বুধবার, ডিসেম্বর ৩১, ২০০৮

প্রিয় শহর, আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম


তারপর আমি এই শহরে আবার ফিরে আসি। অনেক দূর পথ পেরিয়ে। ততোদিনে আমি ক্লান্ত। আমার শহর প্রবীণ মহাকায় বৃদ্ধ। আমাকে আলিঙ্গনের জন্যে কোন বাহুল্য করার মতোন সুযোগ তার নেই। আমার শেকড় অবশিষ্ট নেই খুব বেশি। অলস সন্ধ্যেতে আমি এই শহরে ঠাণ্ডা পায়ে হেঁটে যাই, পরিচিত মুখ খুঁজি। ভাবি, হৃদ্যতার বোধে কেউ হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলবে, আরে তুই..।

অনুভব করি, আমার স্মৃতিবইয়ের পৃষ্ঠা গুলোতে ততোদিনে অনেক জায়গায় অস্পষ্টতার রেশ বড্ড তীব্র। আমার মনে পড়ে যায়, এই শহরে আমি প্রথম সাইকেলে চড়তে শিখেছিলাম, বন্ধুর সাইকেলের ক্যারিয়ার থেকে মুখ থুবড়ে পড়েছিলাম শহরের মোড়ে। এন্টিবায়োটিক গিলতাম অনেকদিন। নির্বিকার ধূলোমাখা বাতাস আমাকে মনে করিয়ে দেয়, এই শহরে আমি জীবনে একবারের জন্যে সিগ্রেট মুখে দিয়ে ভেবেছিলাম, ধুরো এই জিনিষ খায় নাকি মানুষে। প্রথম প্রেমপত্র পেয়েছিলাম কারও কাছে। লিখেছিলামও দুয়েকটা।

আমি হেঁটে চলি। এইসব স্মৃতির রেশ ধরে ডিসেম্বরের কুয়াশা-ভরা অন্ধকারে শহরের মূল সড়কগুলোর সোডিয়াম লাইট আমাকে যেন বিদ্রুপ করে। নির্বাচনের হৈচৈ এ দোকানপাট বন্ধ থাকা সড়কের সড়কবাতিগুলোকে বড্ড বেমানান মনে হয়। আমি ভুলে যাই, আমার বন্ধুদের কেউ একজন রওনক হয়তো নব্য টেলেকম বেনিয়াদের সুইচরুমে রাত কাটায় অথবা চিকিৎসাবিদ্যার পড়াশুনা শেষ করে কী করবে ভেবে পায় না অজয় হয়তো রাজধানীর কোন হাসপাতাল-ক্লিনিকে ক্ষ্যাপ দেয় টানা ৪৮ ঘন্টা। আমি ভাবি, আমি তো বড্ড ভালো আছি। হোক না, রাত বারোটায় বাড়ি ফিরি। ফিরে গরম জলের স্নান নিয়ে গরম ঘরে নিরাপদ ঘুমে নিমগ্ন তো হতে পারি।

অথবা আনুষ্ঠানিক বিয়ের জন্যে প্রেমিকার মায়ের কাছে কয়েকটা মাস সময় চেয়ে নেয়া বন্ধুটি, যার কোন চাকুরি নেই, নেই কোন অবলম্বন, তার সময় ফুরিয়ে যাবার গল্প শুনে আমি তাকে সান্ত্বনা দিতে পারি না। আমি তার পাশে বসে থাকি অনেকক্ষণ। যে মেয়েটি একসময়ে আমাকে কথা দিয়েছিলো সে আমার সাথে থাকবে, অথচ আমি তাকে ধরে রাখতে পারি নি নিজের ব্যর্থতায়, তার কাছে শুনি, সেও রোজ দৌড়োয়। রাজধানীতে নতুন স্বপ্নের পেছনে সেও ছুটে যায়।

সেই একই সময়ে আমি কোন অকারণে নিজের শহরে নিঃসঙ্গ হাঁটতে থাকি। আমি বড্ড-চেনা পথে হেঁটে গিয়ে ম্যাচ বাক্সের মতোন শাদা দালান দেখি, শহরের পুকুরগুলো ভরাট করে তৈরি করা ঘিঞ্জি মানববসতি দেখি। নক্ষত্রহীন আকাশ দেখি। আবিষ্কার করি, এ আসলে আমারই ভালোবেসে ফেলা আকাশ। আমি নিজেই বদলে গেছি।

তাই বড্ড অচেনা মনে হয় এই নগর, এই আকাশ, এই জীবন। নগরের নিস্তব্ধতা ও উপেক্ষা আমাকে তীরবিদ্ধ করে যায়।
আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, প্রিয় জীবন, প্রিয় শহর, আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম।

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০০৮

বিজয় এসেছে, কিন্তু যাদের জীবনে পলাশ ফোটে নি, ফোটে নি শিমুল

গত কয়েকদিন আগে বাংলা ব্লগের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম বাঁধ ভাঙার আওয়াজ এর কর্ণধারেরা একটা অদ্ভূত পোস্ট দিয়ে বেশ খানিকটা হৈচৈ এর তৈরি করালেন। ১৬ই ডিসেম্বরে ওনারা ব্লগদিবস পালন করবেন, চা খাবেন, কিন্তু বিজয়ের নাম নিয়ে। ওনাদের কথা শুনে মনে হলো, বিজয়ের চেয়ে সামহোয়্যারের জন্ম বড়। তারা খুব খোঁড়া যুক্তি দেখালেন, বিজয়ের দিন যেহেতু আনন্দের দিন, কাজেই আমরা ওইদিন নাচবো, গাইবো, পান করবো। তাতে সমস্যা কোনখানে?

আমি একটা বই বারবার পড়ি। জাহানারা ইমাম এর "একাত্তুরের দিনগুলি"। ১৬ই ডিসেম্বরে বিজয় এসেছে, কিন্তু ফেরে নি যুদ্ধে যাওয়া বড় ছেলে রুমি, ফেরে নি রুমির বন্ধুদের অনেকেই। মায়ের এক ফোঁটা করে অশ্রু জমিয়ে রাখা সেই ডায়রি আমি বারবার পড়ি। আর বিষাদবোধে আক্রান্ত হই।
১৬ই ডিসেম্বর আমাদের এই প্রজন্মের অনেকে হয়তো কেবল অন্য সব দিবসের মতোই আরেকটা লৌকিকতা বলে মনে করে। তারা ভুলে গেছে, এই দিনে বিজয় এসেছে, কিন্তু বাংলাদেশের কতো পরিবারে এইসব দিন বেদনা ছাড়া আর কিছু মনে করিয়ে দেয় না।

কারও কথা না শুনে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে চলে সীমান্তের ওপাড়ে চলে যাওয়া ডানপিটে ছেলেটির জন্যে বসে ছিলো যে মা, তার অপেক্ষার প্রহর আজো ফুরোয় নি। হয়তো এইদিন আসলেই স্বামীর জন্যে আজো অপেক্ষায় থাকা নববধূটি আজো মনে করে, যুদ্ধ তো শেষ হলো, এই বুঝি দরজায় কড়া নাড়বে কেউ। স্বামীর মরে যাওয়ার দিনটি ভালোমতোন জানা নেই, তাই এখনো হয়তো এই দিনটি আসলে, সামান্য স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে কোরান তেলাওয়াত করে যায় কোন বিধবা। সাঁইত্রিশ বছর যে কাজ তিনি করে গেছেন নিয়ম না ভেঙে।
হয়তো সিথির সিঁদুর মুছে ফেলেছে কতো বঁধূ এই দিনে।
এই দিনটি আসার আগেই সীমান্তের ওপাড়ে শরণার্থী শিবিরে প্রাণ হারিয়েছে যে বৃদ্ধ, তার বংশধরদের কাছে হয়তো আজকের দিনটি কান্না ছাড়া আর কিছু বয়ে আনে না।


বাবার স্মৃতি ভালো করে মনে নেই সেই শিশু যার একাত্তুরে জন্ম তার বয়স আজ সাঁইত্রিশ। এই দিন আসলে সে কেনো অন্যমনা হয়ে যায়? তার দুঃখকে আমরা কি স্পর্শ করতে পেরেছি?

তাহলে, আমরা কেনো বিজয় দিবস আসলে বলবো - আমরা আজ নাচবো, আমরা আজ গাইবো? আমাদের কণ্ঠে কেনো আজ অনুরণন উঠবে- পলাশ ফুটেছে, শিমুল ফুটেছে আজ?
আমাদের সেই অধিকার আছে কি?

বিজয় এসেছে, কিন্তু যাদের জীবনে আজো সাইত্রিশ বছর পরেও পলাশ ফোটে নি, কৃষ্ঞচূড়াও নয়, তাদের সেই দুঃখকে বোঝার মতোন সাধ্য আমার, আমাদের নেই। তাই যারা বলে, বিজয়ের এই দিনে আমরা নাচবো, গাইবো গান - তাদের সাথে আমি কখনোই সহমত হতে পারি না। আমি বেদনাহত হয়ে এই বিদেশ বিভুঁইয়েও আমার ঘরে থাকা লাল-সবুজ পতাকার মাঝখানে রক্ত দিয়ে তৈরি বৃত্তের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকি।



-
এই পোস্টটি কম্যুনিটি ব্লগ বাঁধ ভাঙার আওয়াজ এর জন্যে লেখা
ছবি কৃতজ্ঞতা - froderik ক্রিয়েটিভ কমন্স এর আওতায় ব্যবহৃত

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ০৯, ২০০৮

যে দিন চলে যায়

ভালো আছি?
পাতা ঝরে গেছে সব। স্কুলের রাস্তাগুলো ঝরা পাতায় জমাট হয়ে থাকে। ঠান্ডা বাতাস বয়ে যায়, মাঝেমাঝে বৃষ্টিও। ঠান্ডা বৃষ্টি নেমে আসে রাত ভর। ব্যস্ত একেকটা দিনশেষে প্রায় মাঝরাতে যখন ১২ বর্গমিটারের ছোট্ট আবাসে ফিরে আসার জন্যে সাইকেলে প্যাডেল ঘুরাই, তখন সকালে কীভাবে দিনটা শুরু করেছিলাম, সেটা আর মনে থাকে না। মনে করার মতোন শক্তি পাই না আসলে। বাসায় ফিরে আর একটা দৌড় দিয়ে আসার মতো পর্যাপ্ত সময় পাই না। যেদিন সময় পাই, সেদিন দেখা যায় বৃষ্টিতে আর দৌড়ুতে বেরুতে পারি না।

গত মাসে একটা সিম্পোজিয়াম এর জন্যে প্রসিডিংস পেপার লিখতে হচ্ছিলো, লিখি আর চুল ছিড়ি। চুল কে অবশ্য নিরুপায় হয়ে এমনিতেই বিদায় জানাতে হয় এইরকম স্ট্রেস এর সময়গুলোতে। তাছাড়াও আরো অনেক ঝামেলার সাথে জড়িয়ে পড়ায় ইদানিং, অনেকগুলো কাজ একই দিনে পড়ে যায়, ঠিকঠাক সব করে উঠতে পারি না। সময় বন্টন ঠিকমতো করতে পারি না। সেইসব মিলিয়ে একরকম দৌড়ের উপরে থাকি সবসময়। গত সেমিস্টারে একটা কোর্স নিয়েছিলাম, ফেল করেছি। পঁচা ছাত্র হয়ে গেছি। এখনো ২ ক্রেডিট দরকার। তাই ক্লাসও নিতে হয় দুই-তিনটা।
ভালো না, এইসব ভালো না।

রিসার্চ এর অবস্থা তথৈবচ। ইন্টারনেট ভিত্তিক স্ট্রিমিং প্রোটোকল নিয়ে আমার নাড়াচাড়া করা। সেইখানে অনেক থিওরিজাতীয় বিশ্লেষণ, অনেক সিম্যুলেশন করে সবশেষে সিদ্ধান্তগুলোকে সন্নিবেশ করার পর চূড়ান্ত প্রস্তাবনার জায়গায় এসে আটকে গেছি। মাথা যে আসলে গোময়ে ভর্তি - নতুন করে নতুন ভঙ্গিতে উপলব্ধি করতে থাকি সবসময়।

অবশ্য ভালো না থাকার কাছে এইসব খুব খুব গৌণ। নিরুপায় পুড়ে যাবার গল্প মনে পড়ে সবসময়। সেই গল্পগুলোকে চাপা দিতে চাই। এইখানেও লিখতে ইচ্ছে করে না। কী হবে লিখে?

ধর্ম, বৈষয়িক বাস্তবতা
কয়েক দিন দাড়ি কাটি না। জঙ্গল হয়ে গেছে মুখটা। সপ্তাহ দুয়েক আগ পর্যন্ত ইন্টার্নের জন্যে সেজেগুজে অফিসে যেতে হতো, তাই এইসবের উপায় ছিলো না। এখন ইচ্ছেমতো সাজি, ইচ্ছেমতোন থাকি। চার-পাঁচ দিন দাড়ি পরিষ্কার না করলে বেশ একটা দ্বীনী ভাব চলে আসে। ভয়ে ভয়ে থাকি স্কুলে ইন্দোনেশিয়ান ভাই-বেরাদরেরা আবার দাওয়াত দেবার জন্যে জোর-জবরদস্তি না করেন। ওনারা এই বিদেশ-বিভুঁইয়েও ইসলামের প্রতি ভালোবাসা বজায় রাখার জন্যে সচেষ্ট কি না।

কালকে বোধহয় ঈদ ছিলো। ঈদ-উল-আযহা। লাখে লাখে পশুকে জবাই করে ইসলাম যে কী শিক্ষা দিতে বলেছে - মুহম্মদই ভালো বলতে পারতেন। মাঝখান থেকে, পশু কিনে জবাই করে মাংস বিলি করার স্ট্যাটাস রক্ষার জন্যে পকেট নিয়ে টানাটানির মধ্যবিত্ত পড়ে গেছে শাঁখের করাতে।
আমি মনে করি, এই কোরবানির ব্যাপারটা বাংলাদেশে অনেক পরিবারের হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে, তারপরেও বাধ্য হয়ে অগত্যা পালন করে। পাড়া-পড়শী কী বলবে, আত্মীয়স্বজন কী বলবে - এইসব ভেবেই কোরবানি দেয় বহু মানুষ। এইসব ভেবে হতাশা ছাড়া কিছু অনুভব করি না।

দেশে যাবো?

হাতে টাকা ছিলো খরচ করার মতোন। তাই দেশে যাওয়ার জন্যে টিকেট বুক করেছি ক্রিসমাসের মৌসুমে। যাবো কি না এখনো জানি না। ইচ্ছে অনুভব করছি না খু্ব একটা।
জাপানে সবচেয়ে বড় উৎসব - নববর্ষ। পুরনো বছরের শেষে আর নতুন বছরের প্রথমে হালকা ছুটি থাকে, সপ্তাহ খানেক। দেশে যাওয়ার ব্যাপারে সবাই রোমান্টিক হয়ে ওঠে কিংবা আবেগপ্রবণ। আমি সামান্যতম অনুভব করি না এইসব এখন আর। তারপরও ফিরি। অনেকটা নিয়ম মানার জন্যে।

গত বছর এই সময়ে গিয়েছিলাম চারদিনের জন্যে, জনকের অসুস্থতার খবর পেয়ে। যাওয়ার দশ ঘন্টা আগে টিকেট যোগাড় করেছিলাম JAL আর ANA মিলিয়ে। অস্বাভাবিক যাওয়া ছিলো সেটা। স্বাভাবিকভাবে গেলে এদের নিজস্ব ফ্লাইট না থাকায় এবং দামের কারণে কখনোই এদের কাছ টিকেট নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ANA মাইলেজ ক্লাব এর একজন গোল্ড মেম্বার পাশে ছিলেন সেই সময়। তার কল্যাণেই পেয়েছিলাম।

হয়তো দেশে যাবো এইভাবেই, বাড়িতে অস্বস্তিকর বন্দী থাকবো কয়েকদিন। ফিরে আসবো আবার। আগের লাইনে বাড়ি শব্দটা লিখে অনেকক্ষণ লেখা বন্ধ করে ভাবলাম। হাসি আসলো। বাড়ি কী? পরিবার? শেকড়? হাহ হা। কী হাস্যকর এবং অ্যাবসার্ড সবকিছু। হয়তো আপনি বলবেন, যাদের বাড়ি নেই, কখনোই কোন পরিবারে থাকে নি, তাদের কথা ভেবে দেখতে পারো। আমি তাহলে বলবো, তাকে আমার ঈর্ষা হয়।
ব্যক্তিগত গল্পে ফুলস্টপ দিই এবার।


অর্থনীতিতে অন্ধকার?
আজকে ইলেকট্রনিক সামগ্রীর বৃহৎ নির্মাতা সনি ঘোষণা দিয়েছে, তারা পুরো পৃথিবীতে নিয়মিত ও অনিয়মিত মিলিয়ে ১৬০০০ কর্মী ছাঁটাই করবে। শক্তিশালি ইয়েন, দুর্বল ডলার ও ইউরো র প্রভাব তো আছেই, তার উপরে মার্কিন এবং ইউরোপীয় বাজারের সংকোচনের ধাক্কার ফলাফল এই রিস্ট্রাকচারিং। এই ধাক্কা সামনে আরো আসবে বলেই মনে হচ্ছে। অন্যদের অবস্থাও খুব একটা সুবিধার নয়।

ফোর্ড, জিএম, ক্রাইসলার এর জন্যে সরকারি সাহায্য আসছে। খবরে বলা হচ্ছে, মার্কিন সরকার নিজেই এসব কোম্পানির অংশবিশেষের শেয়ার নেবে। মজাই পেলাম বেশ। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার অসুখ হলে তা সারাইয়ের উপায় কি তাহলে সমাজতান্ত্রিক পলিসি? পুঁজিবাদী অর্থনীতির দুর্বল জায়গাগুলো যেন এতোদিনে সবাই একসাথে জেগে উঠেছে। ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকগুলোর দুর্দশার কথা বলার দরকার বোধ করছি না। বেয়ার স্টেয়ার্নস এর সাবেক সিইও গ্রীনবার্গ আজ বলেছেন, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং এর যে বিজনেস মডেল ছিলো, তাকে নিয়ে আর আশা না করাই ভালো।
তথাস্তু।

যাই হোক, এই অন্ধকারেও প্রতিদিন নানা স্টিমুল্যান্ট আসে বিভিন্ন সরকারের কাছ থেকে। মার্কেট চাঙা থাকে। সবাই সচল থাকে। আগামীতে পলিসি হয়তো আরো আসবে।
দিনশেষে, অন্ধকার দূর হলেই খুশী হই। কারণ এই সময়ে, এই প্রেক্ষাপটেই আমাদের বাঁচতে হবে আমাদের জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়।

-
ছবি - নিজস্ব, কিয়োতো, নভেম্বর ২০০৮

রবিবার, নভেম্বর ৩০, ২০০৮

বাংলাদেশ এখন আর কাঁদে না

বাংলাদেশ এখন আর কাঁদে না, সে তার সব অনুভূতি হারিয়েছে ।
লক্ষী পয়মন্ত মা আমার, এইভাবে বার-বার ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায় হায়নাদের আঁচড়ে। তারপরও জল আসে না তাঁর চোখে।

শ্বাপদের দল আমার মায়ের শাড়ি ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলে। তবুও তার চোখে চৈত্রের খরা যেন।
বাংলাদেশ, আমার মা, ক্ষত-বিক্ষত অসহায় নয়নে তার কুলাঙ্গার সন্তানের পানে চেয়ে থাকে।

-
বাংলাদেশ আজ বিপন্ন। ধর্মব্যবসায়ীরা আবার আঘাত হেনেছে আমাদের অস্তিত্বে, মননে। এবার তারা হামলা চালিয়েছে "বলাকা" য়।
এ কোন বাংলাদেশ দেখার জন্য আমি বেঁচে আছি?


--
ছবি কৃতজ্ঞতা বাংলার চোখ ডট কম

মঙ্গলবার, অক্টোবর ২৮, ২০০৮

মনোলগ - যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে

আমার মাঝে মাঝে মরে যেতে ইচ্ছে করে। খুব নিঃশব্দে, কাউকে না জানিয়ে, অথবা কারও জন্যে কোনওভাবে বিরক্তির তৈরি না করে। আমার চলে যেতে ইচ্ছে করে, যেন আমার জন্মই হয় নি অথবা আমার কোন অস্তিত্বই ছিল না। যেন আমি কোন পথ হাঁটি নি, যেন আমি কোনও পায়ের ছাপ রাখি নি কোথাও। যেন আমি লিখি নি কোন গল্প, অথবা গাই নি কোন গান। নিভৃতে, কারও জেনে ফেলার আগেই, মুছে ফেলতে ইচ্ছে করে ভুল করে তৈরি করে ফেলা আমার অ্যাকাউন্ট।

মরে যাবার আগে, আমার একটি বারের জন্যে ইচ্ছে করবে না কারও মুখচ্ছবি মনে করে সামান্যতম দুঃখবোধে সিক্ত হ'তে অথবা কারও কণ্ঠধ্বনি শুনে - পৃথিবী আসলে বড্ড ধোঁয়াটে সুন্দর - সেই কথা দ্বিতীয়বারের জন্যে ভাবতে। হোক সে আমার জননী, যার কাছে আমি নিতান্তই নিরুপায় ক্ষমাপ্রার্থী হবো হয়তোবা আমার অসহায়তার জন্যে, অথবা জনক কিংবা আনন্দময় শৈশবের জন্যে সবসময় কৃতজ্ঞ থাকা হারিয়ে ফেলা বন্ধুটি। হয়তো আমার ইচ্ছে করবে না আরেকবার নিজের এই সামান্য সময়ের ভন্ড জীবনটুকুর জন্যে কোন অতৃপ্তিবোধে আচ্ছন্ন হতে।

কিন্তু,আমি যেহেতু মফিজ, জয়নুল, ছগিরুল অন্য সবার মতোই খুব স্বাভাবিক, খুব গুডি বয়দের মতোন ম্যাঁদামারা জীবন যাপন করে এসেছি। এবং আমি মহামানব নই, নই সামান্য প্রতিভাবানও। তাই, হয়তো জেগে উঠতে পারে সামান্য লোভ, তুচ্ছ মনের কোন এক কোণে। ইচ্ছে করতেও পারে জীবনকে কখনোই ভালোবাসতে না পারার ব্যর্থতাটুকু নিয়ে আরো কিছু ক্ষণ, কিছু পল অর্থহীন ভাবনা রচনা করার চেষ্টা করতে।

হয়তো ইচ্ছে করে বসতে পারে, আরেকবার হেঁটে যেতে চিরচেনা পথ ধরে আমার শৈশবের পাঠশালায়। অয়ন নামের একজন প্রিয়জন কাল মনে করিয়ে দিলো, আমাদের স্কুলের মাঠটা অনেক বড় ছিলো। সেই মনে করিয়ে দেবার সূত্র ধরে কিছু নিউরন উত্তেজিত হয়ে, মনে করার দরকার নেই এরকম স্মৃতিকে, ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলতে পারে।

শেষবারের মতো আমার মনে পড়তে পারে, বয়েস পাঁচে আমি একবার লাঙল দেয়া জমি ধরে দৌড়ুতে গিয়ে উল্টে পড়ে গিয়েছিলাম। পুরো গায়ে ধূলো মেখে বাড়ি গিয়ে মা-কে কী বলবো, এই ভেবে সারা গায়ে থুথু মেখে বসেছিলাম। আমার মনে পড়তে পারে, শৈশবে আমার রাগী মা কখনো মারলে অথবা বকলে আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিতাম মার খাওয়ার আগেই। অথবা শেষবারের মতোন আমার মোটামুটি নির্ভরযোগ্য স্মৃতিশক্তি মনে করে বসতে পারে, কীভাবে ছুড়ে দেয়া ধাতব পাত্রের আঘাতে সহোদরের একটা দাঁতের অংশবিশেষ ভেঙে দিয়েছিলাম - সেই স্মৃতিও। আমি কখনোই ক্ষমা প্রার্থনা করি নি তার কাছে সেই অপরাধের জন্যে। এখনো তার সেই দাঁতটি সেই অবস্থাতেই আছে, যতদূর মনে পড়ে।

এইসব ফ্লাশব্যাক আমাকে ভাবাতে পারে, বিরক্ত করতে পারে। তবুও আমার মাঝে মাঝে মরে যেতে ইচ্ছে করে খুব কোনওরকম পিছুটান ছাড়াই। সবকিছুকেই অতিক্রম করে চলে আসলে যে শূন্যতা থাকে, তাকে স্পর্শ করার মতো সাহস যখন হয়ে যায়, তখন মুক্তির প্রত্যাশাই অনেক বড় হয়ে ওঠে।

এতোকিছুর পরেও আমি বেঁচে থাকি নির্লজ্জ্বের মতোন। আমিও আরেকজন মফিজ অথবা রহিম-করিম, রাম-যদু-মধু। আপনার অথবা তার মতোন আমিও স্বপ্ন দেখি, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী পাঁচ-ছয় মাসে আমি আরেকটা ডিগ্রী নিজের রিজিউমিতে যোগ করার সুযোগ পাবো। তারপরে পুড়ে যাওয়া অর্থনীতির দুর্যোগের সময়েও হয়তো কর্পোরেটদের দাসত্ব করবো কোথাও।

এইভাবে আপনার মতোই আমিও বাঁচি।
আগামীকাল অথবা আগামী মাস কিংবা আগামী বছরও হয়তো বেঁচে থাকবো।
তবুও এইসব সময় যখন আসে, তখন ভেবে পাই না, আসলে কী করা উচিত। আমি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে উঠি, আমি তুচ্ছ থেকে তুচ্ছতর হয়ে যাই। আমার কানে বাজে সেই গান আর কান্না - সব যে হয়ে গেল কালো, নিবে গেল দীপের আলো, আকাশ-পানে হাত বাড়ালেম কাহার তরে?

-
গান, যে রাতে মোর দুয়ারগুলি
"মেঘে ঢাকা তারা" ছবি থেকে, দেবব্রত বিশ্বাস ও গীতা ঘটকের কণ্ঠ

বুধবার, অক্টোবর ১৫, ২০০৮

লিখতে না পারার গল্প

অনেকদিন কোন অক্ষর যোগ হয় না এই খাতায়। খাতাটা খোলাই হয় নি অনেক দিন। কেনো লিখি না? নিজের সবচেয়ে আপন জগত, নিজের সবচেয়ে বড় আশ্রয়ের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াই কেনো?

লিখতে তো পারি, ডানা ভেঙে যাওয়ার কিংবা পুড়ে যাওয়ার গল্প।
ঈশ্বরে বিশ্বাস হারানোর গল্প। মুক্তির খোঁজে পঁচা-মরা নদীর পাশ দিয়ে খালি পায়ে তেলাপোকা আর ইঁদুর চড়ে বেড়ানো নীরব রাস্তা ধরে হেঁটে যাওয়ার গল্প। কিংবা মাঝেমাঝেই বিরক্ত করা - শৈশবে ডুবে যাওয়া শহরে হাঁটু পর্যন্ত স্কুলড্রেসের খাকি প্যান্ট গুটিয়ে, ফতুয়া ভিজিয়ে বাড়ি ফেরার নস্টালজিয়া।

তাহলে বাস্তব পৃথিবী নিয়ে লিখলেই তো হয়?
অসুস্থ মায়ের পাশে থাকতে না পারার ব্যর্থতা, কিংবা নিজের থেকে আরো বেশি করে পুড়তে থাকা আত্মজনের বিপদে কোন কাজেই না আসতে পারার পৌনঃপুনিক বেদনাগুলোর কাছে পরাজিত হওয়ার কথকতা। নিজের প্রিয় খাতায় এইসব আসে না কেনো? তবে কি নিজের কাছ থেকে নিজেই পালিয়ে বেড়াই?

প্রতি মুহূর্তে শরীর আর মনের ভারে বৃদ্ধ হয়ে উঠি - সেইটুকু এমনিতেই বুঝি। তাতে কী হয়েছে, মনে মনে ঠিকই শব্দ সাজাই, কিন্তু ব্যস্ততা এসে লেখাগুলোকে মুছে দেয়। নিজের আত্মার আলোটুকুর বিনিময়ে দাসত্ব অর্জন করার পথে এগুতে থাকি। রোজ ঘুমুবার আগে একটা লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে ভাবি, কালকের রোদমাখা দিনটায় হয়তো নতুন করে জন্মাবো, নতুন করে । হয় না, পারি না। মেঘ আর বৃষ্টি এসে কাঁচকলা দেখায় আমার সে চাওয়ায়।

ঘরের মাঝখানে বড়ো বাতিটা এখনো জ্বালানো হয় না। খুব স্বাভাবিক বাস্তব চিন্তা করি, আগামীকাল সন্ধ্যেতে অথবা মধ্যরাতে ঘরে ফিরে হয়তো ওই বাতিটা জ্বালিয়ে দেবো। পারি না, কিচেনের অংশের হালকা ৩৬ ওয়াটের বাতির আবছা অন্ধকারেই ভালো লাগে, নিজের সাথে নিজের দেখা হয় না তাতে।

প্রলাপ শেষ করে ফেলবো ভেবেছিলাম। শেষ করতে পারি না। সেই পুরনো বৃত্তটা থেকে বেরুতে পারি না।

বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০০৮

জুবায়ের ভাইয়ের সাথে দেখা হলো না

মুহম্মদ জুবায়ের ভাই চলে গেছেন। কাল।
কীভাবে বিদায় জানাতে হয় জানি না। কিছুক্ষণ পরপরই যখন মনে পড়ছে, আর কোন পোস্টে কখনো লেখা থাকবে না, লিখেছেন .. মুহম্মদ জুবায়ের, দুর্বল হয়ে যাচ্ছি, ভিজে উঠছে চোখ । আর কখনো পড়া হবে না মেয়ের গল্প নিয়ে গর্বিত বাবার পোস্টগুলো অথবা সত্তরের দশকের বাংলাদেশের ঘটনা-দুর্ঘটনা নিয়ে তার স্মৃতিচারণ অথবা ধারাবাহিক উপন্যাস "চুপকথা" অথবা "পৌরুষ"। আর কখনো হালখাতা ধরে আমাদেরকে কেউ মনে করিয়ে দেবে না, সিরিজ শুরু করে শেষ না করার বকুনি খেতে হবে না আমাদের।

কখনো দেখা না হয়েও একজন মানুষের জন্যে এতোটা অনুভব - অবাক হয়ে আছি।
জানি না - আমরা কী হারালাম। ভালো থাকুন, জুবায়ের ভাই। ভালো থাকুন, যেখানেই যান।

শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ১২, ২০০৮

ছোট্ট আকাশের সাথে আমার বিচ্ছেদের মুহূর্ত

পৌনঃপুনিকতার তালিকায় অনেকদিন আগে নাম লিখিয়ে ফেলা জীবনের এই ছোট্ট ঠিকানায় তাও আকাশ ছিলো, ছিলো জানলা খুলে দিলে ওপারে দাড়িয়ে থাকা কয়েকটা অচিন বৃক্ষ। আমার এই বসার জায়গাটুকুর পেছনে তাকালে দেখতাম কখনো আকাশ নীল, কখনো কালো। কখনো আকাশের মন ভালো, কখনো কটমটে রাগ করা মা মেঘেরা বাচ্চা মেঘেদের নিয়ে উড়ে যেতো ওই অচিন বৃক্ষের ওপর দিয়ে।

পাখি। টিয়া। ঝাঁকে ঝাঁকে, সন্ধ্যায় ওদের ডানা ঝাপটানি ওই অচিন বৃক্ষের পাতায়-ডালে।
সব হারিয়ে যাবে, খুব তাড়াতাড়ি হলে কাল, অথবা সামনের সপ্তায়। বাড়ছে কনক্রিটের কাঠামো, হয়ে গেছে একতলা। আমার বিদ্যালয় বানাচ্ছে নতুন ভবন, যেনো ফুঁড়ে উঠছে অশ্লীলভাবে। একেবারে আমার জানলা ঘেঁষে। পুরনো কিছু ভবন ভেঙে ফেলা হবে, তার প্রস্তুতি হিসেবে এখানে গড়ে উঠছে নতুন। আমাদের আকাশকে বিসর্জন দেবার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠান দেবে চকচকে নতুন ল্যাব, শ্রেনীকক্ষ এমনকি একতলায় কনভেনিয়েন্স স্টোর। বেচবে প্যাকেট লাঞ্চ থেকে শুরু করে স্লিপিং পিল।

আমি জানলা দিয়ে তাকালে আর আকাশ আমায় ডাকবে না। মায়াভরা বৃষ্টিমাখা আকাশ অথবা দুধ-সাদা মেঘ মাখানো আকাশ। দেখবো সেখানে কনক্রিটের কালো অথবা ধূসর দেয়াল। অথবা এয়ারকুলারের বেড়ে যাওয়া বাইরে থাকা অংশ। স্ট্রেসময় জীবনের বন্ধু এই ছোট্ট আকাশটুকু, তোমার সাথে বিদায়ের এই বেলায় নাগরিক মানুষ হবার দায় ও দুঃখে আমি বিব্রত। অসহায়।
বিদায় বন্ধু।

রবিবার, আগস্ট ২৪, ২০০৮

অপলাপ এবং মৃত ঈশ্বর

মাথাব্যথা কয়েকদিন ধরে। মাথাটিপে ধরে সস্তার দোকানে প্রেসক্রিপশন ছাড়া কেনা পেইন-কিলার গিলে দিন পার করি। ডাক্তারে অরুচি। নিজের জন্যে এতো ভাবতে ইচ্ছে করে না। নরক বলে যদি কিছু থাকে, তবে সেখানে যেতে রাজি আছি, এই মুহূর্তে। জীবনে কোথাও কোন অতৃপ্তি নেই, কিংবা কোন অনুশোচনাও। বেঁচে আছি, তাই নানান লৌকিকতা এখনো করে যাচ্ছি।

-
কাল থেকে বৃষ্টি। গরম নেমে গেছে এক লাফে। কুলার দরকার হয় না। তবে, সাইকেলে চড়ে ছাতা নিয়ে বৃষ্টি মাথায় বেরুনো বেশ ঝামেলার। আইন বলে, ব্যাপারটা নিষিদ্ধ। মানে, সাইকেলে চড়লে ছাতা মাথায় দেওয়া যাবে না, ছাতা মাথায় দিলে সাইকেল থেকে নেমে হেঁটে যেতে হবে। তবে, পুলিশে কিছু বলে না।
পুলিশে ধরে, সাইকেলে লাইট না থাকলে। আমার সাইকেলের লাইট ভেঙে গেছে, এক মাস হলো। আমার সাইকেলের সাথে গায়ে গা লাগানো নিজের সাইকেল বের করতে গিয়ে একজন সুবোধ মানুষ আমারটা ফেলে দিয়ে লাইট ভেঙে ফেলেছে। আমার সামনেই ঘটেছে। কিছু বলতে ইচ্ছে করে নি। মুচকি হেসে নিজের সাইকেলটা ঠিক করে রেখে, ভাঙা লাইটটা পকেটে ঢুকিয়ে ফিরে এসেছি।

সাইকেল নিয়ে ইদানিং বেশ ঝামেলায়ও আছি। ব্রেক কাজ করে না। গত পরশু গাড়ির সামনে আরেকটু হলে পিষে পড়ার উপক্রম হয়েছিলো। কীভাবে যেনো বেঁচে গেছি। গাড়িটা আস্তে চলছিলো, তাই ব্রেক করে আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। আইন বলবে, আমারই দোষ।


-
একটা বই পড়ছি, The Kite Runner। অনেকদিন পরে কিছু একটা মনোযোগ দিয়ে পড়ছি। চেষ্টা করছি। নষ্ট হয়ে যাওয়া বই পড়ার অভ্যাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা। অরুপ ভাইর পছন্দের বই। মাঝেমাঝে পড়ছি।

আফগান বংশোদ্ভূত লেখক খালেদ হোসাইনি র হাতে, আফগান সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঝরঝরে ভাষায় গল্পের নির্মাণ। খালেদ এর বয়েস যখন আট, রাজা জহির শাহের পতন হয়। তার ডিপ্লোম্যাট বাবা পালিয়ে যান প্যারিসে, যখন খালেদ এগারোতে। পরে ইউএসএ তে, বাবার রাজনৈতিক আশ্রয়ের সূত্রে। সেখানেই কাটিয়ে দেন বাকি জীবন। যে জন্যে এই কথা বলছিলাম, বই এর যতটুকু পড়েছি, ততটুকু পড়ে কখনো মনে হয় নি ভদ্রলোক আফগানিস্তানে তার শৈশবের খুব অল্প সময় ছাড়া থাকার সুযোগ পান নি।

পুরো বই পড়া হলে লেখা হবে হয়তো বাকিটা।

-
বন্ধুহীন হয়ে পড়েছি। সময়েই সব বদলে যায়। সব মঞ্চ ভাঙে, পড়ে থাকে শুধু স্মৃতি। সব আড্ডার পাত্র-পাত্রীরা বদলে যায়, থাকে শুধু আড্ডার জায়গা। নতুনেরা আসে। ভাঙার জন্যে দরকার হয় একটা টুকরো ঘটনা অথবা উপলক্ষ্য। রাজশাহীতে নিউমার্কেটের ছাদে একসময় বসতাম। এখনো দুই বছরে একবার দেশে গেলে দেখি, নতুনেরা আড্ডা দিচ্ছে। পরিচিত কাউকে আর চোখে পড়ে না।

দেশ ছেড়েও সেলফোনের কল্যাণে কাছের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ ছিলো। সময়ে-অসময়ে ফোন করেছি একটা সময়। এখন সেই যোগাযোগ শূন্যের কাছাকাছি। প্রযুক্তির প্যাকেজে ড়্যাপ করে ফেলা বন্ধুত্ব এখন এক চিমটি এসএমএস, তিন ফোটা ফেসবুক, সামান্য ইন্সট্যান্ট মেসেজিং। ফেসবুকে কারও ছবি দেখে গতানুগতিক কপি-পেস্ট, "তোকে যা লাগছে নাহ"।

খুব কাছাকাছি সবাই মোটামুটি নিজেদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত। চাকুরি,ক্যারিয়ার, কর্পোরেট জীবনে উপরে ওঠা, নিজের পার্টনার - আইনসিদ্ধ অথবা অসিদ্ধ, বিয়ে, ভাঙা-গড়া, কারও বাচ্চা-কাচ্চা এবং অন্যকিছু। তাই আর বিরক্ত করি না কাউকে। কার জন্যে কে সময় দেয়? কে এখন বন্ধু? বন্ধুত্ব এখন দিবস করে আসে। বাকি সব দিন সব্বাই একা। আদতে।
এইরকম করে মঞ্চ ভেঙে যায়। আমরা যেনো কয়েকদিনের জন্যে স্টেজ শো করতে আসা যাত্রার দলের ওয়ানটাইম অভিনয়ের পার্শ্বচরিত্র। পরের স্টেজ শো তে আর আমাদের দরকার নেই।
এইসবই এখন স্বাভাবিক, অথবা বাস্তব নিয়ম।

-
এইসব কেন লিখি? লোকের পড়ার জন্যে? নিজের অনুভূত কষ্টে লোকের সহানুভূতি চাইছি? মাঝেমাঝে নিজের ভন্ডামিকে নিজেই প্রশ্ন করে বসি। তবে, আজ স্বীকার করে যাই, হ্যা, আমি আসলে খুব ভন্ড। কোনটা যে আমি, আর কোনটা যে আমার অস্তিত্ব, আমি জানি না। এইসব কথা কাউকে কখনো বলা হয় না, তাই লিখে রাখি।

ভরা হাটের মাঝে কারও মেকি হাসিমুখ তার বর্তমান নয়, ভার্চুয়াল ব্লগে লেখা কারও সাজানো-গোছানো গল্পও পুরোপুরি সে নয়। পেসিমিস্টদের ঈশ্বর থাকে না, তাদের গল্পও এভাবে লেখা যায় না। পেসিমিস্টদের মন থেকে ঈশ্বর একটা সময় পরে আপনা আপনি মরে যায়।
সত্যি কথা বললে রূঢ় শোনায়, তবুও বলি, এইসব আগাছা হতাশাবাদী যতো তাড়াতাড়ি বিদায় নেয় এই বাস্তব ও আনন্দময় পৃথিবী ছেড়ে, ততোই জগতের মঙ্গল। পুরো জগত তাই মনে করে। যার সৌন্দর্য উপভোগের ক্ষমতা নেই, সৌন্দর্য প্রদর্শনী ছেড়ে চলে যাওয়াই সমীচীন। আমি জানি, আপনিও তাই ভাবেন। নয় কি?

