শুক্রবার, জানুয়ারী ১১, ২০০৮

আরিগাতো!

আরেকটা বছর বুড়িয়ে গেলাম। আগে কখনো মনে রাখিনি, কখনো আমাদের বাসায় কেউ কারও টা মনেও রাখতো না, কাজেই কোনদিনই এইসব বাহুল্য খেয়াল করা হয়নি।

ইদানিং মনে থাকে।
ফেসবুকে ঢুকতেই জানান দেয়, ফেসবুক টিমের পক্ষ থেকে হ্যাপি বার্থডে, সুন্দর একটা দিন কাটুক তোমার।
কিংবা, অরূপ-মামু জুটির বানানো কলকব্জা অনুযায়ী সচলায়তনের এক কোনায় কার কবে জন্মদিন - জানান দিতে থাকে। সেইখানে অন্যদের নাম দেখতে বড় ভালো লাগে, শুধু নিজেরটাতেই আপত্তি। কেমন যেনো লজ্জ্বা পায়। উহু, লজ্জ্বা নাহ, এই ব্যাপারটাই বোধহয় বিব্রতবোধ। আমাদের দেশে বিচারপতিরা যেমনটা হয়ে থাকেন খুব অল্পতেই।

কিন্তু, সুহৃদ আনোয়ার সাদাত শিমুল তাঁর প্রচন্ড ব্যস্ততার মাঝেও দিনটা মনে রেখে একটা সেইরম পোস্টও ছেড়েছেন। সেইরম মানে একেবারে সেইরম - অন্তুত আমার জন্যে। বিবর্ণ আকাশে উনি রূপবতী মেঘের ঘনঘটা শুনতে পেয়েছেন!

আহহা, আমি একটা তুচ্ছ মানুষ, তার আবার জন্মদিন!
আমার জন্মদিন মনে রাখলে, আপনার বাড়িতে ছাদের কার্ণিশে বসা কাক টারও জন্মদিনের হিসেব রাখতে হবে, শিমুল।
তাই পোস্ট পড়ার পর মনে মনে একটা কমেন্ট করলাম, হুমম।

আরিগাতো, শিমুল। আরিগাতো। আপনার পোস্টটা যে, যেকোন ৯ই জানুয়ারিতে আমার পাওয়া সবচেয়ে বড় উপহার।

ফেসবুকে ও মেইলে শুভেচ্ছা জানানো রাবাব, তোমার পাঠানো গানগুলো এখনো শুনছি। কার্পেন্টারস ভাই-বোন এর গানে ডুবে আছি কয়েকদিন। আরিগাতো।

সংসারে এক সন্ন্যাসী আমার বিষন্নতার প্যাটেন্টের সিংহভাগ হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন জন্মদিনের শুভেচ্ছায়। প্রতিবাদ জানাতে চাই। সংসারে থেকেও কেউ যে সন্ন্যাসী হতে পারে, আদিরস নিয়েও যে মহাকাব্য রচিত হতে পারে, এই সুভদ্রলোক(!)টি কে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। আমার নতুন বছরের রিজোল্যুশনে থাকবে, আমি কোন একদিন এই ভদ্রলোকটির মতোন একটা কোবতে লিখবো। আরিগাতো, সন্ন্যাসী দাদা।

প্রিয়দর্শিনী নিঘাত তিথি অভিযোগ জানিয়েছেন যে, সৌরভকে কোন বিশেষ দিনে শুভকামনা জানানোটা খানিকটা বিব্রতকর, সে অভদ্রের মত তাতে কোন উত্তর দেয় না। তথাস্তু। মাথা পেতে নিলুম। আসলেই ঘটনা তো তাই, ঈদের শুভেচ্ছার জবাব দিইনি, কিংবা নতুন বছরের। নতুন বছরের রিজোল্যুশনে এটাও তাহলে রাখা যাক, কী বলো, তিথি? লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যাওয়া সূচিত্রার পাগল ভক্ত সৌরভ লোকচক্ষুর সামনে থেকেই আরো সামাজিক হওয়ার চেষ্টা করবে। আরিগাতো, তিথি।

প্রথম কমেন্টকারী হিসেবে, দ্রোহী ভাইকে আরিগাতো এবং সৌরভের মফস্বলে ঘুরে যাবার দাওয়াত।
ধূসর গোধুলি নামের হালকা-পাতলা যে জার্মানপ্রবাসী তরুণটিকে লোকজনের সাথে সবসময় সিস্টারইনল বিষয়ক আলাপে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়, উনি কোথাকার কোন সিবা-গেইগি কিং কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, বুঝলাম না! সে যাকগে। ডাংকে।

DHL এ আমার জন্যে শুকনো কাঁথা পাঠানো হিমু ভাই, চিজকেক পাঠানো আড্ডাবাজ, আরিগাতো।
হাসান মোরশেদ বড় ভাই নতুন বছরে সৌরভের নিয়মিত হবার প্রত্যাশা করেছেন। আরিগাতো, বিগ বস।

যার লেখা পড়লে মাথাটা নিজের থেকে ভাবতে শুরু করে শ্রদ্ধেয় শোমচৌ, গ্লোবাল ভয়েসের বাংলা কণ্ঠ রেজওয়ান, আলবাব নজমুল ওরফে রং নাম্বার বাউল নামের যে লোকটা মাঝে মাঝে সৌরভকে কোমল ঝাড়ি দেয় হালকা-পাতলা, মোটাসোটা আরিফ জেবতিক, যার কথা ভাবলে কবিতা লিখতে ভয় লাগে সেই শেখ জলিল, যার কবিতা পড়ে আমার মাথা চুলকায় সেই বদ্দা সুমন চৌধুরি, মানুষের খোমা নিয়ে খেলাধূলা করেন যিনি সেই সুজন দা, আমার অর্থনীতির শিক্ষক সুবিনয় মুস্তফী, ক্ষেপাটে বুড়ো কনফুসিয়াস, অনুভূতি নিয়ে ছন্দ সাজানো ঝরাপাতা - সব্বাইকে আরিগাতো।

এতো সব বুড়ো মানুষের মাঝে একটা ক্লাস টেন পড়ুয়া পিচ্চি(!)ও শুভেচ্ছা জানিয়েছে। ছোট্ট আপু দৃশা, আরিগাতো।
শ্রদ্ধেয় ইশতিয়াক রউফ, ফারুক হাসান, স্নিগ্ধা, রানা মেহের, ধ্রুব হাসান, কিংকর্তব্যবিমূঢ়, টুটুল, সুলতানা শিমুল, দিগন্ত, স্নেহাস্পদ সবজান্তা, পুরোনো বন্ধু মরহুম(!) আজকাল, সব্বাইকে অনুভূতিশূন্যকেউএকজনের অন্তর থেকে লবণ লবণ ভালোবাসামাখা আরিগাতো।

সবাইকে বিবর্ণ সৌরভের পক্ষ থেকে অসংখ্য আরিগাতো। কষ্ট করে ফেসবুক বা অর্কুট শুভেচ্ছা, মোবাইল মেসেজ, ইমেইল বা ফোন করে শুভেচ্ছা জানানো অন্য ভালোবাসার মানুষগুলো, যাদের নামোল্লেখ করতে অনুমতি নিতে হবে, তাদের জন্যে এক শব্দ। আরিগাতো।

সবশেষে, কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই আমাকে। হুমম, নিজেকে।
সুমন বদ্দা কাল একটা পোস্টে চার্লি চ্যাপলিনের সেই বিখ্যাত মুভিটা তুলে দিয়েছেন য়্যুটিউব থেকে, মডার্ন টাইমস, গ্রেট ডিপ্রেশন বলে পরিচিত চরম অর্থনৈতিক মন্দা পরবর্তী সময়ের গল্পের চ্যাপলিনীয় রূপায়ন। পুরোটা দেখলাম আর হাসতে হাসতে ভাবলাম, কতো বছর কেটে গেছে, অবস্থা তো পাল্টায়নি। দিব্যি এইসময়ের কোন এক চাবিকল দেয়া স্যালারি-ম্যানকে বসিয়ে দেয়া যায় ওই চরিত্রটায়।

মুখোশ পড়া এই জীবনে আয়নায় মুখোশের ওপারের নিজেকে শুনিয়ে বড় করে বলতে ইচ্ছে করছে, আরিগাতো। বিবর্ণ এই জীবনে একগল্প সীমাবদ্ধতা নিয়ে এতোটা পথ পেরিয়ে আসতে পারার জন্যে। আরিগাতো, অনুভূতিশূন্য কেউ একজন।

২টি মন্তব্য:

নামহীন বলেছেন...

দেরীতে চোখে পড়ল। সময় "বিলেটেড" এর চেয়েও অনেক বেশী পার হয়ে গেছে।

"অনুভূতিশূন্য কেউ একজনের" লেখা পড়লে খুব বেশী অনুভূতি চেপে ধরে। শিমুল ভুল লিখেননি।

রায়হান আবীর বলেছেন...

এতো সুন্দর লিখেন কিভাবে আপনি?