বৃহস্পতিবার, জুলাই ২৬, ২০০৭

দ্বীপদেশের চিঠি-১: গণতন্ত্র

সতর্কতা : এটি একটি দীর্ঘ, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো ধরনের বক্তব্য সম্বলিত পোস্ট। সচলায়তন এবং আমার নিজস্ব জার্নালের জন্যে লেখা।
-------------

০.
জাপান।

১.
সরকারে কে এলো আর গেলো - এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই কারো এই দেশটায়। প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে - এমন খবরে আগ্রহ নেই রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পর্কহীন কেউ ছাড়া, তরুণ বা বৃদ্ধ বয়েসী কারও।
তারপরো নির্বাচন আসে, নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রিন্ট আর ইলেকট্রনিক মিডিয়া জনপ্রিয়তা যাচাই, কিংবা রাজনীতি বিষয়ক প্রলাপ নিয়ে সাজিয়ে তোলে খবরের অনুষ্ঠানগুলোকে। (মিডিয়াকেও খেয়ে-পড়ে বাঁচতে হবে তো, নাকি?)

আগামী জুলাই ২৯-এ উর্ধ্বকক্ষের নির্বাচনকে সামনে রেখে, জিজি প্রেস এর করা এক সমীক্ষা বলছে, প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে র প্রতি জনমানুষের সমর্থন নেমে এসেছে চার ভাগের এক ভাগে। ইওমিউরি শিম্বুন এর করা জরীপও অনেকটা এমন কথাই বলছে - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রায় নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতায় থাকা রক্ষণশীল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) র জন্যে মানুষের সমর্থন নড়বড়ে বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির থেকেও কমে গেছে।

এইসব সমর্থন কমাকমিতে শিনজো আবের চেয়ার নিয়ে কোন সমস্যা নেই আপাতত, কারণ সামনের নির্বাচনটা উর্ধ্বকক্ষের। জাপানের ডায়েট এর গঠনটা এমন,সরকারে বসতে নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকতে হয় আর আইন পাস কিংবা বড় কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যে উর্ধ্বকক্ষে । গঠনটা অনেকটা টিপিক্যাল অবশ্য।
কাজেই, উর্ধ্বকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেও আপাতত চেয়ার নিয়ে টানাটানির আশংকা কম, কিন্ত,সরকার চালাতে বিরোধিতার মুখোমুখি হতে পারে - সেই আশংকাটা জোরেসোরেই আছে। সেইখানেই এলডিপির ভয়।

২.
শিনজো আবে কোন নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসেননি, তিনি এসেছিলেন তার পূর্বসুরি জুনিচিরো কোইজুমি গত অক্টোবরে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব থেকে অবসর নেবার পর। মি. আবে নারী ভোটারদের মাঝে সমর্থন পাবার জন্যে যথেষ্ট সুদর্শন, রাজনীতির সাথে তিন-চার প্রজন্ম জড়িত এমন পরিবারে সোনার চামচ মুখে জন্ম , পিতা ছিলেন বিদেশমন্ত্রী আর মাতামহ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ মাথায় নিয়েও পরবর্তীসময়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন অনেকটা সময়।

শিনজো আবে, আপাদমস্তক সুযোগবাদী ও ধনিকশ্রেণীর প্রতিনিধি আর মনেপ্রাণে লালন করেন কট্টর "জাতীয়তাবাদী মৌলবাদ"
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভুলগুলোর (যুদ্ধাপরাধীদের বীর মনে করা কিংবা সেবাদাসী হিসেবে দশ মিলিয়নের মতো চীন-কোরিয়া বা ভিয়েতনামের মেয়েদের অপমান) ব্যাপারে ক্ষমা চাইতে অনীহা দেখানোর যে মৌলবাদী নীতি - তিনি সেটাই ধারণ করেন।
সে যাক,ইতিহাস নিয়ে দুঃখ ছাড়া আর বলার কিছু নেই।

প্রধানমন্ত্রী আবে র শুরুটা হয়েছিল মধুচন্দ্রিমার মতো, গত অক্টোবরে দায়িত্ব নেবার পর।
সস্ত্রীক বেইজিং আর সউল চীন সফরের মধ্য দিয়ে শুরু, তিক্ত সম্পর্কে কিছু মিষ্টতা আসবে - প্রত্যাশা ছিলো সবার । সে আশার গুড়ে বালি দিয়ে, ফলাফল ছিল শূন্য আর পুরো ব্যাপারটা ছিল আইওয়াশ।
তারপর সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তার সরকারের ব্যর্থতার লিস্টিটা লম্বাই হয়েছে শুধু। দুর্নীতি আর অর্থের ব্যবহারে অস্বচ্ছতার কারণে একের পর এক মন্ত্রী/দপ্তরপ্রধানকে পদত্যাগ করতে হয়েছে, কৃষিমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত সম্মান বাঁচাতে আত্মহননে মুক্তি খুঁজেছেন ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মন্তব্য মেয়েরা সন্তান জন্মদানের যন্ত্র , প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিরোশিমা-নাগাসাকিতে আণবিক বোমা ফেলা ছাড়া যুদ্ধ শেষের উপায় ছিলনা - এরকম একেরপর এক বেফাঁস বক্তব্য ও তার পরবর্তী ফলাফল প্রধানমন্ত্রী আবের দায়িত্বকে করে তুলেছে কঠিনতর।

এইসব পরিস্থিতিতেই জনপ্রিয়তার এই নিম্নমুখিতা।

৩.
আগামী জুলাই ২৯শেই উর্ধ্বকক্ষের নির্বাচন হবে।
দেখা যাবে, সব সমীক্ষাকে ভুল প্রমাণ করে, প্রধানমন্ত্রী আবে র নেতৃত্বাধীন এলডিপি অন্য সময়ের মতো মোটামুটি ভালোভাবেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হবেন।
কারণ, ভোট দেবে বড়োজোর ২০ শতাংশ জনমানুষ, বয়স অনুযায়ী খুঁজলে দেখা যাবে তরুণ বা মধ্যবয়েসী প্রজন্মের উপস্থিতি শূন্যের কাছাকাছি।
ধনী-গরীব বৈষম্যের প্রকট আকার ধারণ কিংবা বার্ধক্যসময়কালীন ইন্স্যরেন্সের যে সরকার পরিচালিত ব্যবস্থা সেটার লেজেগোবড়ে আকার নেয়া - কতো সমস্যার মাঝেও পরিবর্তন চাইবেনা কেউ ।কারণ, সামনে অপশন নেই কোন।
যাকেই ভোট দেয়া হোক না কেনো, সেই একই গল্প তৈরি হবে।

সেই সরকারি অর্থের অপব্যবহার, সেই বার্ধক্য ইন্স্যুরেন্স নিয়ে লেজেগোবড়ে করে ফেলা ।
দেশটা টিকে থাকবে সাধারণ মানুষের চেষ্টা আর শ্রমের উপর। সরকারে কে আছে, সেটা চিন্তা না করেই কাজ করে যাবে জনমানুষ।
মাঝেমধ্যে মনে হয়, কোন কর্পোরেট সংস্থা - যারা ট্যাক্স এর বিনিময়ে সার্ভিস দেবে - তাদেরকে সরকার গঠনের দায়িত্ব দিলেই তো সব ল্যাঠা চুকে যায়।

এইসব নির্বাচন-নির্বাচন খেলা আর অর্থহীন গণতন্ত্রের আসলেই দরকার আছে?

বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও কথাটা ভেবে দেখা দরকার - অবশ্য,নিজস্ব অবস্থার দৃষ্টিকোণ থেকে।

----------
তথ্যসূত্র: ইওমিউরি শিম্বুন, টিভি নেটওয়ার্ক টিবিএস এর নিউজ২৩, বিবিসি
ছবিসূত্র: নাসা, নাসা কপিরাইট পলিসি , কৃতজ্ঞতা : উইকিপিডিয়া

২টি মন্তব্য:

নামহীন বলেছেন...

১-এর দ্বিতীয় লাইন :
'... - এমন খবরে আগ্রহ নেই রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পর্কহীন কেউ ছাড়া, তরুণ বা বৃদ্ধ বয়েসী কারও।'

দুইবার না-বোধকে অর্থ কি বদলে গেল?

হতে পারে এমন :
'...- এমন খবরে কারও আগ্রহ নেই, রাজনীতিতে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত কেউ ছাড়া...'
অথবা
'... - এমন খবরে আগ্রহ নেই রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পর্কহীন কারও।'

কয়েকটা টাইপো ঠিক করা যেতে পারে:
ঊর্ধ্বকক্ষ, জরিপ, আশঙ্কা, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, পরবর্তীতে, ইন্সুরেন্স, লেজেগোবরে...

সৌরভ বলেছেন...

কৃতজ্ঞতা, জিকো।

আপনার চোখের প্রশংসা না করে পারছি না।
টাইপো গুলো ঠিক করলাম না, তাতে আপনার কমেন্টটা গুরুত্বহীন হয়ে পড়তে পারে।