শনিবার, মে ১৯, ২০০৭

আবর্জনা, পুতুলীয় মহামান্যগণ এবং অযৌক্তিক রাজ্যচিন্তা

ওরা বিপ্লব নিয়ে আসে । ভাবতেই আবার প্রস্রাবের চাপটা প্রচণ্ড হয়ে উঠলো রাশেদের । ওরা রাতে আসে, আসার দিনটার নাম দেয় বিপ্লব দিবস; এসেই ওরা রাস্তায় ছেলেদের চুল ছাঁটে, মেয়েদের ঘোমটা পরায় ।

ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল , হুমায়ুন আজাদ

----------------------------------------------------------
আবর্জনা সাফ করবে - প্রতিশ্রুতি দিয়ে একদল ফেরেশতা হঠাৎ নেমে এলেন আকাশ থেকে।
তাঁরা নেমে এলেন হঠাতই ।
সময়টা ভীষণ দুর্যোগের ছিলো, ছিলো অন্ধকারের - বোকার বাক্সের লোকেরা রাষ্ট্রীয় প্রাসাদটির সামনে থেকে প্রতিনিয়তই নানা রকম প্রলাপ শুনিয়ে যাচ্ছিলেন ।

তাঁরা এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন।

আমরা বরাবরই ফেরেশতা দের ভয় পাই - কারণ তারা কোন এক অজানা ঈশ্বর সম্প্রদায়ের সমর্থনপুষ্ট।
ফেরেশতাদের আবির্ভাবে আমাদের জবান বন্ধ হয়ে গেলো - খাদ্য গ্রহণ, ত্যাগ, সঙ্গম হয়ে উঠলো আমাদের প্রধান কর্ম।
মহামান্য ফেরেশতাবর্গের সুন্দর বাচনভঙ্গিতে আমরা মুগ্ধ হয়ে হাততালি দিতে দিতে হাতের চামড়া তুলে ফেলি। রাষ্ট্রীয় শূয়রের খোঁয়াড়টিতে আমরা যাদের বসিয়েছিলাম - তাদের ময়লা পরিষ্কার করতে গিয়ে - মহামান্যেরা হাত নোংরা করতেই থাকেন ।
আমরা মুগ্ধ হয়ে আশায় বুক বাঁধি, নিজেদের রাষ্ট্রবিষয়ক দুঃস্বপ্নগুলো থেকে মুক্তির সময় এসে গেছে মনে করে ।

সময় কাটতে থাকে।
পদ্মার পানি শুকোতে থাকে ।
(দুর্জনেরা বলেন, সেটা নাকি বিগ ব্রাদারদের চক্রান্ত, আমি অবশ্য তা বলিনা, আসলে এই সময়টায় পদ্মার পানি এমনিতেই কমে যায় - আমার শৈশবের অভিজ্ঞতা তাই বলে)

এদিকে রাজধানী নগরে পায়ে হাঁটার পথ গুলো এতোটাই ঝকঝক করতে থাকে যে - আমরা আমাদের প্রতিবিম্ব দেখতে পাই ।
নিজেদের বাড়িতে আয়না নামের বস্তুটি বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করে ফুটপাতের ঝকঝকে প্রতিফলন দিয়ে নিজেদেরকে সাজাতে থাকি।

তবে ধীরে ধীরে আমরা বধির ও অন্ধ হয়ে যাই ।
আরেকটু বিস্তারিত বললে, আমরা যে তথ্যমাধ্যমগুলো দিয়ে শুনতাম - আর দেখতাম - সেগুলো দিয়ে মহামান্যরা কীভাবে সুর করে সংগীত চর্চা করছেন - সেই বর্ণনা ভেসে আসে ।
লেখার অক্ষরে এবং বোকার বাক্সের পর্দায় আমাদের "কথা বলার ও শোনার অধিকার" ধর্ষিত হতে থাকে ।

তার মাঝেও যেটুকু শুনতে পাই, তাতে যা বুঝতে পারি -
শূয়রের খোঁয়াড়টিতে যারা নিজেদের মধ্যে অশ্লীল কাইজ্যায় লিপ্ত ছিলেন - তারা এতদিন আসলে কোন পাপই করেননি - শুধু চাঁদ কে নিয়ে নিজেদের মাঝে বাজি ধরে গেছেন।
আমরা মুগ্ধ হই আবারও ।

গুরু পাপীদের লঘু পাপে অভিযুক্ত করার নাটকীয় যেসব কূটকচাল - তাতে ব্যস্ত থাকতে গিয়ে রাজ্য উচ্ছন্নে গেলেও তাতে মহামান্যেরা আরো পুতুলীয় হয়ে ওঠেন - এক ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে যান -

যেহেতু, ইতিহাসের অভিজ্ঞতা বলে, এইসময় উলুখাগড়াকে পিষ্ট করতে হয় - তাই

চলেশ রিছিল কে আমরা বাঁচতে দিই না।
রাষ্ট্রীয় আইনী ম্যানুয়ালের ৫৪ নম্বর নিয়মটির বলে নাসিরউদ্দিনরা কোনদিন কারও সাতে-পাঁচে না থেকেও রাষ্ট্রের অতিথিখানায় আপ্যায়িত হতে থাকেন।
তাসনিম খলিল আটক হন, যেহেতু তাঁর নামের পাশে ব্র্যান্ড থাকে, ব্র্যান্ড এর মানুষেরা থাকেন, তিনি অষ্টপ্রহর পরেই বাড়ি ফিরে আসেন ।
কিন্তু, আহমেদ নূরেরা মুক্তি পান না। তার পাশে দাঁড়ানোর মত ক্ষমতাবান শক্তি খুঁজে পাওয়া যায়না ।

রাজ্যটা কে চালায় আমরা বুঝতে পারি না - অনেকে বোঝার চেষ্টাও করি না ।
আট আনা প্রতি মিনিট মুঠোফোন প্যাকেজে আমরা বিভোর হয়ে থাকি , আমাদের আয় থেকে ব্যয় এর ব্যবধান যাদের ঋণাত্মক, তারা কীভাবে কী করবো ভেবে পাই না - ছুটতেই থাকি, ছুটতেই থাকি ।

দ্রব্যমূল্য বস্তুটি আমাদের নাগালের বাইরে চলে যেতে থাকে, রাজ্যের স্টিয়ারিং ফেরেশতাদের হাতে থাকুক আর শয়তানের - আমাদের আর কিছু যায় আসে না ।
দেশে শান্তির সুবাতাস বইছে - মনে করে ঘুমিয়ে কাটানোটাই বেশি বাস্তব সল্যুশন মনে হয় ।
তাই আমরা ঘুমোতেই থাকি নিশ্চিন্তে।
ফ্যান ছেড়ে - জানলা খুলে দিয়ে ।

যারা ঘুমোতে পারি না, তাদের কাছে রাহু বড় দীর্ঘ মনে হয়।
সুড়ঙ্গের শেষে থাকা আলো আমরা অনুভবও করতে পারি না ।

মে ২০, ২০০৭
--------------

১.ছবি কৃতজ্ঞতা
২.নাসিরউদ্দিন এর উপরে আসিফ নজরুল এর কলাম এর স্ক্রীনশট

কোন মন্তব্য নেই: