
আমার আপত্তিতে জোর করেই জানলাটা খোলা রাখা হয়, হালকা ঠাণ্ডায় মায়ের বকুনি খাবার পরেও গরম কাপড় না পরা দুষ্টু উদোম গায়ের বাচ্চাদের মতোন। জানলার কাছে চেয়ারটা সরিয়ে উঁকি দিই বাইরে। অন্ধকার আর আলোর মাঝামাঝি একটা "প্রায়আধার" বাইরে থেকে কেমন যেন অপরাধবোধ নিয়ে চোখ পিটপিট করে আমার দিকে থাকে, যেনো সে লজ্জ্বা পায় বেশি তাত্তাড়ি এসে পড়ায়, আকাশটাকে কালো করে দেয়ায়। তারপর আমার মুচকি হাসিমুখ দেখে সেও সাহস পায়, পুরোপুরি মুড়ে ফেলে আকাশটাকে, ওপারের নির্জীব ইচো গাছগুলো ড্যাবড্যাব দাঁড়িয়েই পড়ে অন্ধকারেই, বাতাসে ভেসে আসে ওই গাছগুলোর উপরে বাসা বাঁধা টিয়া পাখিদের কিলিকিলি, চিলিচিলি।
এই স্কুলের আন্ডারগ্রেডারেরা, যারা বেশিরভাগই নার্ড এবং স্বভাবতই অন্তর্মূখি, অনেকেই ক্লাস শেষে ক্লান্ত দেহ নিয়ে টেনেটেনে বাড়ি ফেরার জন্যে ইচো গাছগুলোর নীচে ওই রাস্তাটা ধরে হেঁটে হেঁটে চলে। আমি জানলার পাশেই চুপচাপ বসে থাকি। একই রুমে বসা আরেক সহপাঠী কফি খাবো কি না জিজ্ঞেস করে একটা ডাক দেয়, আমি হ্যাঁ-হুঁ মাঝামাঝি কিছু একটা বলে আবার ডুবে যাই বাইরের অন্ধকারের সাথে কথোপকথনে।
একটা সময় ছিলো, যখন হিসেব করতুম - আচ্ছা এখন দেশে কয়টা বাজে, মা কী করছে - আজ কী রান্না হয়েছে - আজকে বাজার কে করেছে। এখন মস্তিষ্কের ওই জায়গাগুলো প্রায় মুছে বসে আছে। ওই কোষগুলো কবে মরে আবার নতুনেরা জায়গা নিয়েছে কে জানে। কিন্তু আজ কতো বছর পর কেনো যেনো ভাবতে ইচ্ছে করছে - দেশে কেবল দুপুর পার হলো, দেশে থাকলে হয়তো শুধু লাউয়ের তরকারি, কোন অপ্রিয় মাছের ঝোল আর তেল দেয়া আলুর ভর্তা দিয়ে হয়তোবা দুপুরের ভাত খেতাম একটা গোসল ছেড়ে এসে।
হয়তোবা, হয়তোবা নয়।
কিংবা ফেলে আসা বন্ধুগুলোর মতোন একটা চাকুরি খুঁজে হাপিত্যেশ হতাম অথবা সস্তায় কোন চাকুরিতে দিন পার করতাম আরো ভালো কোন সুযোগের আশায়। তার থেকে এই বর্তমানই ভালো লাগে। হোক না, মাঝরাতে বাড়ি ফিরি, কিংবা শুকনো রুটি বা ওনিগিরি চিবুতে চিবুতে অনেক কিছু ভুলে থেকে জোর করে দিন পার করি।
এইসব ভাবতে ভাবতে অন্ধকার হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। এইবার জানলা থেকে উঠি।
কী হতে কী হইনি, আর কোথায় থেকে কোথায় থাকিনি - এইসব দুঃখবিলাস মাঝেমাঝে নিজের কাছেই বিরক্তিকর ঠেকে। পানসে কফিতে চুমুক দেই। কফি ভাল্লাগেনা। এই ঘরটায় কফি আমার থেকে কেউ ভালো বানাতে পারেনা। সন্ধ্যেটা আরো বিষণ্ণ আর ঠাণ্ডা হতে থাকে।
নভেম্বর ০৯, সন্ধ্যে
ব্যাখ্যা - ইচো , ওনিগিরি
ছবি - পাঁচ বছর যেখানে কাটিয়েছি, আমার স্কুল
৩টি মন্তব্য:
ভোর ৪.২০ মিনিটে "নভেম্বরের কোন এক বিষণ্ণ সন্ধ্যায়" পড়লুম। ভোরের এই মুহূর্তে মস্তিষ্ক বিষন্ন হতে গিয়েও হঠাৎ থেমে গেল। হয়ত, ক্লান্ত বলেই ঘুম বোধ, বিষন্নতা আর ঠান্ডা অনুভব মিশ্রিত হয়েছে।
চমৎকার লেখা হে।
নামহীন মানুষ, অসংখ্য কৃতজ্ঞতা এইখানে এসে এইসব আবজাব পড়ার জন্যে।
ভালো থাকুন।
হুমম। নামেই শুধু পরিচয় ?
আমাকে চিনতে পারো। অর্কুটে আমার একটা অ্যাকাউন্ট আছে। বানর হাত দিয়ে কিছু কলা ঢেকে রেখেছে--এইরকম একটা ডিপি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন