শনিবার, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০০৭

ঘাসফড়িং, রোদফড়িং

গিয়েছিলাম কাজে। অল্পস্বল্প জাপানি বলতে পারি, সেইসূত্রে বাংলা-জাপানি অনুবাদ সহায়তা দেবার জন্যে।
কিন্তু আহহারে, আমার বলা বাংলার যা হাল, তাতে ফোনে মা শুনে মাঝে মাঝে বুঝতে পারেনা। আর তিন সপ্তার প্রশিক্ষণে আসা এই ভেতো বাঙালির দল তো পারলে সামনাসামনি হেসে দেয়।

জাপানি কর্তা ভাবেন, আমি নিশ্চয়ই তার বলা মজার কথার কোন মজার বাংলা করেছি, তাই সবাই হেসে ফেলছে। আসলে তো হাসে আমার ইতংবিতং বাংলা শুনে - এটা তাকে কে বুঝাতে যায়!

"ইন্টারপ্রেটার" শব্দটার বাংলাই ভুল গিয়েছিলাম। দেশের এক বন্ধুকে ইয়াহুতে জিজ্ঞেস করতেই বল্লো, ক্যান, "দোভাষী"? তো, আমি এই দুর্বল বাংলা আর মোটামুটি খুঁড়িয়ে চালানোর মতো পারা জাপানি জ্ঞান নিয়ে গিয়েছিলাম দোভাষী র কাজে।

বাঙালিদের সাথে "ইন্টাড়্যাকশনে" জাপানি কর্তাদের সাহায্য করা আমার কর্ম। এনারা যা বলেন, ওনাদের বুঝিয়ে উঠতে আমার ঘাম ছোটে, ওনারা যা বলেন, তা নিজে বুঝতেই আমার হৃদপিন্ড ব্যাপক আহত হয়। আমি পানি খাই, পানি খাই আর পানিই খেতে থাকি । তাও রোজার মাসে। দোভাষীর কাজ হওয়ার কথা ভাষার দেয়াল সরানো, সেইখানে আমার নিজেকেই দেয়াল মনে হতে থাকে। এপাশের কথা, ওপাশের কথা সবই আমি পর্যন্ত এসে থেমে যায়। ঘরের বাতাস ঠান্ডা ঠান্ডা লাগে। আমি মনে মনে শয়তানি হাসি হেসে ফেলি, হিহি।

সেই কাজে যাওয়া পাহাড়ে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬০০ মিটার উচ্চতায় চারটে দিন থাকা আর নানানরকম ভজড়ঘ্যাঝোড়। ক্যামেরা সাথে ছিল। সেইখানেই ফড়িং দের সাথে দেখা। সেই পাহাড়েই, রোদমাখা আকাশ, শুকিয়ে যাওয়া আকাশিয়া-লার্চ গাছের ডালের বিষণ্ণ রঙ আর শরতে লাল সাজে সাজার প্রতীক্ষায় পুরো পাহাড়ের নিজেকে মেলে বসে থাকা।
এইভাবে প্রেমে পড়ে গেলাম পাহাড়ের। আবার যাবো, তবে আর কাজে নয়। এবার বেড়াতেই যাবো।
"নেমে আসে সন্ধ্যা""মনফড়িং""রোদফড়িং"
---
(পাদটীকা ১ : 'র' এর পরে 'য' ফলা দিলে য়্যুনিকোড ব্যাটা ভচকে যাবে, তাই হাঁটু পানির জলদস্যু হিমু ভায়ের দেখানো পথ মতো 'ড়' এর শরণাপন্ন হওয়া)

২টি মন্তব্য:

নামহীন বলেছেন...

ফড়িং গুলো রোদে ঘোরে ছায়াতে বসে।

সৌরভ বলেছেন...

নামহীন মানুষ,
কৃতজ্ঞতা পড়ার জন্যে।