অগাস্ট ২৪, ২০০৮

--
[কমেন্ট অপ্রার্থনীয়, সেজন্যে ক্ষমা চাইছি।
ছবি কৃতজ্ঞতা, ডেনিস কোলেট, কপিরাইট - সিসিএল ]

সোমবার, আগস্ট ১৮, ২০০৮

বিক্ষিপ্ত গল্প, একঘেঁয়ে সুর, জীবনের সরলরেখা

১।।
ইনসমনিয়া আবার এসে ভর করেছে। অনেকদিন পর। ঘরের পর্দা টেনে দিয়ে, আলো বন্ধ করে, টিভি ছেড়ে দিয়ে শুয়ে থাকি। ঘর ঠান্ডা করে, একেবারে ২৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নামিয়ে এনে, কাঁথা মুড়ি দিয়ে। বড় ধরনের বিলাসিতা। টিভিতে অলিম্পিক পদকজয়ীদের নিয়ে উচ্ছ্বাসভরা সব অনুষ্ঠান দেখি।

সাঁতার, জুডো, মেয়েদের রেসলিং এ জাপান কয়েকটা পদক জিতে বাকিসব ইভেন্টে ডাব্বা মেরেছে। এখনো ডাব্বা মেরেই যাচ্ছে। আমাদের ডলি আক্তার আর বিউটি নাজমুন নাহারকে এদের মতোন বেতন আর সুযোগ-সুবিধা দিতে পারলে নির্ঘাত কিছু না কিছু করেই ফেলতো।

চীনের জয়জয়কার দেখতে দেখতে বিরক্তি ধরে গেছে। তবে, এথলেটিকসে মজা পাচ্ছি। ১০০ মিটার দৌড়ে জ্যামাইকা র উসাইন বোল্ট এর দৌড় দেখে হাসবো, না কাঁদবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। সেই ভদ্রলোক অর্ধেক পথ দৌড়ে এসেই খুব একা একা বোধ করতে থাকে, ডানে তাকায়, বামে তাকায়, যখন দেখে তার সামনে কেউ নেই, ডানে-বামে তো নয়ই, সেই আনন্দে ফিনিশিং লাইন পার না হতেই নাচা শুরু করে দেয়।


২।।
সব অভিজ্ঞতাই কেমন যেন দেজাভ্যুঁ হয়ে যাচ্ছে আজকাল।
আন্ডারগ্রেডার ছিলাম যখন, তখনও লম্বা সময় শারীরিক অসুস্থতার জন্যে এইরকম টিভি ছেড়ে দিয়ে শুয়ে থাকতাম। পুরনো নাটক বা অনুষ্ঠান মাঝরাতে পুনঃপ্রচার করতো, মাঝেমধ্যে সেইগুলোতে মনোযোগ দিয়ে সব ভুলে থাকার চেষ্টা করতাম। সকালে অবশ্য তখন ক্লাস থাকতো। ওইরকমভাবেই সকাল হয়ে যেতো, সকালে দু-এক ঘন্টা ঘুম আসতো মাঝেসাঝে।

সেইটা পার করে ক্লাসে হাজির হয়ে যেতাম ঠিকই সময় মতো। সকালের ক্লাসে কদাচিত ঘুমিয়েছি। আমার পাশে বা সামনের জাপানি বন্ধু নাক ডেকে ঘুমিয়ে গেছে বোরিং টিচারের পাওয়ারপয়েন্ট স্লাইডের দিকে মনোযোগ দিতে না পেরে। আমি পারতাম না। ঠিকই জেগে থাকতাম চোখ টানটান করে। আমার ঘুম আসতো দুপুরের পরের ক্লাসগুলোতে। বাঙালির ভাত-ঘুম।
ক্লাসে শেষের দিকে টেস্ট বা হোমওয়ার্কের কথা উঠতেই নাক ডাকতে থাকা বন্ধু ঠিকই জেগে উঠতো অবশ্য। এই গুণটা অবশ্য আমিও রপ্ত করে ফেলেছিলাম পরে।


৩।।
শরীরটা অন্যদিক দিয়ে বিট্রে করে বসছে। পাকস্থলী কথা শুনছে না। সোজা বাংলায় বললে, পেটের সমস্যা।
পরিপাকযন্ত্রের গোলযোগের ব্যাপারটার সাথে আমার সখ্যতা খুব বেশি ছিল একটা সময়ে, দেশে থাকতে। ইলিশ মাছ খেলে পেট বিট্রে করতো, বাইরে সিঙারা-পুরি হাবিজাবি খেলে পেট বিট্রে করতো। গরীব শরীরে রাজকীয় পরিপাকযন্ত্র। তবে ব্যাপারটা যে জীবাণুর সাথে আমার শত্রুতাঘটিত, সেটা আমি পরে নিশ্চিত হয়েছি। কিছু কিছু সহজ সরল জীবাণু আমাকে খুব সহজে আক্রমণ করে বসতো।
গত বছর সাতেক এরকম হয় নি। হঠাৎ করেই অনিয়ম। আপাতত উপায় হলো, খাবারে মসলা বা মসলাযুক্ত খাবার বাদ দেয়া। খুব সহজ ব্যাপার। জাপানী খাবারে মসলা থাকে না।

৪।।
গবেষণা নিয়ে ভেজালে আছি। কিছু ডেটা বের করতে ঘাম ছুটে যাচ্ছে।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিম্যুলেশন জিনিষটা বড্ড ভেজালের। একটা ফ্রি-সোর্স সিম্যুলেটর আছে, সবাই ব্যবহার করে, এনএস২ নামে। একে টানাটানি করে বাগে আনা খুব কষ্টের কাজ। পুরো সিম্যুলেটরটাকে ঠিকমতো না বুঝে একে দিয়ে নিজের ইচ্ছেমতোন কাজ করিয়ে নেয়া অসম্ভব। এই ভেজালে আটকে আছি কয়েকদিন।

৪।।
খুব খুঁতখুঁতে হয়ে গেছি। মন-মেজাজ খুব খারাপ থাকে।
ল্যাবে পিচ্চিপাচ্চি, মানে জুনিয়রগুলো রোজ রাতে বাসায় ফেরার সময়, কুলার বন্ধ করতে ভুলে যায়। সেজন্যে আল-গোর এর একটা খুব ভয়ংকর বড় ছবি খুঁজে বের করেছি ওয়েব ঘেঁটে। "মাঝরাতে ঘরে ফেরা বন্ধু, কুলার বন্ধ করতে নিশ্চয়ই ভুলে যাওনি" লিখে, পোস্টার আকারে প্রিন্ট করে ল্যাবের দরজায় সাঁটিয়ে দিয়েছি।

সত্যজিত রয় এর খুব ছোট ছোট গল্পের সংকলন ছোটবেলায় পড়তাম। এবারও বারো, একডজন গপ্প, এইরকম হতো নামগুলো। সেইরকম কোন একটা সংকলনে একটা মজার গল্প ছিলো, এক লোক মানুষের ভবিষ্যৎ ছবি এঁকে দিতে পারতো, সেই নিয়ে।

কয়েক সপ্তাহ ধরে ভবিষ্যত নিয়ে ভাবছি। না, সিরিয়াস কোন চিন্তা নয়। নিজের ভবিষ্যৎ ছবি কেমন হতে পারে, সেই নিয়ে। চিন্তা করলে একটাই ছবি ভেসে ওঠে, একটা খুঁতখুঁতে নিয়মতান্ত্রিক, একগুঁয়ে বুড়ো। মাথায় নির্ঘাত একটা পৈতৃক টাক। তবে ভুঁড়ি নাও থাকতে পারে। কারণ, তেল-চর্বি বড় অপছন্দের জিনিষ।

৫।।
পৌনঃপুনিকতা বড্ড বাজে জিনিষ। জীবনে কোন গল্প নেই। এখনকার জীবনটাকে একটা সরলরেখা হিসেবে চিন্তা করে, সময়নিরপেক্ষ যে কোন একটা অংশ তুলে নিলেই পুরো জীবনের রেপ্লিকা পাওয়া যাবে।
কোন গল্প নেই, কোন বিশেষ ঘটনা নেই।
বড্ড খারাপ, বড্ড খারাপ।

-
অগাস্ট ১৮, সোমবার, ২০০৮

শুক্রবার, জুলাই ২৫, ২০০৮

আমি দিনভিখারি, নাইকো কড়ি, দ্যাখো ঝুলি ঝেড়ে

অফলোড এর গল্প
দিনগুলো বড্ড তাড়াতাড়ি যায়। এইতো সেদিন এপ্রিল এলো, দেখতে না দেখতেই আগস্ট কড়া নাড়ছে। আগে আন্ডারগ্রেডে থাকতে অপেক্ষায় থাকতাম, কবে আগস্ট আসবে। আগস্ট-সেপ্টেম্বর দেশে থাকতাম পুরোটা সময়। শেষ দেশে গেছি গত ডিসেম্বরে, সেটাকে অবশ্য যাওয়া বলে না। সেই অর্থে দেশে গেছি দুই বছর আগে। দেশের স্মৃতি সেখানেই থেমে আছে। আস্ত একটা দেশকে কোথাও স্টিলশটে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে যেনো।

ডিসেম্বরে গিয়েছিলাম জনকের অসুস্থতায় হাজিরা দিতে, দিন চারেকের জন্যে। একটা ঘোরের মাঝে ছিলাম। দেশে যতটা সময় ছিলাম, তার চেয়ে বেশি ছিলাম বোধহয় যানবাহনের উপরে। ফেরার পথে ঘোরটা আরো বড্ড পেয়ে বসেছিল, এক ঘন্টা ধরে আমার নাম ডাকাডাকি হয়েছে জিয়া বিমানবন্দরে, আমি শুনতে পাই নি। সেই ফলাফল, প্লেন মিস। অফলোড।

অফলোড মানে ইমিগ্রেশন এর চেকিং এর দরজা আবার উল্টো দিকে বেরিয়ে আসা। অফলোড জিনিষটা বড্ড ঘোলাটে আর বিরক্তিকর। একটা সাদা কাগজে দরখাস্ত লিখতে হয়, মিথ্যে কথা বলতে হয়। যেমন, আমার পেট ব্যথা করছে। তাই আমার প্লেনে উঠতে ইচ্ছে করছে না। যেনো, স্কুলে টিফিন পিরিয়ডে ছুটি চাহিয়া প্রধান শিক্ষক বরাবর দরখাস্ত। উহু, এতো সহজ নয়। বড্ড ভেজালের । জিয়া বিমানবন্দরে যেসব খালামনিরা থাকেন, তাঁরা বড্ড রাগী। একবার শখ করে অফলোড করেই দেখুন নাহ!

তারপরও ভেজাল ছিলো, যে প্লেনটা মিস করেছিলাম, তার টিকেটটা অচল হয়ে যাওয়ায় আরেকটা টিকেট কিনতে হয়েছিল। একা গুলশান-কারওয়ানবাজার ছুটোছুটি। ঢাকা শহরে আমি এক অচল মানুষ। রাস্তাঘাট চিনি না। আমার দৌড় পলাশী-শাহবাগ-নীলক্ষেত বড়োজোর। কীভাবে পেরেছিলাম, জানি না।


পঁচা সময়
রোজ রাতে যে পঁচা নদীটার তীর ধরে দৌড়োই, তার পানিতে ভেসে গেছে এক নির্মাণ-কর্মী। গত সপ্তায়। হঠাৎ প্রচন্ড বৃষ্টির মাঝেও কাজ করতে গিয়ে। সেই জায়গাটায় গিয়ে মনে পড়ে, আহা এভাবেও "মানুষ" মুহূর্তেই নাই-মানুষ হয়ে যায়। হাসিকান্নায় মুখর কোন প্রাণ মুহূর্তেই টিভিতে দেখানো প্রাণহানির খবরে পরিণত হয়। সেইসব খবরের সাথে আরো শোনা যায় কোন এক হাইস্কুল পড়ুয়া মেয়ে তার বাবাকে মেরে ফেলেছে, অথবা অসুস্থ স্ত্রীর সেবায় বিরক্ত কোন বুড়োর স্ত্রীকে মেরে ফেলাটাও নিউজের একেবারে উপরের সারিতে থাকে। সেইসব কাহিনী নিয়ে স্মার্ট মিডিয়ার কাটাছেঁড়া দেখি। ভাবি, আহ, মৃত্যু! তুমি বড্ড হেডলাইনে থাকো।


লাট্টু
একটা লাট্টুতে আটকে গিয়েছিলাম বছর খানেক আগে। অনেকদিন পরেও সেই লাট্টু থেকে বেরুতে পারি নি। আসলে বেরুবার উপায় জানা নেই, সত্যি কথা বলতে।
তবে, এখন আর দুঃখ জাগে না অসময়ে। শুনতে ইচ্ছে করে না দুঃখজাগানিয়া কোন গান বারবার। সব কষ্ট জমে ওঠে, নিজের উপরে ক্রোধে পরিণত হয়, ক্ষোভের আশ্রয় নেয় দুঃখেরা। দম বন্ধ হয়ে আসে। মনে হয়, কোন এক মেঘেঢাকা ঘোলাটে চাঁদের রাতে উড়িয়ে দেই সবকিছু। তাও যদি মুক্তি মেলে। বলতে ইচ্ছে করে, মহারাজ, এবার ছুটি দাও। আমি আর অফলোড হতে চাই না। অফলোড হওয়ার বড্ড ঝামেলা। আমি জানি।
বলি, আমি দিনভিখারি, নাইকো কড়ি, তবু পার করো আমারে।

গান- হরি দিন তো গেলো, সন্ধ্যা হলো পার করো আমারে
কণ্ঠ- পরীক্ষিত বালা


-
অনলাইন রাইটার্স কমিউনিটি সচলায়তনে প্রকাশিত

বৃহস্পতিবার, জুলাই ১৭, ২০০৮

উঁহু, এভাবে আমাদের কণ্ঠ বন্ধ করা যাবে না

এভাবে গলা টিপে ধরা যায়, মেরে ফেলা যায়। কিন্তু এভাবে কণ্ঠ বন্ধ করে দেয়া যায় না। এভাবে আগামীকাল জেগে ওঠা নতুন দিনের মিছিলকে থামানো যায় না।

-
প্রিয় সচলায়তন এর সাথে সংশ্লিষ্টরা আশংকা করছেন সাইটটিকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। সরাসরি ডোমেইন ঠিকানা লিখে শুধুমাত্র বাংলাদেশ থেকে সেখানে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। টেকনিক্যাল ত্রুটির সব সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার পর, তারা এখন কোন ধরনের নাশকতা অথবা কণ্ঠ রুদ্ধ করার অপপ্রয়াস এর ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত।

কণ্ঠ রুদ্ধ করার যে কোন অপপ্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সব সময় জেগে আছি।

সোমবার, জুলাই ১৪, ২০০৮

অশ্লীল পশুর দল যখন খামচে ধরে আমার ভাইয়ের দীঘল পিঠ

ছাপ্পানো হাজার বর্গমাইল এর প্রিয় কবি, বছর পনের আগে আপনার দুর্বিনীত কণ্ঠে উচ্চারণ হয়েছিল - একবার রাজাকার চিরকাল রাজাকার। যে একাত্তরে জন্ম নেয়নি, সেও হতে পারে রাজাকার।

প্রিয় কবি, আপনি নাম পরিচয়হীন একজন নিহত মুক্তিযোদ্ধার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বন্দনায় বলেছিলেন, তুমি আমার কল্পোলোকে একমাত্র বীর। প্রিয় কবি, আজ সেই নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের এক বেঁচে যাওয়া সঙ্গী, তার নিহত বন্ধুর, ভাইয়ের বিচারের এত্তেলা নিয়ে ঢুকে পড়েছিলো নিরস্ত্র,
ঘাতকদের রাক্ষসপুরীতে। তাঁকে হতে হয়েছে অপমানিত।

নষ্টদের অধিকারে চলে যাওয়া রাষ্ট্রের প্রধান বিচারাধিপতির দায়িত্বে থাকা বনশূয়রটি ঘোঁতঘোঁত জিভ কামড়ে কি যেন বলতে চেয়েছে। অশ্লীল ঠেকেছে আমার কাছে। আরেকটু হলে আমার দুর্মূল্যের বাজারে কেনা অতিমূল্যের চালের অমূল্য ভাত বেরিয়ে আসত গলা দিয়ে। বমি হয়ে।
ভাবছিলাম, সেই বনশূয়রটির মুখের উপরে পেচ্ছাপ করে দিই।
তলপেটের চাপ কমাই।

প্রিয় কবি, আজ নতুন কবিতা লেখার সময় এসেছে। সবকিছু নষ্টদের অধিকারে চলে গেছে আজ।
ঘোঁতঘোঁত অশ্লীল পশুর দল আজ ঢুকে পড়েছে প্রাসাদে। তারা সঙ্গম করবে, তাদের বংশবৃদ্ধি হবে, ছেয়ে যাবে পুরো রাজ্য আজ।
আমরা, যারা অসহায়ভাবে বেঁচে আছি, আমরা প্রতিদিন ভুলে যাচ্ছি, কার কাছে কোন্ ঋণে আমাদের এই জন্ম।
আমরা প্রতিদিন প্রতিনিয়তই বিশ্বাসঘাতকে পরিণত হই একটু একটু করে, আমরা প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তেই আমাদের চর্বিভরা শরীর নিয়ে আরো অশ্লীল হয়ে উঠি।

বাঁশঝাড় ডিঙিয়ে, কাদাপানিতে সাঁতার কেটে, আধাবেলা, আধাপেট খেয়ে, না-খেয়ে যে প্রিয় ভাইটি নয়মাস শত্রুর সাথে লড়েছে, যে এগারো বা বারো ডিসেম্বরে বাড়ি ফিরে তাঁর রেখে যাওয়া প্রেয়সীকে পায় নি অথবা তাঁর আদরের বোনটি কে পেয়েছে মূক আর রিক্ত অবস্থায়। তাদেরই একজন তাঁর তর্জনী দিয়ে নোংরা পশুর দলকে দেখিয়ে দেবার পরও কি আমরা ভাতঘুম দিয়ে, বিছানায় সঙ্গম ও ইডিয়ট বাক্সে জলপাই-বন্দনা উপভোগ করে অশ্লীল, অরুচিকর ঢেকুর তুলবো?

প্রিয় কবি, প্রিয় অসময়ের পয়গামবাহক প্রফেট, আমাদের এই কাপুরুষত্বকে দিব্যচোখে দেখেই আপনি কি লিখতে সাহস করেছিলেন,
সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে? কুৎসিত পশুর দল যখন খামচে ধরে আমার ভাইয়ের দীঘল পিঠ, তখনও আমরা সে কোন্ রাজকুমারের আশায় বসে থাকি, যে এসে আমাদের দুঃখিনী মায়ের ভিজে যাওয়া চোখ মুছে দেবে?


--
এই কষ্টের প্রেক্ষাপটে লেখা

রবিবার, জুন ২২, ২০০৮

বৃষ্টি ও নির্বাসনের চিরাচরিত গল্প

আজ সারাদিন বৃষ্টিতে ঘরে আটকা পড়ে আছি। আটকা পড়ে আছি - বলছি এইজন্যে যে খুব একটা দরকার না থাকলে এই বৃষ্টিতে বোকারাই বাড়ি থেকে বেরোয়। এখনো ঝরে যাচ্ছে অবিরাম। রাত একটু বেশি হলে দৌড়ে আসি আধাঘন্টা ময়লা নদীটার পাশ দিয়ে। গুগল ম্যাপে খুঁজে দেখি সেই নদী ধরে চার-পাঁচ ঘন্টা দৌড়ে গেলে নদীর সাথে সাগরে মেলার জায়গাটায় পৌঁছুনো যাবে।
দৌড়ে এসে শাওয়ার নিয়ে শুয়ে পড়ি। রোজকার রুটিন। বৃষ্টির জন্যে আজ সেটাও করার উপায় নেই। মাঝে বেরিয়েছিলুম ময়লা কাপড় কয়েন ড্রায়ার এ দেবার জন্য। ওয়াশিং মেশিন থেকে বের করে ঘরে শুকোতে দিলেও চলে, কিন্তু বাতাসে পানির ভাগ বেশি, তাই কিছু কয়েন খরচ করা।

টিভিটা বেজে যাচ্ছে অবিরাম। বকর বকর করে যাচ্ছে নিজের ইচ্ছেমতোন।
ছোটবেলায় আমরা যখন গ্রামে থাকতাম, দূরে চাকুরি করা আমার বাবা ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসতো, বাবার সাথে থাকতো একটা রেডিও সবসময়, সম্ভবত সনি কোম্পানির বানানো। সেই রেডিওটায় শোনা যেতো রংপুর থেকে রিলে করে শোনানো ঢাকার অনুষ্ঠান অথবা শিলিগুড়ি বা কলকাতা থেকে প্রচারিত বাংলা খবর আর গান।
জলচৌকি পেতে আমার বাবা বসে থাকতো সন্ধ্যায়, জলচৌকিতে আরো থাকতো মুড়ি-কাঠাঁল অথবা আম।
সেই রেডিওটা বেজে যেতো বোকার মতোন। এইরকম করে।

টিভির শব্দে কান যায় না। ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকি। অনেকটা সময় পেরিয়ে এলাম এইভাবে ছাদের দিকে তাকিয়ে। ছেলেবেলায় খাটের নিচে ঢুকে শুয়ে গল্পের বই পড়তাম, তিন গোয়েন্দা, সুনীল অথবা সমরেশ। ছাদটা অনেক কাছাকাছি ছিলো। এখন যে ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে সেটা বড্ড দূরে। ছেলেবেলায় বাবা ছিলো, একটা পরিবার ছিলো। এখনো সেইসব আছে, সুতোছেঁড়া, বাবা আছেন, পরিবার থেকেও নেই। দূরত্ব অনেক বেশি। অনেকদিন নিজেই নিজের মাথার ছাদ। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এক টাকা না থাকলেও কোন চিন্তা নেই।

সপ্তাহ পাঁচদিন স্কুলে আসি, থিসিস এর কাজ করি, সেমিনার চালাই, জুনিয়রদের বকাবকি করি, নিজে আবার নিজের অ্যাডভাইজরের ঝাড়ি খাই। বসে বসে য়্যুটিউবে পুরনো দিনের গান খুঁজে বের করি। পার্টটাইমের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারকে রেগেমেগে মেইল করি, তোমার কাজ আমি করি না, তোমার ডেটাবেজ স্কিমা কে তৈরি করসে, মাথা নাই মুণ্ডু নাই তার। অনেকদিন কোন ভালো লেখাও লিখতে পারি না। কয়েকটা লেখা পড়ে আছে গুগলডকে, বের হবে না কোনদিনই মনে হয়। সৃষ্টিশীল চিন্তা করার অংশটুকু সম্পূর্ণ অচল হবার পথে।
রাত বারোটায় বাড়ি ফিরি। কেটে যায় দিন, কেটে যায় পথ। নিজে থেমে গেলেও দিনগুলো যাবে।
যেন ছুটে যায় ট্রেন, হুইসেল দিয়ে। আমি থেমে থাকলেও ট্রেনের কিছু যায় আসে না। ট্রেনের সাথে তাল রেখে আমাকেও দৌড়ুতে হয়।

একটা লুপে পড়ে আছি মনে হয় মাঝে মাঝে। রোজ এক দোকানের এক স্যান্ডউইচ খাই, একটা স্যান্ডউইচ আর একটা অ্যাপল পাই, গুণে গুণে একই দাম দিই, ৪৪১ ইয়েন। রোজ এক গান শুনি, লতা মুঙ্গেশকর অথবা নুসরাত ফতেহ আলী খান, রোজ ভাবি - আইপডের গানগুলো বদলাতে হবে, করা আর হয়ে ওঠে না। রোজ একপথে একই জায়গায় পায়ের ছাপ রেখে যাই। রোজ এক জায়গায় একই পথচলতি মানুষের সাথে দেখা হয়ে যায়, হেসে ফেলি।

উড়ে যায় পুরো সপ্তাহটা এইভাবে।
আর এইরকম বৃষ্টিবন্দী দিনে সারা সপ্তাহ গলায় চেপে রাখা ক্কান্নাটুকু বেরিয়ে আসতে চায় । ঈশ্বরের সাথে এমন কোন বন্ধুতা নেই যে, তাকে ডাকবো প্রাণভরে। তবু মাঝে মাঝে তার সাথেও বন্ধুতা করতে ইচ্ছে করে । ভাবি, বলি,
এতকাল নদীকূলে
যাহা লয়ে ছিনু ভুলে
সকলি দিলাম তুলে
থরে বিথরে---
এখন আমারে লহো করুণা ক'রে


*জুন ২২, রোববার*, ছবি কৃতজ্ঞতা, (সিসিএল এর আওতায় ব্যবহার)

বৃহস্পতিবার, মে ২৯, ২০০৮

আমি কখনো মানুষ হতে চাই নি

আমি কখনো মানুষ হতে চাই নি। আমি পাখি হতে পারতাম অথবা ফুল কিংবা সূর্যমূখী ফুলের গাছ। সবুজ পাতায় আর ডালপালায় ছড়ানো কোন মহাকায় বৃক্ষও হতে পারতাম হয়তোবা। মাছ হয়ে সাঁতরে বেড়ানোর সুযোগ দিলেও হয়তো আমি আক্ষেপ করতাম না এভাবে।
আমি বুঝে গেছি, মানুষ হওয়ায় বড্ড কষ্ট।

দুর্ভাগ্যবশতঃ মানুষ হয়ে জন্ম নিয়ে ফেলায় সামান্যতম গর্ববোধ হয় না আমার। মস্তিষ্কে ভাবনা নামের অনুভূতির বিকাশ হওয়ার বয়েস থেকে আমি দ্বিতীয় কোন মানুষের যাপিত জীবনের প্রতি ঈর্ষাবোধ করি নি। পরিপাটি পোশাকের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মানুষকে আমার ভীষণ অশ্লীল বোধ হয় সবসময়।

মানুষ হয়ে গেছি বলেই ভেজা মেঘেদের দেখে আমার কক্ষণো প্রেমভাব জেগে ওঠে না। ক্ষুদ্র মাছরাঙা পাখিদের দেখে আমি ঈর্ষাবোধ করি, পুরো পৃথিবী ভিজে যাবার পরেও একটা গা ঝাড়া দিলেই যার গায়ের সমস্ত ভেজা বৃষ্টি হেসে ওঠে খলখল করে। বৃষ্টির সাথে এইরকম ঈর্ষনীয় সম্পর্ক আমার কাছে অদ্ভূত মনে হয় সবসময়।

অথবা আমি শালিক হতে পারতাম, শীতের হালকা রোদে আধা-ঘোমটা নতুন বউয়ের ফেলে দেয়া মুড়ি বা চাল-ভাজার লোভে লাফিয়ে পড়তাম গেরস্থের উঠোনে। কিন্তু, আমি লজ্জ্বা মাখানো মাছরাঙা হতে পারি নি, শালিকও নয়।

মানুষ হিসেবে যাপিত জীবন আমার কাছে দুঃস্বপ্ন আর অনাকর্ষণীয় বোধ হয়।
শালিক অথবা মাছরাঙা কিংবা আমার রোজকার হাঁটার পথের মহাকায় বৃক্ষটি যন্ত্রণাময় স্মৃতি লালন করে না।
স্বপ্নময় শৈশবের নস্টালজিয়া অথবা সম্ভাবনাময় সময়ের ব্যর্থতা তাদেরকে পোড়ায় না। মানুষ হিসেবে প্রতিনিয়তই নানান যন্ত্রণায় পুড়তে থাকার নিয়তি আমার কাছে অসহনীয় মনে হয়।

বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৭, ২০০৮

কয়েকটা দিন : বিচ্ছিন্ন সুরে ছন্দহীন গান

বদ্ধ ঘরের কাঁচের ওপারে বৃষ্টি
একটা বড় ঘরে বসে আছি, এক দঙ্গল প্রায় বিরক্তিকর মানুষের মাঝে। একেবারে সামনে একজন বক্তা। PON, GPON কীসব ভারী ভারী শব্দ বেরিয়ে আসছে বক্তার মুখ থেকে, যেগুলোর কোনটাই আমি ঠিকমতো বুঝি না। মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে। ল্যাবের সারাদিনের একটা সেমিনার ইভেন্ট, সকালে আর দুপুরের সেশনে চেয়ার এর কাজ করে বিকেলে ঘরের এক কোনায় বসে ওয়াই-ফাই এর বদৌলতে সচলায়তন উপভোগ করছি। ঘরের এক ধারে কাঁচের দেয়াল, তার ওপারে কালো আকাশ, ভেজা গাছ আর ছাতার নিচে চলন্ত মানুষ।

বদ্ধ ঘরে হালকা গরম। বাইরে ভেজা বৃষ্টি।
বাইরে বেরুতে ইচ্ছে করছে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা এই গুরুগম্ভীর ঘর ছেড়ে।
বাইরে নতুন বসন্তের বৃষ্টি যেন আমায় ডাকে। অনেক অনেকদিন পর ইচ্ছে করে, ছুঁয়ে যাই অপ্রিয় ঠান্ডা বর্ষণকে খালি গায়ে।

এপ্রিল: মনপাখি ওড়ে কোন আকাশে
এপ্রিল একটা বিচ্ছিরি মাস আমার জীবনে। মন বসাতে পারি না কিছুতেই। বছর ছয়েক আগের এপ্রিলে আমি দেশ ছেড়ে এসেছিলাম। আমার নিজের ব্লগে ২০০৫ আর ২০০৬ এ কোন পোস্ট নেই। অবশ্য ২০০৬ এ থাকবার কথাও নয়। এপ্রিল-মে তে বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে ছিলাম। সে গল্প আমি কোথাও বলি না যদিও।
এপ্রিল আর আমার মাঝে কেমন যেন অদ্ভুতুড়ে শত্রুতা আছে। আমি ব্যক্তিগত জীবনে হালকা হতাশাবাদী হলেও মোটামুটি পরিশ্রমী, কিন্তু এপ্রিলে আমি অসুস্থ পাখির মতো ঝিমুতে থাকি কোন কাজকর্ম ছাড়া।

আনিসুল হক এবং সামরিক শাসন
হঠা‍‌‌ত লেখক আনিসুল হককে পাওয়া গেল টোকিওতে। বাঙালিদের বৈশাখি আয়োজনে অতিথি হয়ে এসেছেন। দুর্ঘটনাচক্রে খুব ছোট পরিসরে তার সাথে এক টেবিলে ভাত খাওয়ার সুযোগ (ভদ্রলোকেরা "ডিনার" বলে বোধহয়) পেয়েছিলাম।
জিজ্ঞেস করলাম "প্রথম আলো" নামের আমার একসময়ের পছন্দের দৈনিকটির সামরিক সরকার পোষণের কারণ নিয়ে। আমার প্রশ্নটা খুব মানানসই বোধহয় হয়নি আয়োজন আর সময়ের সাথে। (আমি ইদানিং এরকম হয়ে যাচ্ছি, খুব কড়া প্রশ্ন করি সব মানুষকে)

তবে তিনি বিব্রত হন নি। মতিউর-আনাম চাইছেন, পরিবর্তন আসুক, তাই তারা সামরিক সরকারের সমর্থনের স্ট্যান্স থেকে সরে আসছেন না। তবে আনিসুল হক তাদের সাথে একমত নন। আর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আকবর আলী খানের রেফারেন্স দিয়ে দৃষ্টিপাতের বাংলা ব্লগে(সম্ভবত প্রথম আলো তেও প্রকাশিত) যেমনটা লিখেছেন তেমনটাই শোনা গেলো সরাসরি তার মুখে। বললেন, "অর্থনৈতিক সমস্যার কোনো পুলিশি সমাধান নেই"।

আমি ভাতের বদলে আলু খেতে চাই না
আমি ভাত খেতে চাই।
তাই আমি আশায় থাকি কবে বোরো ফলবে।
এএফপি খবর দিচ্ছে, বোরোর বাম্পার ফলন হচ্ছে এবার। আর সেই ভয়ে চাল মজুত করে রেখেছিলেন যে ব্যবসায়ীরা, তারা বাজারে ছেড়ে দিচ্ছেন চাল।
রিপোর্টটিতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে।

আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে বোরোর বাম্পার ফলনের এই সংবাদ "চুলায় পানি সিদ্ধ করতে দিয়ে বাচ্চাকে ভাত হচ্ছে ভাত হচ্ছে বলে মা য়ের ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করা" র মতো কোন ব্যাপার নয়।
আমি আশায় বুক বেঁধে বসে আছি, এই রিপোর্টটি সত্য।
আমি ভাত খেতে চাই, আলু নয়।

এপ্রিল ২০, ২০০৮
অনলাইন রাইটার্স কমিউনিটি সচলায়তনে প্রকাশিত

বুধবার, এপ্রিল ০৯, ২০০৮

অসুখের গল্প, হালকা স্বস্তি আর চানাচুর পাঠক

সুখের পাখি, মরা পাখি, তোকে খুঁজি না
জ্বর দুদিন ধরে, সারাদিন নাক দিয়ে পানি পড়ে টপটপ করে, টিস্যু নষ্ট করি সারাদিন। সেই সাথে আছে দুইএক মিনিট পরপর হাঁচি-কাশি।
অসুখে পড়ে থাকলে যে জীবনের প্রতিদিনকার রুটিন বদলে ফেলবো, তা নয় অবশ্য। ঠিকই সকালে উঠি, ল্যাবে যাই, খুব একটা কিছু কাজ করতে ইচ্ছে করে না অবশ্য। সন্ধ্যেয় বাড়িতে ফিরে আসি, হালকা রান্না করি, খাই।

আজ খুব ভাত খেতে ইচ্ছে করছিলো, তাই একেবারে ডাল রেঁধে বেগুন ভাজি করে গরম ডাল-ভাতে কনুই ডুবিয়ে পেট ভরে ভাত খেয়ে নিলাম। মাঝেমাঝেই এরকম হয়, দু-তিনদিন পর হঠা‌‌ৎ ভাত খাওয়ার ইচ্ছেটা খুব পোড়ায়, মনে হতে থাকে শরীরের কোথায় যেন ছোটখাটো একটা ভেতো বাঙালি লুকিয়ে থাকে, মাঝেমাঝেই সেটা চাষার মতো জেগে ওঠে।

শরীর খারাপ হলে আরেকটা বড় ঝামেলা হয় ঘুম নিয়ে। রাত করে ঘুমোনো অভ্যাস, তাই বেশি তাত্তাড়ি শুয়ে পড়লে ঘুম ভেঙে যায় বেশ কয়েকবার। মাঝরাতে উঠে পড়ি, টিভি ছেড়ে দিই। রান্নার ছুরি, ফ্রাইং প্যান, হাড়িপাতিল, হাইস্পেক এর ভ্যাকুয়াম ক্লীনার, মেয়েদের কাপড়চোপড় বেচার জন্যে রাত করে বসে থাকেন টেলিশপিং এর খালা আর চাচুরা। বিনোদন হিসেবে নিলে এইসব অনুষ্ঠানও অনেক সময় বেশ মজার বোধ হতে থাকে। লোহা কাটাকুটি করে টুকরো টুকরো বানিয়ে ভ্যাকুয়াম ক্লীনার দিয়ে গেলানোর পরে পণ্যের গুণ ব্যাখ্যা করে যাওয়া লোকটিকে দেখে মনে হয়, এই ভাঁড়টা হাসির অনুষ্ঠান করলে আরো ভালো আয় করতে পারতো সম্ভবত।

এমনি করে মাঝরাতে উঠে আজ নিজের গল্প লিখতে বসলাম অনেকদিন পর। বাইরে বৃষ্টি। সন্ধ্যে থেকে ঘুমিয়ে ক্লান্ত। ঘুমটা কাটানোর জন্যে কিছু একটা টিভি প্রোগ্রামে মন বসাতে চাইলাম। মাঝরাতে দেখানো আম্রিকান দ্য হিলস নামের টিভি সিরিয়ালটিতে কথায় কথায় চুমু খাওয়ার দৃশ্য বিরক্তিকর ঠেকে, তাই NHK তে জীবন্ত জীবাশ্ম মাছদের উপরে শিক্ষামূলক ডকুমেন্টরি দেখে মাথাটা পরিষ্কার করার চেষ্টা করি।

সুড়ঙ্গ শেষের আলো, হালকা স্বস্তি
চেরি ফুটে ঝরে গেছে গত দুদিনের ঝড়ো বৃষ্টিতে। ইন্দোনেশিয়ার আশপাশের প্রশান্ত মহাসাগরে লা-নিনা প্রপঞ্চের প্রভাবে নাকি এ বৃষ্টি, প্রবল বাতাস আর ঝড়। সন্ধ্যেতে এক আবহাওয়াবিদকে দেখলাম, বেশ উত্তেজিত স্বরে বর্ণনার চেষ্টা করছেন।

গত মাস তিনেক বেশ ভালো রকম মানসিক অস্বস্তির উপরে ছিলাম। পড়াশুনা শেষের এখনো বছর খানেক বাকি আছে যদিও, প্রথাগত কারণে গ্রাজুয়েটদের জন্যে নিয়োগের মৌসুম এই বসন্তেই পড়ে। তাই দৌড়ুচ্ছিলাম কর্পোরেটের দরজায় গলায় দড়ি বেঁধে অনেকদিন। শেষ পর্যন্ত ইউরোপভিত্তিক এক বিনিয়োগ ও কর্পোরেট ব্যাংকে দস্তখত করেছি আগামী বছর এপ্রিল থেকে দাসত্ব করবো বলে।

সচলায়তনে ভারী লেখা, হালকা পাঠক
সচলায়তনে হালকা লেখা লিখতে কি সবাই ভয় পান? ইদানিং বেশ ভারী ভারী লেখা আর সাহিত্য বেশি চোখে পড়ে। আমার মতো হালকা পাঠকেরা খুব কষ্টে পড়ে যায়। মাথার আয়তন আমার খুব ছোট, তিনটে গল্প পড়লে একটা মিলার গান শুনতে ইচ্ছা করে। তাই আরেকটা উইন্ডোতে ইউটিউবে মিলা কে খুলে রাখি। সচলায়তন পড়তে পড়তে মিলার গান শুনি।
(আমি নিজেই অনেকদিন অনিয়মিত ছিলাম। তাই মায়ের কাছে মামাবাড়ির গল্প হয়ে গেলে ক্ষমা প্রার্থনা করি।)
হালকা চানাচুর ধরনের লেখা সচলায়তনে পোস্টের ব্যাপারে কোন বিধিনিষেধ আছে বলে আমার মনে পড়ছে না।
কাজেই, যারা ভালো চানাচুর-মুড়ি মাখাতে পারেন, তারা আমাদের বঞ্চিত করবেন না আশা করি।


--
NHK জাপানের রাষ্ট্রীয় প্রচার সংস্থা
দ্য হিলস, The Hills MTVর রিয়ালিটি টিভি সিরিজ
এই পোস্ট অনলাইন রাইটার্স কম্যুনিটি সচলায়তনে প্রকাশিত

শুক্রবার, মার্চ ২১, ২০০৮

অচেনা গান, চেনা শব্দ, টুকরো নীল কষ্ট

*স্মৃতিপোকাদের সাথে বসবাস*
অনেকদিন লিখিনা। লিখতে ইচ্ছে করেনা।
মাঝেমাঝে এইরকম বন্ধ্যা সময় আসে।
মাঝেমাঝে এইরকম অনুভূতিহীনতায় আক্রান্ত হই। আমার অনুভূতিরা চুরি হয়ে যায়, আমার মস্তিষ্ক কুরে কুরে খেয়ে ফেলে অনর্থক অহেতুক সব বাস্তবতা এবং ক্লান্তি। অবিন্যস্ততা যার জীবনের অংশ, তার মস্তিষ্কে বার্ধক্যের সংকেত দিয়ে যায় শরীর অথবা মন। উপেক্ষা করবার মতোন সাহস জোটে না। এই অদ্ভূত সময়ে ছেলেবেলার স্মৃতিপোকারা এসে আমার সাথে লুকোচুরি খেলতে বসে।

পুরো ছেলেবেলা ভেবে গেছি, আরেকটু বড় হয়ে নিই, ফেলে আসা শৈশবের করতোয়া নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আবার হিমালয় দেখবো একদিন। তারপর বড় হয়ে গেছি, দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে, আর হাড়ে-চর্বিতে, শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে চর্বির ভাগটাই বেশি হয়তো। ফেরা হয়ে ওঠেনি, শৈশবে চিনিকলের গাড়ির পেছন থেকে আখ চুরি করে খাওয়ার স্মৃতিমাখানো সেই মফস্বলে।
এইরকম সময়গুলোতে আমার রুপমের কথা মনে পড়ে যায় ভীষণ। অথবা সূচী। কিন্তু আজ রুপমের মুখটা মনে করতে পারছি না। আর সূচীরটা, করতে চাইছি না। ঘুমোতে থাকা কষ্টকে খুঁড়ে জাগাবার চেষ্টা করতে চাইবে কে?

রুপম আর আমি খুব ভালো বন্ধু ছিলাম। আমার দুষ্টুমির জন্যে আমাকে নীলডাউন করিয়ে রাখা হলে, কিছু একটা দুষ্টুমি করে ও আমার সাথে দাড়িয়ে পড়তো। শাস্তির কাতারে। আমি নির্লজ্জ্বের মতোন ওই স্কুলটা ছেড়ে চলে এসেছিলাম, অন্য একটা ভালো স্কুলে পড়ার জন্যে। রুপমকে কিছুই জানাইনি। আমাদের দেখা হয়েছিলো অনেক বছর পরে, রুপম ওর ছোট বোনকে আমাদের কোচিং সেন্টারে ভর্তি করাতে এসেছিলো। সেই শেষ।
আজ অনেকদিন পর রুপমের সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করছে? কেমন আছিস রে?

অনেক অনেক দিন পর, আজ এক পুরনো বন্ধুর মেইল পেলাম, আতাউর। স্কুলের হোস্টেলে ওর রুমে গিয়ে আমি পড়ে থাকতাম বহুদিন। স্কুল ছাড়বার পর আমাদের আর কখনো দেখা হয় নি।
পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে। অথবা আমাদেরই হেঁটে চলা পরিমন্ডলের পরিধি বাড়ছে।

*অচেনা মানুষের ভালোবাসা*
কাল সকালে আমার বাসার তিনতলা থেকে নেমে পোস্টে একটা উঁকি মেরে দেখি, একটা পার্সেল এসেছে।
ঢাকা থেকে। বাংলাদেশ থেকে। আধা যুগ হয়ে গেলো, দেশ ছেড়েছি। দেশ থেকে চিঠি, পার্সেল এইসব এখন বছরে একবারও ঘটে না এরকম বিরল ব্যাপার হয়ে গেছে আমার জীবনে।

খুলে দেখি, আমার প্রিয় দুজন লেখকের দুটো বই। এবারের বইমেলায় বের হওয়া।
নজমুল আলবাব এর "বউ বাটা বলসাবান" আর আরিফ জেবতিক এর "তাকে ডেকেছিল ধূলিমাখা চাঁদ"
দুটোই একেবারে লেখকদের অটোগ্রাফসহ। আলবাব ভাই লিখেছেন, প্রিয় মানুষ সৌরভ কে।
এই মানুষটা আর প্রিয় বলবার মতোন লোক পেলোনা।

রায়হান ভাই পাঠিয়েছেন বইদুটো। এই মানুষটাকে আমি কখনো দেখিনি, ভার্চুয়াল পরিচয়। খুব ভালো লাগলো। খুব। শুধু বলি, থ্যাংকস। এইসব ভালোবাসা, এইসব টুকরো অনুভূতি, আমাকে ঋণী করে দেয়।

*ঘরে ফেরার তাড়া*
ঘরে ফেরার গান এখন আর কাঁদায় না। যার ঘর নেই, তার ঘরে ফেরার তাড়া নেই - উপলব্ধিটা খুব দারুণ মনে হয় মাঝেমাঝে। মানুষের সাথে অদৃশ্য সূতোয় যেসব বন্ধন, সেগুলো মাঝেমাঝে ভীষণ ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। আপনি হয়তো বলে বসতে পারেন, অচেনা মানুষের ভালোবাসাও যাকে ঋণী করে, সে কীভাবে ঘরে ফেরার তাড়া এড়িয়ে চলে।
উত্তরটা আমিও খুঁজছি।


[প্রিয় পাঠক, যিনি কষ্ট করে এইসব নীল লেখা পড়ছেন, আপাতত ঘরে বসে না থেকে বাইরে একটা চক্কর দিয়ে আসুন, এই অন্ধকার মানুষটির অন্য সব নীল লেখার মতো এটিও ভুলে যান, এই প্রত্যাশা করি]

বুধবার, ফেব্রুয়ারী ১৩, ২০০৮

দহনগল্পের আরেকটি পাতা

১.
হঠাৎ করে ঘোড়া হয়ে গেছি।
রোববার সকালে ওভেনে রুটি ঢুকিয়ে দিয়ে ডিম ভাজতে যাবো, সেই মুহূর্তে বুঝতে পারলাম, কী যেন পারছি না। কোন একটা নড়াচড়া পারছি না, অনেকক্ষণ পরে খেয়াল হলো, কথা শুনছে না ধড়ের উপরের একমাত্র মাথা। ডিম ততক্ষণে হাত থেকে পড়ে গেছে মেঝেতে, মুখ দিয়ে অন্যসময়ের মতো "শীট..ট" বলে উঠে নিজের মনেই হেসে ফেলেছি। মাথা নড়াচড়া করতে পারছি না, সেই অবস্থায় এই ময়লা পরিস্কার করতে হবে সেই ভেবে।

পরে যা বুঝলাম, শুধু সামনে তাকাতে পারি, ধড়ের উপরে মাথাটা ডানে-বামে করতে পারিনা। উপরে-নীচেও নয়। শুয়ে পড়লাম চুলা নিভিয়ে দিয়ে। বিছানা থেকে ওঠার সময় মাথাটাকে ভারী মনে হতে থাকে। গলার পিছনের মাংসপেশীগুলো বিদ্রোহ করে বসে। বাম হাতটায় সামান্য অবশ অনুভূতিও। নিজের ধারণ করা শরীরের বিদ্রোহের সব অনুভূতির সে এক অপূর্ব সমন্বয়।

কিন্তু, হঠাৎ করে মনে হচ্ছে, এই অনুভূতিগুলো খুব পুরনো, বয়েস যখন চার-পাঁচ, তখনকার স্মৃতি যেনো আবার চক্র ঘুরে ফিরে এসেছে।
সেই ছোটবেলায়, বাবার কোলে বসে, চারপাশে অনেক মুখ। ডাক্তার বলছে, বাবা, মাথা বামে-ডানে করো তো, আমি বামে-ডানে করি, উপরে নিচে করো তো, আমি উপরে-নিচে মাথাটাকে দুলিয়ে যাই। আমার মাথায় ঢোকে না, সমস্যাটা কোথায়। সবাই চারপাশে কেনো?
সেবার মেনিনজাইটিস হয়েছিলো। তবে এবার?
ঈশ্বরকে মাঝেমাঝে খুব মজার রম্যনাট্যকার মনে হয়।

২.
বাইরে ভীষন বাতাস, এই ঠান্ডায়। সারাটা দিন হালকা বৃষ্টি, বৃষ্টি থামবার পরে এখন আবার শুরু হয়েছে বাতাস। কাল রাতে এক ঝুড়ি কাপড় ধুয়ে ছাদে নেড়ে দিয়েছিলাম। সকালে উঠে আর মনে ছিল না, বৃষ্টিভেজা দিন পার করে এতক্ষণে খেয়াল হলো। যাই, কাপড়গুলো আবার মেশিনে দিয়ে আবার শুকোতে হবে।

৩.
আজ একটা লম্বা দিন গেলো। উঠেছি সাতসকালে, দুদিন নিজের বানানো চিকিৎসায় ব্যথা কমছে বলেই মনে হলো। চিকিৎসা বলতে রোক্সোনিন, একগাদা পড়ে ছিলো বাসায়, পুরনো অসুখের রেশ হিসেবে, তার সদ্ব্যবহার করলাম। আমাদের বাংলাদেশের ক্লোফেনাক ধরনের ওষুধ। আর কুলিং প্যাড।
ডাক্তারের কাছে যাবো কি যাবো না, সেই ব্যাপার নিয়ে ভাবতে গিয়ে ঘুমিয়ে নিলাম আরো আধাঘন্টা।
হাসপাতালে গেলে বসে থাকতে হবে নির্ঘাত পুরো সকাল। নাকউঁচু হাসপাতালের এই এক বড় সমস্যা। সেই বিরক্তির কাছে এইসব ব্যথা আর ঘোড়ার মতো হয়ে যাওয়া কোন ব্যাপার ই নাহ।
গেলাম তারপরও। নিজের সবসময়ের ডাক্তারকে আজকে পাওয়া যাবেনা, জেনেও।

ভাগ্য ভালো, দুবছর আগে এই হাসপাতালে দুই সপ্তাহ কাটানোর সময় যে ডাক্তারটি আমার দায়িত্বে ছিলেন, তাকে পাওয়া গেলো। দাঁত বের করে বললেন, পড়াশুনার কী অবস্থা।
আমি দাঁত কিড়মিড় করে বললাম, পড়াশুনা গোল্লায় যাক, আগে বলেন, ঘোড়া হয়ে গেলাম ক্যান?
এক ঘন্টা পরে একগাদা রেঁন্টগেন ছবি হাতে ধরে তাকে বেশ বিব্রতই মনে হলো। তারপর, চৌম্বকঅনুনাদ পদ্ধতির ছবি তোলার একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে সবসময়ের ডাক্তারের সময়ে গোল্লা মেরে দিলেন। আবার ঢুকতে হবে সেই চুম্বক সুড়ঙ্গে, ভাবতেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।

ফলাফল লিখতে ইচ্ছে করছে না।
হুমম, বিপদেরা আর ছাড়ে না মোরে। আপাতত, ডাক্তার আমার চিকিৎসাই আমাকে ধরিয়ে দিলো, রোক্সোনিন আর কুলিং প্যাড। হ্যান্ডল দ্য পেইন ফার্স্ট, তারপর অন্য কথা।

৪.
ছোটবেলায় আমরা গ্রামে থাকতাম, আমার ছয় বছর বয়েস পর্যন্ত। আমাদের বাড়ির সামনে গোরস্তান, আরেকটু পেরোলেই বড়সড় জঙ্গল। বাড়িতে এক দঙ্গল ভাই-বোন, বাবা নেই, চাকুরিতে দূরে একা, এপারে মা-কে একা সামলাতে হতো আধডজন বাচ্চা-কাচ্চা। তাও ভালো, নানা বাড়িটা ছিলো একটু দূরেই।

আমি জ্ঞান হবার পরে বেড়াতে যাওয়া ছাড়া আমাদের বাড়িটায় খুব বেশি থাকিনি। সেই বাড়ি ছাড়া আমাদের থাকবার আর কোন জায়গা নেই অবশ্য। খুব বেশি স্মৃতিও নেই সেই জায়গাটা ঘিরে। কিন্তু, সেইখানেই আমার শেকড়।
কোথাকার আমি, আর কোথায় পড়ে থাকি এই স্ট্রেসভরা ইটপাথরের জঙ্গলে।

কিন্তু, তবু কেন যেন সেই জায়গাটাই মনে পড়ে আমার, এইরকম সব দিনের শেষে, এইসব গান শুনলে।
যে গানটা এখন বাজছে আমার ঘরে।

"তুই ফেলে এসেছিস কারে, মন, মনরে আমার?"

শুক্রবার, জানুয়ারী ২৫, ২০০৮

শুকনো ঠান্ডা দিনের আরেকটি বিক্ষিপ্ত কড়চা

১.
কাল রাত ২টা পার করে, আমার সাথে ল্যাবে থাকা সহপাঠীটির সাথে যখন বাড়ি ফেরার জন্যে পা বাড়াই, খেয়াল করি, হাত-পা জমে যাচ্ছে আর অবিন্যস্ত চুলগুলো উড়ে যাচ্ছে বাতাসে। শূন্য বা মাইনাস দুই-তিন হয়তো তাপমাত্রা হিসেবে সারা শীত বরফ জমে থাকা কোন জায়গার জন্যে আহামরি গোছের ব্যাপার নয়, কিন্তু, টোকিওর মতো গরম-ঠান্ডা মিলিয়ে মোটামুটি মাঝারি জলবায়ুর শহরের জন্যে খুব ভয়াবহ ঠান্ডা সেটা। সাথে যোগ হয়েছে গায়ে কেটে বসে যাওয়া আর্দ্রতাহীন বাতাস।

জীবনের চারভাগের একভাগ পার করে ফেলা এই শহরের আবহাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে পড়া নিজের কাছেও ভয়ানক শীত বোধ হতে থাকে। সাথে থাকা সহপাঠীটি হঠাৎ আবিষ্কার করে, সকালের দিকে হয়ে যাওয়া বৃষ্টি তে রাস্তায় জমে থাকা পানি শক্ত বরফ হয়ে গেছে। দুজনেই কেন যেনো ব্যাপারটি আবিষ্কার করে হোহো করে হেসে উঠি। সারাদিনে জমে থাকা ক্লান্তিটুকু অল্প হলেও মুছে যায়।

২.
ইদানিংকালে লেখা হয়না কোথাও। এমন কিছু ব্যস্ত নই যে, লেখার জন্যে সময় হয় না। তবে কেনো? - উত্তরটা দেবো। আসলে মানসিক জটিলতার খুব অদ্ভূত মিশ্র এক অনুভূতিতে আক্রান্ত এই সময়ে, কিছু লিখতে গেলে সেইটে খুব বড় হয়ে দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা। খুব চেষ্টা করি নিজের অনুভূতিটুকুর সবটুকুই তুলে আনি, নিজের যেমন ইচ্ছে লেখার এই ব্লগখাতায়।
কিন্তু, সেটা কি আর সম্ভব? অথবা উচিত?

কেন বেঁচে আছি
- সেই প্রশ্নের সাথে নিজের বোঝাপড়ার যুদ্ধ নিয়ে যে জীবন, সে জীবনের অন্ধকারময় গল্প লিখে আপনি, সম্মানিত পাঠকের সময় নষ্ট করতে চাই না।
আর আমি গল্প লিখতে পারিনা, কিংবা যুক্তি আর নতুন দর্শনে পূর্ণ কোন ভাবনাকে ছবিতে প্রকাশ করা আমার হয়ে ওঠেনা।

সেইসব মিলিয়েই ইদানিংকালে অনিয়মিত ব্লগ লেখায়। তবে আর কিছু করতে না পারি, অন্য সচলদের লেখা পড়ায় আছি।

৩.
আজকাল ফোন করা যায় এরকম বন্ধুর সংখ্যা কমে গেছে। কিংবা অন্যভাবে বললে আমিই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি সবকিছুর থেকে। আগে সবাইকে ফোন করতাম। এখন কথা ফুরিয়ে গেছে। এখন বন্ধুরা সংসারী, তাদের মাথায় বাজারের দামের চিন্তাটা খুব বড়ো। তাই কথা এগোয়না।
পৌনপুনিক জীবনে কাছাকাছি প্রিয়জনের সংখ্যা কমছে। দিনদিন শেকড়গুলো আলগা হয়ে যাচ্ছে অথবা যাচ্ছে ছিঁড়ে। নিজের এই ছন্নছাড়া জীবনে আধুনিক অসহ্য একাকিত্বের দহন হাসিমুখে গ্রহণ করার সামর্থ্য বাড়ছে বোধহয়। ভালোইতো!

৪.
বিশ্ব অর্থনীতি বেশ লেজেগোবড়ে। অর্থনীতি নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো বুঝবুদ্ধি বা অবস্থা কোনকালেই ছিলোনা। কিন্তু যখন নিউজে শিরোনাম হয়, টোকিও র শেয়ারবাজার নিক্কেই একদিনেই ৫০০ পয়েন্ট পড়ে গেছে, তখন একটু খবর নেড়েচেড়ে দেখতেই তো হয়। জাপানের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ বলতে হবে।
কারণ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে জাপান এখন পরিত্যক্ত এক বাজার, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মন্দায়, এমনিতেই ধুঁকে চলা রপ্তানিনির্ভর জাপানের আগামি সময়গুলো কেমন হবে - সে প্রশ্নে কেউই আশাব্যঞ্জক উত্তর দিতে পারছেন না।

এই ব্যাপারটা বেশ মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে ইদানিং। অন্তত আমার কাছে এই সময়ে, যখন পড়াশোনা শেষ করার আগে একটা চাকুরি খুঁজে বের করায় সময় দিতে হচ্ছে অনেক।

আর গ্যাসোলিনের দাম বাড়া কিংবা সেইসব ঘটনাচক্রের প্রভাব বেশ প্রকাশ্যই দেখা যাচ্ছে এখনই। বিদ্যুত ও গ্যাসের সর্বনিম্ন চার্জ ১৫০ ইয়েনের (প্রায় ১.৫ ডলারের সমতুল্য) মতো বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সেবাপ্রদানকারী সংস্থাগুলো। সর্বনিম্ন চার্জ ২৫০০ ইয়েনের কাছে ১৫০ ইয়েন হয়তোবা খুব বেশি কিছু নয়, তবুও মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারটা অর্থবহ। বাজারে, পানীয় দুধের দামও বেড়েছে কিছুটা। আর যেসব জিনিষের দাম ওঠানামা করে, সেগুলো তো বাড়ার দিকেই আছে।
মন্দা অর্থনীতিতে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে গেলে সেটা অবশ্যই খারাপ লক্ষণ।

৫.
অর্থনীতি যেদিকে যায়, যাক। নিজে খেয়েপরে বেঁচে থাকলেই হলো।
জীবন চলুক কোনওভাবে।
কেন বেঁচে আছি - নিজের মাঝে অমীমাংসিত এই প্রশ্নকে আপাতত অনেক কষ্টে হলেও চাপা দিয়ে রাখা যাক। শুকনো ঠান্ডা দিনগুলো যাক, বসন্ত আসুক - তারপর নাহয় সেই প্রশ্নের বোঝাপড়াটা করা যাবে।
--
সচলায়তনে প্রকাশ

শুক্রবার, জানুয়ারী ১১, ২০০৮

আরিগাতো!

আরেকটা বছর বুড়িয়ে গেলাম। আগে কখনো মনে রাখিনি, কখনো আমাদের বাসায় কেউ কারও টা মনেও রাখতো না, কাজেই কোনদিনই এইসব বাহুল্য খেয়াল করা হয়নি।

ইদানিং মনে থাকে।
ফেসবুকে ঢুকতেই জানান দেয়, ফেসবুক টিমের পক্ষ থেকে হ্যাপি বার্থডে, সুন্দর একটা দিন কাটুক তোমার।
কিংবা, অরূপ-মামু জুটির বানানো কলকব্জা অনুযায়ী সচলায়তনের এক কোনায় কার কবে জন্মদিন - জানান দিতে থাকে। সেইখানে অন্যদের নাম দেখতে বড় ভালো লাগে, শুধু নিজেরটাতেই আপত্তি। কেমন যেনো লজ্জ্বা পায়। উহু, লজ্জ্বা নাহ, এই ব্যাপারটাই বোধহয় বিব্রতবোধ। আমাদের দেশে বিচারপতিরা যেমনটা হয়ে থাকেন খুব অল্পতেই।

কিন্তু, সুহৃদ আনোয়ার সাদাত শিমুল তাঁর প্রচন্ড ব্যস্ততার মাঝেও দিনটা মনে রেখে একটা সেইরম পোস্টও ছেড়েছেন। সেইরম মানে একেবারে সেইরম - অন্তুত আমার জন্যে। বিবর্ণ আকাশে উনি রূপবতী মেঘের ঘনঘটা শুনতে পেয়েছেন!

আহহা, আমি একটা তুচ্ছ মানুষ, তার আবার জন্মদিন!
আমার জন্মদিন মনে রাখলে, আপনার বাড়িতে ছাদের কার্ণিশে বসা কাক টারও জন্মদিনের হিসেব রাখতে হবে, শিমুল।
তাই পোস্ট পড়ার পর মনে মনে একটা কমেন্ট করলাম, হুমম।

আরিগাতো, শিমুল। আরিগাতো। আপনার পোস্টটা যে, যেকোন ৯ই জানুয়ারিতে আমার পাওয়া সবচেয়ে বড় উপহার।

ফেসবুকে ও মেইলে শুভেচ্ছা জানানো রাবাব, তোমার পাঠানো গানগুলো এখনো শুনছি। কার্পেন্টারস ভাই-বোন এর গানে ডুবে আছি কয়েকদিন। আরিগাতো।

সংসারে এক সন্ন্যাসী আমার বিষন্নতার প্যাটেন্টের সিংহভাগ হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন জন্মদিনের শুভেচ্ছায়। প্রতিবাদ জানাতে চাই। সংসারে থেকেও কেউ যে সন্ন্যাসী হতে পারে, আদিরস নিয়েও যে মহাকাব্য রচিত হতে পারে, এই সুভদ্রলোক(!)টি কে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। আমার নতুন বছরের রিজোল্যুশনে থাকবে, আমি কোন একদিন এই ভদ্রলোকটির মতোন একটা কোবতে লিখবো। আরিগাতো, সন্ন্যাসী দাদা।

প্রিয়দর্শিনী নিঘাত তিথি অভিযোগ জানিয়েছেন যে, সৌরভকে কোন বিশেষ দিনে শুভকামনা জানানোটা খানিকটা বিব্রতকর, সে অভদ্রের মত তাতে কোন উত্তর দেয় না। তথাস্তু। মাথা পেতে নিলুম। আসলেই ঘটনা তো তাই, ঈদের শুভেচ্ছার জবাব দিইনি, কিংবা নতুন বছরের। নতুন বছরের রিজোল্যুশনে এটাও তাহলে রাখা যাক, কী বলো, তিথি? লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যাওয়া সূচিত্রার পাগল ভক্ত সৌরভ লোকচক্ষুর সামনে থেকেই আরো সামাজিক হওয়ার চেষ্টা করবে। আরিগাতো, তিথি।

প্রথম কমেন্টকারী হিসেবে, দ্রোহী ভাইকে আরিগাতো এবং সৌরভের মফস্বলে ঘুরে যাবার দাওয়াত।
ধূসর গোধুলি নামের হালকা-পাতলা যে জার্মানপ্রবাসী তরুণটিকে লোকজনের সাথে সবসময় সিস্টারইনল বিষয়ক আলাপে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়, উনি কোথাকার কোন সিবা-গেইগি কিং কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, বুঝলাম না! সে যাকগে। ডাংকে।

DHL এ আমার জন্যে শুকনো কাঁথা পাঠানো হিমু ভাই, চিজকেক পাঠানো আড্ডাবাজ, আরিগাতো।
হাসান মোরশেদ বড় ভাই নতুন বছরে সৌরভের নিয়মিত হবার প্রত্যাশা করেছেন। আরিগাতো, বিগ বস।

যার লেখা পড়লে মাথাটা নিজের থেকে ভাবতে শুরু করে শ্রদ্ধেয় শোমচৌ, গ্লোবাল ভয়েসের বাংলা কণ্ঠ রেজওয়ান, আলবাব নজমুল ওরফে রং নাম্বার বাউল নামের যে লোকটা মাঝে মাঝে সৌরভকে কোমল ঝাড়ি দেয় হালকা-পাতলা, মোটাসোটা আরিফ জেবতিক, যার কথা ভাবলে কবিতা লিখতে ভয় লাগে সেই শেখ জলিল, যার কবিতা পড়ে আমার মাথা চুলকায় সেই বদ্দা সুমন চৌধুরি, মানুষের খোমা নিয়ে খেলাধূলা করেন যিনি সেই সুজন দা, আমার অর্থনীতির শিক্ষক সুবিনয় মুস্তফী, ক্ষেপাটে বুড়ো কনফুসিয়াস, অনুভূতি নিয়ে ছন্দ সাজানো ঝরাপাতা - সব্বাইকে আরিগাতো।

এতো সব বুড়ো মানুষের মাঝে একটা ক্লাস টেন পড়ুয়া পিচ্চি(!)ও শুভেচ্ছা জানিয়েছে। ছোট্ট আপু দৃশা, আরিগাতো।
শ্রদ্ধেয় ইশতিয়াক রউফ, ফারুক হাসান, স্নিগ্ধা, রানা মেহের, ধ্রুব হাসান, কিংকর্তব্যবিমূঢ়, টুটুল, সুলতানা শিমুল, দিগন্ত, স্নেহাস্পদ সবজান্তা, পুরোনো বন্ধু মরহুম(!) আজকাল, সব্বাইকে অনুভূতিশূন্যকেউএকজনের অন্তর থেকে লবণ লবণ ভালোবাসামাখা আরিগাতো।

সবাইকে বিবর্ণ সৌরভের পক্ষ থেকে অসংখ্য আরিগাতো। কষ্ট করে ফেসবুক বা অর্কুট শুভেচ্ছা, মোবাইল মেসেজ, ইমেইল বা ফোন করে শুভেচ্ছা জানানো অন্য ভালোবাসার মানুষগুলো, যাদের নামোল্লেখ করতে অনুমতি নিতে হবে, তাদের জন্যে এক শব্দ। আরিগাতো।

সবশেষে, কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই আমাকে। হুমম, নিজেকে।
সুমন বদ্দা কাল একটা পোস্টে চার্লি চ্যাপলিনের সেই বিখ্যাত মুভিটা তুলে দিয়েছেন য়্যুটিউব থেকে, মডার্ন টাইমস, গ্রেট ডিপ্রেশন বলে পরিচিত চরম অর্থনৈতিক মন্দা পরবর্তী সময়ের গল্পের চ্যাপলিনীয় রূপায়ন। পুরোটা দেখলাম আর হাসতে হাসতে ভাবলাম, কতো বছর কেটে গেছে, অবস্থা তো পাল্টায়নি। দিব্যি এইসময়ের কোন এক চাবিকল দেয়া স্যালারি-ম্যানকে বসিয়ে দেয়া যায় ওই চরিত্রটায়।

মুখোশ পড়া এই জীবনে আয়নায় মুখোশের ওপারের নিজেকে শুনিয়ে বড় করে বলতে ইচ্ছে করছে, আরিগাতো। বিবর্ণ এই জীবনে একগল্প সীমাবদ্ধতা নিয়ে এতোটা পথ পেরিয়ে আসতে পারার জন্যে। আরিগাতো, অনুভূতিশূন্য কেউ একজন।

বৃহস্পতিবার, জানুয়ারী ০৩, ২০০৮

ব্লগিং এর রুদ্ধকণ্ঠ - ফওয়াদ আল ফারহান এবং অন্যেরা

সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নিশ্চিত করেছে যে, তারা সরকারের সমালোচনা কারী একজন স্পষ্টবাদী ব্লগারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আটক করেছেন।

ফওয়াদ আল ফারহান নামের এই ব্লগার তার জার্নালে নিয়মিতভাবে সৌদি আরবের প্রেক্ষাপটে সমাজবিষয়ক সমস্যাগুলো নিয়ে লিখে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। সাম্প্রতিককালে তার লেখায়, কোনরকম অভিযোগ ছাড়াই জেলে রাজনৈতিক বিবেচনায় বন্দীদের নিয়ে সরকারের নীতির সমালোচনা করা হলে, সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এক নির্দেশে তাকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেয়া হয়।

নিজ দেশের রাজনৈতিক ব্যাপারগুলোতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি নিয়ে তিনি নিজের আসল নামেই তার ব্লগিং অব্যাহত রেখেছেন অনেকদিন ধরেই। তার ঘনিষ্ঠজন অভিযোগ করছেন যে, তাকে এইসব লেখার জন্যে প্রথমে সতর্ক করে দিয়ে ক্ষমা চাইতে বলা হয় এবং তাতে অস্বীকার করার প্রেক্ষাপটেই তাকে আটক করা হয়।

নিজের সফটওয়্যার ফার্ম থেকে ব্যক্তিগত ল্যাপটপ সহ আটক, আরবি ভাষায় ব্লগিং করে যাওয়া এই ৩২ বছরের ব্লগারকে সৌদি ব্লগারদের কণ্ঠ বলে অভিহিত করা হচ্ছে এবং তার ঘনিষ্ঠজন ও আরব বিশ্বের ব্লগোস্ফিয়ারের সদস্যেরা তার মুক্তির আবেদন জানাচ্ছেনতারা একইসাথে আতংকিত বোধ করছেন, ব্লগিং মিডিয়ার কণ্ঠ রুদ্ধ হবার এই প্রেক্ষাপটে।

সাধারণ মানুষের জন্যে রাজনীতি নিষিদ্ধ সৌদি আরবে বিরুদ্ধমত বা সরকারের সমালোচনা এতোদিন নিষিদ্ধ ছিলো, কিন্তু ২০০৫ এ অভিষিক্ত রাজা আবদুল্লাহ র কিছুটা শিথিল নীতি ব্লগারদের উ‍ৎসাহিত করেছিলো নিজের মুক্ত মত প্রকাশে। অন্তত পেননেমে হলেও তাদের মাঝে নতুন এক লেখনী-উদ্দীপনা লক্ষ করা গেছে সাম্প্রতিক সময়ে। কিন্তু, ফারহানের এই ঘটনার পর ভয়ে তাদের অনেকেই এর মধ্যেই ছেড়ে দিয়েছেন তাদের কলম।

এই হচ্ছে খবর। গল্পগুলো সব একরকম। স্বার্থলোভী শাসকেরা সব জায়গায় আর সব সময়ে একরকম, তারা আপনার গলা টিপে ধরবে সত্য কথা বললে।

আমাদের বাংলাদেশে তাসনিম খলিল পালিয়ে বেঁচেছেন।
কার্টুনিস্ট আরিফুর রহমান মুক্তি পেয়েছে। মিডিয়ায় আসেনি সে খবর। আমি চাইনা, আসুক। সেটাই ভালো। ছেলেটা অন্তত নিরাপদ থাকবে। ধর্মোন্মাদদের বিষদাঁত থেকে অন্তত সে দূরে থাকবে।
বিপ্লবী হয়ে কিচ্ছু হয়না, আমার কাছে, সম্মানের থেকে মানুষের জীবনের দাম অনেক বেশি।
ফারহানেরা মুক্তি পাক, কোন সদ্যবিবাহিতা যেন প্রিয়জনহারা না হয়, কোন জন্মদাত্রী যেন নিজের সন্তানহারা না হন - এইটুকুই প্রার্থনা।

সচলায়তনে প্রকাশিত