলেবেলা ভেবে গেছি, আরেকটু বড় হয়ে নিই, ফেলে আসা শৈশবের করতোয়া নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আবার হিমালয় দেখবো একদিন। তারপর বড় হয়ে গেছি, দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে, আর হাড়ে-চর্বিতে, শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে চর্বির ভাগটাই বেশি হয়তো। ফেরা হয়ে ওঠেনি, শৈশবে চিনিকলের গাড়ির পেছন থেকে আখ চুরি করে খাওয়ার স্মৃতিমাখানো সেই মফস্বলে।
এইরকম সময়গুলোতে আমার রুপমের কথা মনে পড়ে যায় ভীষণ। অথবা সূচী। কিন্তু আজ রুপমের মুখটা মনে করতে পারছি না। আর সূচীরটা, করতে চাইছি না। ঘুমোতে থাকা কষ্টকে খুঁড়ে জাগাবার চেষ্টা করতে চাইবে কে?

রুপম আর আমি খুব ভালো বন্ধু ছিলাম। আমার দুষ্টুমির জন্যে আমাকে নীলডাউন করিয়ে রাখা হলে, কিছু একটা দুষ্টুমি করে ও আমার সাথে দাড়িয়ে পড়তো। শাস্তির কাতারে। আমি নির্লজ্জ্বের মতোন ওই স্কুলটা ছেড়ে চলে এসেছিলাম, অন্য একটা ভালো স্কুলে পড়ার জন্যে। রুপমকে কিছুই জানাইনি। আমাদের দেখা হয়েছিলো অনেক বছর পরে, রুপম ওর ছোট বোনকে আমাদের কোচিং সেন্টারে ভর্তি করাতে এসেছিলো। সেই শেষ।
আজ অনেকদিন পর রুপমের সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করছে? কেমন আছিস রে?

অনেক অনেক দিন পর, আজ এক পুরনো বন্ধুর মেইল পেলাম, আতাউর। স্কুলের হোস্টেলে ওর রুমে গিয়ে আমি পড়ে থাকতাম বহুদিন। স্কুল ছাড়বার পর আমাদের আর কখনো দেখা হয় নি।
পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে। অথবা আমাদেরই হেঁটে চলা পরিমন্ডলের পরিধি বাড়ছে।

*অচেনা মানুষের ভালোবাসা*
কাল সকালে আমার বাসার তিনতলা থেকে নেমে পোস্টে একটা উঁকি মেরে দেখি, একটা পার্সেল এসেছে।
ঢাকা থেকে। বাংলাদেশ থেকে। আধা যুগ হয়ে গেলো, দেশ ছেড়েছি। দেশ থেকে চিঠি, পার্সেল এইসব এখন বছরে একবারও ঘটে না এরকম বিরল ব্যাপার হয়ে গেছে আমার জীবনে।

খুলে দেখি, আমার প্রিয় দুজন লেখকের দুটো বই। এবারের বইমেলায় বের হওয়া।
নজমুল আলবাব এর "বউ বাটা বলসাবান" আর আরিফ জেবতিক এর "তাকে ডেকেছিল ধূলিমাখা চাঁদ"
দুটোই একেবারে লেখকদের অটোগ্রাফসহ। আলবাব ভাই লিখেছেন, প্রিয় মানুষ সৌরভ কে।
এই মানুষটা আর প্রিয় বলবার মতোন লোক পেলোনা।

রায়হান ভাই পাঠিয়েছেন বইদুটো। এই মানুষটাকে আমি কখনো দেখিনি, ভার্চুয়াল পরিচয়। খুব ভালো লাগলো। খুব। শুধু বলি, থ্যাংকস। এইসব ভালোবাসা, এইসব টুকরো অনুভূতি, আমাকে ঋণী করে দেয়।

*ঘরে ফেরার তাড়া*
ঘরে ফেরার গান এখন আর কাঁদায় না। যার ঘর নেই, তার ঘরে ফেরার তাড়া নেই - উপলব্ধিটা খুব দারুণ মনে হয় মাঝেমাঝে। মানুষের সাথে অদৃশ্য সূতোয় যেসব বন্ধন, সেগুলো মাঝেমাঝে ভীষণ ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। আপনি হয়তো বলে বসতে পারেন, অচেনা মানুষের ভালোবাসাও যাকে ঋণী করে, সে কীভাবে ঘরে ফেরার তাড়া এড়িয়ে চলে।
উত্তরটা আমিও খুঁজছি।


[প্রিয় পাঠক, যিনি কষ্ট করে এইসব নীল লেখা পড়ছেন, আপাতত ঘরে বসে না থেকে বাইরে একটা চক্কর দিয়ে আসুন, এই অন্ধকার মানুষটির অন্য সব নীল লেখার মতো এটিও ভুলে যান, এই প্রত্যাশা করি]