শুক্রবার, জানুয়ারী ২৫, ২০০৮

শুকনো ঠান্ডা দিনের আরেকটি বিক্ষিপ্ত কড়চা

১.
কাল রাত ২টা পার করে, আমার সাথে ল্যাবে থাকা সহপাঠীটির সাথে যখন বাড়ি ফেরার জন্যে পা বাড়াই, খেয়াল করি, হাত-পা জমে যাচ্ছে আর অবিন্যস্ত চুলগুলো উড়ে যাচ্ছে বাতাসে। শূন্য বা মাইনাস দুই-তিন হয়তো তাপমাত্রা হিসেবে সারা শীত বরফ জমে থাকা কোন জায়গার জন্যে আহামরি গোছের ব্যাপার নয়, কিন্তু, টোকিওর মতো গরম-ঠান্ডা মিলিয়ে মোটামুটি মাঝারি জলবায়ুর শহরের জন্যে খুব ভয়াবহ ঠান্ডা সেটা। সাথে যোগ হয়েছে গায়ে কেটে বসে যাওয়া আর্দ্রতাহীন বাতাস।

জীবনের চারভাগের একভাগ পার করে ফেলা এই শহরের আবহাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে পড়া নিজের কাছেও ভয়ানক শীত বোধ হতে থাকে। সাথে থাকা সহপাঠীটি হঠাৎ আবিষ্কার করে, সকালের দিকে হয়ে যাওয়া বৃষ্টি তে রাস্তায় জমে থাকা পানি শক্ত বরফ হয়ে গেছে। দুজনেই কেন যেনো ব্যাপারটি আবিষ্কার করে হোহো করে হেসে উঠি। সারাদিনে জমে থাকা ক্লান্তিটুকু অল্প হলেও মুছে যায়।

২.
ইদানিংকালে লেখা হয়না কোথাও। এমন কিছু ব্যস্ত নই যে, লেখার জন্যে সময় হয় না। তবে কেনো? - উত্তরটা দেবো। আসলে মানসিক জটিলতার খুব অদ্ভূত মিশ্র এক অনুভূতিতে আক্রান্ত এই সময়ে, কিছু লিখতে গেলে সেইটে খুব বড় হয়ে দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা। খুব চেষ্টা করি নিজের অনুভূতিটুকুর সবটুকুই তুলে আনি, নিজের যেমন ইচ্ছে লেখার এই ব্লগখাতায়।
কিন্তু, সেটা কি আর সম্ভব? অথবা উচিত?

কেন বেঁচে আছি
- সেই প্রশ্নের সাথে নিজের বোঝাপড়ার যুদ্ধ নিয়ে যে জীবন, সে জীবনের অন্ধকারময় গল্প লিখে আপনি, সম্মানিত পাঠকের সময় নষ্ট করতে চাই না।
আর আমি গল্প লিখতে পারিনা, কিংবা যুক্তি আর নতুন দর্শনে পূর্ণ কোন ভাবনাকে ছবিতে প্রকাশ করা আমার হয়ে ওঠেনা।

সেইসব মিলিয়েই ইদানিংকালে অনিয়মিত ব্লগ লেখায়। তবে আর কিছু করতে না পারি, অন্য সচলদের লেখা পড়ায় আছি।

৩.
আজকাল ফোন করা যায় এরকম বন্ধুর সংখ্যা কমে গেছে। কিংবা অন্যভাবে বললে আমিই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি সবকিছুর থেকে। আগে সবাইকে ফোন করতাম। এখন কথা ফুরিয়ে গেছে। এখন বন্ধুরা সংসারী, তাদের মাথায় বাজারের দামের চিন্তাটা খুব বড়ো। তাই কথা এগোয়না।
পৌনপুনিক জীবনে কাছাকাছি প্রিয়জনের সংখ্যা কমছে। দিনদিন শেকড়গুলো আলগা হয়ে যাচ্ছে অথবা যাচ্ছে ছিঁড়ে। নিজের এই ছন্নছাড়া জীবনে আধুনিক অসহ্য একাকিত্বের দহন হাসিমুখে গ্রহণ করার সামর্থ্য বাড়ছে বোধহয়। ভালোইতো!

৪.
বিশ্ব অর্থনীতি বেশ লেজেগোবড়ে। অর্থনীতি নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো বুঝবুদ্ধি বা অবস্থা কোনকালেই ছিলোনা। কিন্তু যখন নিউজে শিরোনাম হয়, টোকিও র শেয়ারবাজার নিক্কেই একদিনেই ৫০০ পয়েন্ট পড়ে গেছে, তখন একটু খবর নেড়েচেড়ে দেখতেই তো হয়। জাপানের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ বলতে হবে।
কারণ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে জাপান এখন পরিত্যক্ত এক বাজার, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মন্দায়, এমনিতেই ধুঁকে চলা রপ্তানিনির্ভর জাপানের আগামি সময়গুলো কেমন হবে - সে প্রশ্নে কেউই আশাব্যঞ্জক উত্তর দিতে পারছেন না।

এই ব্যাপারটা বেশ মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে ইদানিং। অন্তত আমার কাছে এই সময়ে, যখন পড়াশোনা শেষ করার আগে একটা চাকুরি খুঁজে বের করায় সময় দিতে হচ্ছে অনেক।

আর গ্যাসোলিনের দাম বাড়া কিংবা সেইসব ঘটনাচক্রের প্রভাব বেশ প্রকাশ্যই দেখা যাচ্ছে এখনই। বিদ্যুত ও গ্যাসের সর্বনিম্ন চার্জ ১৫০ ইয়েনের (প্রায় ১.৫ ডলারের সমতুল্য) মতো বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সেবাপ্রদানকারী সংস্থাগুলো। সর্বনিম্ন চার্জ ২৫০০ ইয়েনের কাছে ১৫০ ইয়েন হয়তোবা খুব বেশি কিছু নয়, তবুও মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারটা অর্থবহ। বাজারে, পানীয় দুধের দামও বেড়েছে কিছুটা। আর যেসব জিনিষের দাম ওঠানামা করে, সেগুলো তো বাড়ার দিকেই আছে।
মন্দা অর্থনীতিতে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে গেলে সেটা অবশ্যই খারাপ লক্ষণ।

৫.
অর্থনীতি যেদিকে যায়, যাক। নিজে খেয়েপরে বেঁচে থাকলেই হলো।
জীবন চলুক কোনওভাবে।
কেন বেঁচে আছি - নিজের মাঝে অমীমাংসিত এই প্রশ্নকে আপাতত অনেক কষ্টে হলেও চাপা দিয়ে রাখা যাক। শুকনো ঠান্ডা দিনগুলো যাক, বসন্ত আসুক - তারপর নাহয় সেই প্রশ্নের বোঝাপড়াটা করা যাবে।
--
সচলায়তনে প্রকাশ

কোন মন্তব্য নেই: