শনিবার, অক্টোবর ২০, ২০০৭

এইসব দিন শেষে বৃষ্টি আসে

সকালে এখন ভালো ঠাণ্ডা পড়ে। দেশি কাঁথা আর একটা হালকা ব্লাংকেট গায়ে দিয়ে কাজ হয় না যদিও, তারপরো থোড়াই কেয়ার করি এইসব।

তিন ধাপের অ্যালার্মদেয়াল ব্যর্থ হয় না, সময়মতোনই ঘুম ভাঙে। প্রথমে বাজে সচল সেলফোন। তার পাঁচ মিনিট পর চিৎকার দেয় বিছানা থেকে একটু দূরে রাখা অচল সেলফোনের সেটটা, যেটা গত এপ্রিলে বদলানোর পর এখন অ্যালার্ম ছাড়া অন্য কোন কাজে আসে না। তারও দশ পনের মিনিট পরে বেজে ওঠে টেবিলঘড়ি, যেটাকে বন্ধ করতে বিছানা ছেড়ে কমপক্ষে চার পা হেঁটে যেতে হয়।

এতো কিছুর দরকার নেই আসলে, বেশিরভাগ দিনই প্রথম চিৎকারেই কাজ হয়, ঘরজুড়ে প্রফেসর শঙ্কু ধরনের এই চিৎকার ব্যবস্থা তৈরির পরও, মাঝে মাঝে অবশ্য অ্যালার্ম বন্ধ করে আরেকবার ঘুমুতে গিয়ে বিপদ ঘটেনি তা নয়। তারপরো এতো কিছু করা, কারণ - সকালে আন্ডারগ্রেডারদের এক্সপেরিমেন্টে কামলা খাটতে হয়। তাও একা। কোনভাবে মিস হয়ে গেলে লজ্জ্বার ব্যাপার। সেই সম্ভাব্য লজ্জ্বা থেকে বাঁচতে অগ্রীম ব্যবস্থা।

এক্সপেরিমেন্টের তিনঘন্টা পুরোপুরি ফাঁকি দেই, নিজের কাজ করে যাই, সচলায়তনে উঁকি দিয়ে সমন্বিত বাঘ ও অপরিণত ঘুড়া ক্যামনে কি কইরলো তাই পড়ে হাসতে থাকি, বিবিসিতে মিজ ভূট্টোর ভীতশংকিত চেহারা ও মৃতের সংখ্যার অবলীলায় তিন ঘর পার করে যাওয়া দেখে হতবাক হই। অবশ্য কিছুক্ষণ পরেই, খুব বড়োজোর এক মিনিট সাতচল্লিশ সেকেন্ড পরে ভুলেই বসে থাকি যে, অল্প কিছু মুহূর্ত আগে আহত হওয়ার মতো কোন খবর পড়েছি এবং একদল ভীতসন্ত্রস্ত আহত মুখ ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রক্তাক্ত মানুষের স্থিরচিত্র দেখেছি।

মানুষের শোকের আয়ু লগারিদমিক স্কেলে কমে যাচ্ছে বলেই মনে হয়। মানুষ নিদারুণ স্যাডিস্টিক হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। আমিও ব্যতিক্রম নই তার। অন্যের পিছলে পড়ায় মনে মনে হাসি আর পারলে নিজেই কলার খোসা ছড়িয়ে রাখি, যাতে পিছলে যায় সব্বাই।

এইরকম ভাবতে ভাবতেই দিনটা শেষ হয়ে যায়।
আজকের মনোরোগবিজ্ঞান এর ক্লাসে ডিপ্রেশন টেস্টটা অদ্ভূত ছিলো, কোনরকম বিস্তারিত নির্দেশনা ছাড়াই আপনাকে একটা ঘড়ির ছবি আঁকতে বলা হবে, এরপর ঘড়ির কাঁটা ও ডায়ালের অবিন্যস্ততা অথবা ঘড়ির বৃত্তের আকৃতি দেখে আপনাকে বিশ্লেষণ করা হবে। আমার ইচ্ছে করছিলো, একটা ডিজিটাল ঘড়ির ছবি আঁকতে। হিহি, এই টেস্টে ডিজিটাল ঘড়ি আঁকলে তাকে পজিটিভ বলে ধরা হবে। মজাই লাগলো। মানুষের মস্তিষ্ক পুরোটাই পাজল।

সন্ধ্যায় বৃষ্টি নেমে আসে, সেই সাথে মনে পড়ে, জমে থাকা কাজের পাহাড় আরও উঁচু হচ্ছে। মেইল এর রিপ্লাই দিতে হবে কিছু, কিছু মেইল চালাচালি শুরু করতে হবে নিজের থেকেই, মেইলের প্রস্তুতি হিসেবে জার্নাল পেপার এর লিস্টি বানাতে হবে - চাকুরির অনলাইন এন্ট্রিতে লেখার জন্যে একগাদা মিথ্যে সাজাতে হবে সুন্দর করে। এইসব জায়গায় আমার লিখতে ইচ্ছে করে - আমি আসলে খুব দুঃখবাদী মানুষ, আমার ঘুড়ি ওড়াতে ভাল্লাগে, আমি একা একা শঙ্খনীল নদীর তীরে সূর্যাস্ত দেখতে বসে থাকি অথবা আমি অনেক সময়ই অসুস্থ থাকি এবং আমি আপাদমস্তক আধাপাগল মানুষ । তা না লিখে রচনা করতে হয় নিজেকে বিক্রির জন্যে নিজের বানানো প্রশংসাপত্র। এইসব ভেবে আহে..ম - বলা ছাড়া কোন পথ দেখিনা।

এইভাবে, এইসব দ্বন্দ্ব আর দ্বিধার শেকলে নিজের আত্মার বাঁধা পড়া আর অনেক কষ্টে ভুলে থাকা আত্মজনের অসহায়তা মাখানো স্মৃতি নিয়ে এইসব দিন চলতেই থাকে। কোন কোন দিনশেষে বৃষ্টি নামে ঝরঝর। মধ্যরাতে যখন আমার ১২ মিটার স্কয়্যার এর ঠিকানায় ফেরার জন্যে পথে নামি, তখন ভিজে যাই কিংবা ভিজি না। সেইসব দিনে এইসব লিখতে ইচ্ছে করে।
তাই লিখে রাখি। সব্বার বিরক্তির উদ্রেক করেই।


সময়কাল : অক্টোবর ১৯ শুক্রবার এর দিন পেরিয়ে রাত দুটো মতোন
ছবির জন্যে কৃতজ্ঞতা : উইন্ডোশপার , সিসিএল এর আওতায় ব্যবহৃত

কোন মন্তব্য নেই: