মঙ্গলবার, জুন ২৬, ২০০৭

হৃদয়ে মৃত্যু আসে যখন ..

আজকাল মৃত্যু এসে ভীড় করে মনে। মনে হয়, অনেক তো হলো।
ভাবি - তবে কি বুড়িয়ে গেলাম?
কুড়িতেই যক্ষা নিয়ে যায় সুকান্তকে। আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখতে বলা রুদ্রকবিও চলে যান অল্প সময়ে।
এইসব মৃত্যুদের মনে হলে অবশ্য সময়টা চলে যাওয়ার জন্যে "অ-কাল" মনে হয় না।

শৈশব এসে ভীড় করে পুরো হৃদয় জুড়ে, স্মৃতিরা একেকটা অদ্ভূতুড়ে প্রাণযুক্ত হয়ে ওঠে - উপহাস করে - আবার কোনটা মায়া জড়িয়ে মাদকের আবেশ রেখে চলে যায়। আমি পড়ে থাকি একা ।
এইখানে।
নিধুয়া এই পাথারে।

সবকিছু ছবি হয়ে আসে।
চৈত্রের খনখনে রোদে আমি দৌড়ুতে গিয়ে উল্টে পড়ে যাই ধুলো হয়ে যাওয়া লাঙল দেয়া জমিটায়, মায়ের লাঠির ভয়ে অনেক কষ্টে থুথু দিয়ে ধুলো মোছার ব্যর্থ চেষ্টা করি।


ক্লাস থ্রিতে আমি কথা বলায় ম্যাডাম আমাকে নিল ডাউন করিয়ে রাখে, পাশে বসা রুপম বলে, ও দাড়িয়ে থাকলে আমিও থাকবো, কারণ আমি ওর সাথে কথা বলতেছিলাম। ম্যাডামের অবাক চেহারা এখনো মনে পড়ে।
সেই স্কুলটা আমি পরের বছর ছেড়ে দিই।
রুপম ডাক্তার হয়ে গেছে বোধহয়। শেষ দেখা হয়েছিলো ও সলিমুল্লাহ তে ভর্তি হওয়ার পর।
রুপম, কই আছিসরে এখন?

ধুর, এইসব কেন যে মনে পড়ে?
বুড়োত্বের খুব বড়সড় সিমটম।

একা ভাবতে বসি, পেরিয়ে যায় সময়। মনে মনে অনেকদূর চলে যাই - ফিরতে পারি না আর, কোথা থেকে শুরু করেছিলাম।
হয়ে যাই ফটিক কিংবা অপু অথবা অনিমেষ। মফুস্বলে আমি এই ধনবাদী নগরের কংক্রিটের বেড়াজালে খুঁজে ফিরি আশ্রয় শূন্যতার কাছে।
ভাবনা ঘিরে ধরে ক্লান্ত-শ্রান্ত আমায় , এই পথের ক্লান্তি থেকে জিরিয়ে নেবার সুযোগও পাই না আজকাল- দেশ-কাল-পাত্র কোন কিছু না ভেবেই যে পথটা এতোদূর এলাম।
দেশ-কাল-পাত্রের অক্ষ অবশ্য ভাবনার পটে গৌণ - সব সমান্তরাল - মাঝেমধ্যে কিছুকিছু এবড়োথেবড়ো বাদ দিলে।

ভাবি, অনেকদূরই তো হাঁটলাম এই স্বল্প সামর্থ্যের দুর্বল আমিত্ব নিয়ে।
ঠিকঠাক বেঁচে থাকলে আর কদিন পর হয়তো বৈশ্যিক দাসত্ব করবার জন্যে নষ্ট কর্পোরেটদের দরজায় দাড়িয়ে পড়বো, একগাদা মিথ্যে প্রতিদিন অবলীলায় বানিয়ে বলে যাবো কলচাবি দেয়া পুতুলের মতো। নিজেকে সর্বোত্তম দাস হওয়ার জন্যে যোগ্যতম হিসেবে হাজির করবো স্যারদের দরবারে দন্তপাটি বিস্তৃত হাসি উপহার দিয়ে।
তারপর সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পা চাটতেই থাকবো প্রভূদের। জানি, সে-ই জীবন অপেক্ষা করে থাকে - এই পথের শেষে।

---------------------------------------------------

এই প্রতিবেশে অস্ত্র নেই, কোন উদভ্রান্তের এলোপাথাড়ি গুলিতে অকালে হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা মিলিয়নে এক এরও কম।
এই শহরে ট্রাম নেই, ভয় নেই জীবনানন্দ হওয়ার। বাতাসে সীসা নেই, পানিতে নেই অতিমাত্রার খনিজবিষ।
এই শহর এবং শাহরিক মানুষগুলো অ-কালে মরে না। তারা দীর্ঘকাল বেঁচে থাকে, অন্যদের সমস্যা করে অথবা না করেই। তারা আমাদের তথাকথিত বুড়োত্বের বয়সে পৌঁছেও নির্জীব হয় না, দিব্যি বেঁচে থাকে - শারীরিক ও মানসিক ভাবে। জগতকর্মে কোন বাধা পড়ে না; প্রেম করে, করে পরকীয়াও।

তবুও এইসব কিছুর মাঝে থেকেও আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে।

শরীরযন্ত্রের যে মৃত্যু , তা আমাকে কোন ভীতিবোধে আচ্ছন্ন করে না । ঈশ্বরে আমার অবিশ্বাস নেই - কিন্তু ব্যাপারটা অনেকটা - ঝাল খাবারে আমার অরুচি নেই - ধরনের বিষয়ের মতো সহজ। প্রার্থনা অথবা ঈশ্বর-উপাসনা - মাঝেমধ্যে সামান্য করি না - তাও নয়। খুব খারাপভাবে বললে - কিঞ্চিত ভণ্ড - বিশ্বাসে।

তাই শরীরযন্ত্রের মৃত্যু নামক পৃথিবীর জটিল অনন্য ব্যাপার-স্যাপারটি আমাকে সামান্যতম শুদ্ধ বা ভীত হতে শেখায় না।
"আছি" বা "থাকি" ব্যাপারগুলো তৃতীয় পক্ষের চোখে "ছিলো" বা "থাকতো" হয়ে যাওয়াটা আর এমন কী?
চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়াশুনা করছে এরকম কাছাকাছি একজন প্রথম কোন ডেথ সার্টিফিকেট লিখে বেশ উত্তেজনা প্রকাশ করেছিল আমার কাছে, আমি অবাক হয়েছিলাম। সময়ের প্রবাহে নাকি খুব একটা কিছু বোধ হয় না।

তবে মন নামক আপাত-আপেক্ষিক বস্তুটির নিঃশেষ হয়ে যাওয়া আমাকে ভীত করে তোলে।
বুড়োত্বের ভয় আমার সেইখানেই।
অজরামর কোন প্রাণের প্রত্যাশা আমি করি না। জরাকে আমি জীবনের সঙ্গী বলেই বোধ করি।
মৃত্যু আমার কাছে রোমান্টিক কোন ধারণা নয়, হয়তো নতুন কোন পথ খুলে আছে শ্যামসম মরণ এর ওপারে।
তবুও অপ্রিয় সে।
বড্ড অপ্রিয়। দাসের হেঁটে চলা জীবনেও সে অনাকাঙ্খিত।

----
জুন ২৬, ২০০৭।
একই সাথে সচলায়তনে প্রকাশিত।
----
সচলায়তন : চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির

মঙ্গলবার, জুন ১৯, ২০০৭

এইসব দিনরাত্রি - ৩

আগে মনে করতাম, শুধু আমিই অভিনয়ে পটু। ২৪ ঘন্টা অথবা ১৪০০রও বেশি মিনিট আগে সে ধারণায় ভুল ভাঙলো। আমার গবেষণাসন্দর্ভ বিষয়ক ব্যাপার-স্যাপার এর জন্যে যে গবেষণাকক্ষটিতে আমি সংযুক্ত, তার মধ্যম কর্তাটি যখন গবেষণাকর্মের সাথে জড়িত সবার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছেন এক মহান বক্তৃতার মাধ্যমে, তখন মুঠোফোন টি হঠাৎ বেজে ওঠে এবং আমাকে যোগাযোগ দেয়া হয় কেন্দ্রীয় মুঠোফোন কক্ষে।
কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে আমি কাকলি কন্ঠে কারও রেখে দেয়া মেসেজ শুনতে পাই এবং বুঝতে পারি, কিছু একটা বড়সড় ঝামেলা ইজ কুকিং।

তারপর ১৮০ মিনিট কেন্দ্রীয় প্রসেসিং ইউনিটে তথ্য ইনপুট করার পর ঝামেলার বিষয়বস্তু আমি বুঝতে পারি ।
আমি হতবিহ্বল হয়ে পড়ি এবং বুঝতে পারি, চারপাশের সবাই খুব পাকা অভিনয়-শিল্পী।

শুভাকাঙ্খীদের জন্যে বার্তা রইলো যে, আমি আপাতত নিজের আসল অস্তিত্বেই এবং আসল ঠিকানাতেই আছি।
এবং আমি অর্থোডক্স হলেও প্রাচীনপন্থী নই আর, আবেগতাড়িত হলেও যুক্তিহীন, অন্ধ নই।


--------------
ডিসক্লেইমার:
"এইসব দিনরাত্রি" র ব্যাপারস্যাপার গুলো জাস্ট কিছু দৈনন্দিন খসড়া ,ইচ্ছে করেই দুর্বোধ্য করে তোলা।
খুব একটা মনোযোগ দিয়ে না পড়ার অনুরোধ করি। মাথা ব্যথা ধরার সম্ভাবনা খুব বেশি।

রবিবার, জুন ১৭, ২০০৭

ফিরতেই তো চাই, বাবা!

সরীসৃপ আমি অপছন্দ করি। ছোটবেলার একটা স্মৃতি এখনো আমাকে ভয়ানুভূতিতে আন্দোলিত করে ।

আমি আমাদের লিচু গাছটার নীচে একটা জলচৌকিতে শুয়ে আছি, পাশে তিনি।
একটা সাপ উপর থেকে আমাদের জলচৌকিতে প্রায় আমার গায়ে এসে পড়ে, কিছুক্ষণ পর তাঁর কোলে নিজেকে আবিষ্কার করি।
সাপটাকে পরে মারা হয়।

তিন-চার বছর বয়সের স্মৃতি কারও মনে থাকে?
কেন যেন আমার মনে আছে।
সেবার আমার ঘাঁড় শক্ত হয়ে যাওয়ার অসুখ হয়েছিল। তিন অথবা চার তখন। বাড়িতে মামা সম্পর্কীয় একজন বড় ভাই-বোনদের পড়াতেন, তাঁর কাছে আমিও বসে যেতাম পড়তে।
অক্ষরজ্ঞান রপ্ত হয়নি তখনো।

বাচ্চার মেনিনজাইটিস - ডাক্তার বলে। তিনি চাকুরিতে লম্বা ছুটি নিয়ে আমাকে কোলে নিয়ে বসে থাকেন লিচু গাছটার নীচে।
একগাদা ইনজেকশন, সন্ধ্যাবেলায় দিতে আসতো এক ডাক্তার।

সন্ধ্যাবেলা, অন্ধকারটা যখন একটু জড়িয়ে আসে, লিচু গাছটার ওপাশে খড়ের গাদাগুলোকে আবছা অন্ধকারে ভৌতিক কোন মূর্তির মতো মনে হয়, কুকুরে কামড়ে দেয়া আম গাছটার ওপারের ধুলো ওড়ানো রাস্তাটা ধরে হাটে যাওয়া মানুষগুলো ফিরতে শুরু করে যখন - সেই সময়ে।
বাবার কোলে বসে আমি, ধমনী খুঁজে না পেয়ে ডাক্তার ব্যাটা নাকানি-চুবানি খায়।

লিচু গাছটা এখনো আছে, চাঁপা গাছটার পাশে, গোরস্থানের ঠিক সামনে।
সেই গাছটা দেখলে আমি এখনো ভয় পাই। সরীসৃপের স্মৃতি মনে পড়ে আমার।

মেনিনজাইটিস সেরে যাওয়ার এক বছর পরে আমরা গ্রাম ছাড়ি, শহরে আসি জনকের চাকুরি সূত্রে।
শহর বললেও সে এক মফস্বল - করতোয়া নদী আর একটা ছোট ব্রীজ, চিরে ফেলেছে মফস্বল শহরটাকে - জনকের আঙুল ধরে ছোট সৌরভ হাঁটে, শীতে জনকের কোলে চড়ে হিমালয় দেখার চেষ্টা করে।
দুপুরে বাড়িতে খেতে আসা গুরুগম্ভীর বাবার পাশে গুটিসুটি মেরে অপ্রিয় দুপুরি-ঘুম দিয়ে দেয় এক প্রস্থ। বাবাটা যেন কেমন, বাইরে কতো মজা, দুপুরে না ঘুমুলেই হয়না?

-----------------------

তারপরের গল্প যেরকম হয়, সেরকমই।
আমি, সৌরভ বড় হয়ে যাই অন্য সবার মতো। জীবনের প্রয়োজনে বাড়ি ছাড়ি, মফস্বল ছাড়ি, শেষ পর্যন্ত দেশও ছেড়ে দিতে হয়।
বছরে এক-আধবার যাই বাড়িতে।

প্রতিবছরই বাবাকে দেখি - অনুভব করি - বুড়ো হয়ে গেছেন আগের বারের থেকে আরেকটু ।
গুরুগম্ভীর বাবা, যাকে আমার বন্ধুরাও ভীষণ ভয় পেতো, আমরা ভাই-বোনেরা পড়াশুনো না করে টিভি দেখতাম বলে যিনি এক আছড়ে ভেঙে ফেলেছিলেন যন্ত্রবাক্সটা - নিজের জন্যে অনুভব করি তাঁর আকুলতা ।
ফোনে শুনি - কবে আসবি?
রেগেমেগে উল্টোপাল্টা বলি - সামারে ইন্টার্ন করবো, হ্যান করবো - সময় নাই আসার
এপারে বৃষ্টি ঢাকি, "বাবা, আসতে তো চাই সবসময় - কতো শেকল" ।

বাবা, জানো, আমি এখনো সরীসৃপের স্বপ্ন দেখি, ঘেমে উঠে ঘর ঠান্ডা করতে সুইচ টিপি।
পঞ্চগড়ে আমরা যখন থাকতাম, তখন প্রচন্ড ভূমিকম্পে কোন এক ভোরে তুমি পাঁচ-ছয়বছরের একটা ভারী বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বাড়ির বাইরে ছুটে গিয়েছিলে, মনে পড়ে, বাবা?
আমার মনে পড়ে।
এখন যে মাঝেমধ্যেই ভূমিকম্প হয় মাঝরাতে।

বহুদিন ইচ্ছে করে, জিজ্ঞেস করি - পিতঃ, এই অক্ষম সন্তানকে নিয়ে কোন স্বপ্ন করেছিলে কি রচন?
করা হয়না, করতে পারিনা।
বাবার সাথে দূরত্ব অনেক এখন।
কয়েক হাজার কিলোমিটার অথবা কয়েকটা দেয়াল।

দূরত্ব অথবা সে দেয়াল অতিক্রমের সাধ্য আমার নেই।

জুন ১৭, ২০০৭
-----
ছবিটা প্রাসঙ্গিক, সেই লিচু গাছটা ছবিতেই আছে

শনিবার, জুন ১৬, ২০০৭

তাঁদের মুখচ্ছবি

এই লিংকটা কেন যে বুকমার্ক করেছিলাম, জানি না।

ছবিগুলো সাদা-কালো, খুবই প্রফেশনাল হাতে তোলা অবশ্যই। আলো-আধাঁরির সমন্বয়ের অভাব অনুভূত হবার কোন সুযোগ নেই।
অল্প কিছু মুখ, অনেকগুলো মুখের প্রতিনিধি।

কোনটাতে ফটোগ্রাফার এর ইচ্ছাকৃত শৈল্পিক অস্পষ্টতা, চোখের দৃষ্টি কারও অনেকদূরে - জীবনযুদ্ধটা জিততে পারেননি অনেকে - সেই বোধও স্পষ্ট।
একজন শ্মশ্রুমণ্ডিত, দুহাত তুলে অপার প্রার্থনা স্রষ্টার প্রতি । পাশেই আরেকজন ধূমপান করছেন। অদ্ভূত সহবাস

অনেক গল্প।
আমাদের জন্মের সাথে জড়িত।
আমাদের এবং ৩৬ এর তরুণ এই ভূ-খন্ডের।

১৯৯৮র ডিসেম্বর উনিশে চলে যাওয়া আবুল হোসেইন র হাস্যোজ্জ্বল চেহারা আমাদের মনে করিয়ে দেয় - যে আবেগ দিয়ে তিনি চিৎকার দিয়েছিলেন "জয় বাঙলা", তার জন্যে তিনি কোনদিন অনুতাপবোধ করেননি।
চশমার ভিতর থেকে আবু সুফিয়ান এর যে দৃষ্টি, তাতে অবশ্য নিজেদের হাতে জন্ম নেয়া রাষ্ট্রের পচনে তাঁর হতাশাই আমি অনুভব করি।
কিংবা নিজেকে হারিয়ে ফেলা খালেদ - যাঁকে ২৫শে মার্চের রাতে গান গাওয়ার অপরাধে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাঁর দৃষ্টি ক্যামেরা ছাড়িয়ে ধরা থাকে অন্য কোথাও। স্থিরচিত্রে শব্দ থাকেনা, কিন্তু আমার কানে তাঁর গান বাজতে থাকে।
ধীরেন্দ্র কুমার দেব রেন্টগেন ছবি দেখাতে থাকেন। তাঁর তীব্র দৃষ্টির কাছে আমি ক্ষুদ্র হয়ে যেতে থাকি।

আমি এই ছবিগুলো বারবার দেখি, সহ্য করতে পারি না, তারপরও।
কেনো, বলতে পারবোনা।

আমার জন্ম মুক্তিযুদ্ধের এক যুগ পরে, আমার সহোদরদের সবার জন্ম একাত্তুর বা তার পরে।
আমার বাবা সত্যিকার অর্থে মুক্তিযোদ্ধা নন, শুনেছিলাম - শেষ সময়ে ট্রেনিং নিতে গিয়েছিলেন, সম্মূখযুদ্ধে অংশ নেননি। আমার পরিবারে নেই কোন যুদ্ধের ক্ষত। তবু্ও আমার নার্ভ এই ছবিগুলো মেনে নিতে পারেনা।
আমার লজ্জ্বা হতে থাকে।

আচ্ছা, যুদ্ধটা যদি এই মূহুর্তে হতো, আমি অথবা আমরা কি গাইতাম "মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি" ।
যে হাতে আমরা ধরি প্রিয়জনের নরম হাত, সেই নীরিহ-রুক্ষ হাতে তুলে নিতাম কি কোন অস্ত্র?
অথবা, একাত্তুরে এই আমিই যদি হতাম ২৪-২৫ এর তরুণ, তাহলে?

আবু সুফিয়ান বা ধীরেন্দ্র কুমার দেব দের আবেগ বা ভালোবাসার কাছে নিজেকে পিঁপড়াসম তুচ্ছ মনে হতে থাকে।


-----------------------------------
সবগুলো ছবির লিংক: দৃক গ্যালারি

দৃক গ্যালারির আবীর আবদুল্লাহ এই ছবিগুলো তুলেছিলেন,
কলেজগেট মোহম্মদপুরের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা বিশ্রামাগার থেকে, ১৯৯৭ তে।
ছবি কপিরাইট : আবীর আবদুল্লাহ।

শনিবার, জুন ০৯, ২০০৭

ঘরে ফেরার গান

ওপারে মেঘলা পৃথিবী, এপারে বিক্ষিপ্ত মন আর ক্লান্ত দেহ।
যান্ত্রিক শবের সাথে মাখামাখি।
মুঠোফোনের চিৎকারে যে দিনের শুরু হয়, তার শেষ বলে কিছু থাকেনা। পুরোটাই প্রবাহের মতো।
শুরুটা-শেষটা বোঝার উপায় নেই ।
ছুটতে ছুটতে হারিয়ে ফেলি নিজের শেকড়।

মাঝে মাঝে ভাবতে বসি আকাশ-পাতাল, ছাইপাশ। পুরো জগতটাই হয়ে ওঠে আমার ভাবনা-ঘর।
নিজেরেই শুধাই,
"আমার আমি, আর কতো?"
উত্তর পাই না ।
আসলে, উত্তর থাকেনা এসবের।

"উত্তর থাকতে হয় না" - বেশি বেশি সত্যবান হলে এমনটাই বলা উচিত।
তবুউউউ.. ঘরে ফিরতে মন চায়।
ঘরে।

---------------
ঘরে ফেরার গান, মহিনের ঘোড়াগুলি
গানের কথা - (কৃতজ্ঞতা :: হযু দা )