মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারী ১৩, ২০০৭

প্রলাপ - ২

আবার আউলা লাগে সবকিছু ।
মাথা ব্যথা - দুঃস্বপ্ন, ক্লান্তি অথবা অপটু অভিনয়।
পাহাড় মাথার উপরে, হাটুঁতে জোর পাই না, ভেঙে পড়ি ।
সিন্দবাদের ভূত কে স্বপ্নে দেখি, ব্যাটা আবার বসতে চায় সেই পাহাড়টায়।

দূর ছাই বলে আরেকটা দিন শুরু করি - সব অশুভ একসাথে এসে পড়ে একই দিনে - গোলকধাঁধায় আটকে যাই - বেরুতে পারিনা - কে যেন ডাকতে থাকে ক্ষীণ স্বরে - মেয়েকণ্ঠ - ঠের করতে পারি না । মা ?
মা এরকম বাচ্চা গলায় ডাকবে কেনো ?

সবকিছু ফ্লাশব্যাক হয়ে সামনে আসতে থাকে ।
একটা বাস - মাথা টিপে ধরে বসে আছি - হ্যাঁ আমিই - পাশে এক লোক আনন্দলোক নিয়ে বসে থাকে - বোধহয় পূজোসংখ্যা - চিনি বোধহয় লোকটাকে - কিছু কিছু অতিসংবেদনশীল সেল জানান দেয় - আমি তখন জানালার দিকে তাকিয়ে - একটা ট্রাক ওভারটেক করে চলে যায় । নাকেমুখে ধূলো এসে ঢোকে ।
আমার চোখে জল । আমার লজ্জ্বা করতে থাকে - ইসস্ - লোকটা যদি আমাকে চিনে ফেলে ।

দৃশ্য পাল্টায়।
আমার বেড়ে ওঠা শহরে পৌঁছে যাই ।
অন্ধজনে দেহ আলো - বড় রাস্তার এই অন্ধকার কোণায় লোকটা অবিরল পবিত্র গ্রন্থ মুখস্থ বলে যায় - মনে পড়ে একবার ৫০ টাকার একটা নোট গুঁজে দিয়েছিলাম হাতে - না দয়ায় নয় - নিজের পাপমুক্তির জন্যে - কষ্ট করে কোচিং সেন্টারে গলা বেচা টাকা।
পাপেরাও সামনে চলে আসে । গোলকধাঁধাটা ঘুরতেই থাকে - আরেকটু পেরুলে কৈশোর - একটা ছেলে কাঁদছে - মাগরিব এর আজান - একটা মাঠ - একা বসে ।
ঈশ্বর দুঃখ গুলো বিলিবন্টনে এতো বোকামি করে বসে আছে কেন - ভেবে পাই না - এই গোলকধাঁধার ভিতরে থেকে ।

আমি ঘুরতেই থাকি - শৈশব দেখতে ইচ্ছে করছে না ।
শৈশব টা আমার জানা ।
চোরাবালি এসে পড়ে - ছেলেটা তলিয়ে যাচ্ছে - প্যাঁচপ্যাঁচে কাঁদায় ...
চোখ বন্ধ করে ফেলি । আমার ভয় করতে থাকে ভীষণ ।
জীবনটা বায়স্কোপ হলে তো হতোই !
সত্যিই কে যেন ডাকছে - নাহ ... মা নয় ।
আমি স্মৃতি হাতড়াই - পাতাগুলোতে কিছুই লেখা নেই - কারও সাথে মিল খুঁজে পাই না ।


শেকল দিয়ে বাঁধা সবকিছু - আমি অন্ধের মতো হাত দিয়ে চারপাশ অনুভবের চেষ্টায় ব্যর্থ হই ।
আমি ডুবতে থাকি - গোলকধাঁধা টা অন্ধকার হয়ে যায় ।
নীল মরচে পড়া স্বপ্নেরা আলো ছড়ায় - হিমভরা বাতাসে সেই কণ্ঠটা হেসে ওঠে - আমি নিজের শেকড় খুঁজে পাই না - একটা চিৎকার দিই - অসহ্য লাগে সবকিছু - অসহ্য ।


--------

নির্বাসন, ফাল্গুনের প্রথম দিন
ছবি : কৃতজ্ঞতা Flickr , কপিরাইট : CCL

কোন মন্তব্য নেই: