দেশে কেমন যেন একটা ব্ল্যাক-আউট ধরনের পরিস্থিতি ।
তার মাঝে বাবার বদলি চাকুরি সূত্রে রংপুর থেকে রাজশাহী এসেছি কয়েকদিন আগে ।
স্কুলে যাই- বার্ষিক পরীক্ষা হবে কি হবে না - তার ঠিক নেই - তবুও যাই - ভাইয়া নিয়ে যায় - গুজব শুনি -পরীক্ষা হবে না - সবাইকে অটোপ্রমোশন দিয়ে দেয়া হবে । দেশের কী হবে সেটা নিয়ে চিন্তা করার বয়স আমার নয় ।
আমার পরীক্ষা দেবার ইচ্ছা - নতুন ভর্তি হয়েছি -আগামী বছরেও এই ৫৭ কিংবা ৫৮ গোছের রোল নিয়ে উপরের ক্লাসে উঠবো - সেইটা আমার পছন্দ না - তাই ।
আমার কলেজ পড়ুয়া মেজ ভাই সন্ধ্যায় বিবিসি ছেড়ে দেয় - আমিও ছোট মানুষ খুব মনোযোগ দিয়ে শুনি - বিবিসির খবর শুনে আর সন্ধ্যায় পৌঁছানো সংবাদ নামের নিউজপেপারটি থেকে যা বুঝি, তাতে মনে হয় - সামরিক ব্যারাক থেকে আসা শাসকটির পতন বোধহয় সময়ের ব্যাপার মাত্র ।
একমাত্র রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনটিতে শাসকটির বন্দনা করে নানানরকম অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় অবশ্য ।
রাজনীতি নিয়ে আমি ক্ষুদ্র মানুষটি খুব একটা না বুঝলেও দুজন নেত্রীকে দেখে মুগ্ধ হই। আপসহীন নেত্রী, গণতন্ত্রের মানসকন্যা নানানরকম প্রশংসাবাক্য শুনতে পাই আশপাশে ।
তারপর রক্তক্ষয় হয় - একদিন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনটিতে দেখি - হিটলার এর মতো গোঁফঅলা একজন মানুষ শপথ নিচ্ছেন - মানুষটির আঞ্চলিকতা মাখানো মুখে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ শুনে আমার বাবা-ভাই আশায় বুক বাঁধেন - দেশটা বদলে যাবে এই ভেবে ।
রাষ্ট্রীয় বোকার বাক্সটি বদলে যায় রাতারাতি - সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয় -দারুণ সব অনুষ্ঠান হতে থাকে, বিদায়ী শাসকটির দুশ্চরিত্র কিংবা অসদাচার অথবা দুর্নীতির হিসেব একের পর এক আসতে থাকে সংবাদপত্রগুলোতে ।
আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ি - সবার আগে পেপার পড়াটা আমাদের বাসায় একটা প্রতিযোগিতার মত ব্যাপার ।
সেই গল্প আরেকদিন বলবো ।
আমরা রক্তের হিসেব শুনি - নুর হোসেন কিংবা মিলন - নামগুলো সম্মানের সাথে উচ্চারিত হতে থাকে চারপাশে । স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা দেই।
পরীক্ষা শেষ - আমিও ভাইয়ার সাথে বিবিসি শোনা বন্ধ করে চাদর মুড়ি দিয়ে , আমার রাশগম্ভীর বাবার পাশে বসে আটটার সংবাদ শোনা শুরু করি ।
বার্ষিক পরীক্ষায় রোলও চলে আসে একেবারে সামনে , অবশ্য লাভ হয় না - পরের বছর স্কুল বদলাই - আবার চলে যেতে হয় সবার পেছনে ।
ফ্লাশব্যাকের এখানেই শেষ ।
---------------------------------------
আজকে প্রথম আলোর সান্ধ্য সংস্করণের খবর দেখি, আবদুল জলিল - যিনি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বেশিরভাগ মানুষের সমর্থন থাকা রাজনৈতিক দলটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদটিতে আছেন - ১৬ বছর আগে বিদায় নেয়া পতঙ্গসম দুর্নীতিবাজ শাসকটির পক্ষে সাফাই গাইছেন ।
এই বর্ষীয়ান মানুষটি কয়েকদিন আগে কোন এক ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সাথে কি এক চুক্তি করেছেন - ফতোয়া দেয়ার লাইসেন্স দেয়া হবে মোল্লাদের - তার বদলে তারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেবেন ।
আমি দাঁতে দাঁত চেপে একটা খুব অশ্লীল গালি দিই আমার বাবার বয়েসী এই মানুষটিকে - এই দলটির অবিবেচক নেত্রীকে ।
শুধু নির্বাচন জেতার জন্যে এরকম অশ্লীল কিছু ষড়যন্ত্র না করলেই হয় না ?
যৌন উত্তেজনায় হুঁশ-জ্ঞান লোপ পাওয়া পুরুষ জন্তু আর ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে যাওয়া এই রাজনৈতিক দল টির মাঝে কোন পার্থক্য আর চোখে পড়ছে না এই মুহুর্তে ।
আপসহীন নেত্রী টিকে এতদিন দেখতাম জটিল ধরনের মেক-আপ মেরে রাজাকার হুজুরদের সাথে পাশাপাশি বসে থাকতে ।
আর এখন গণতন্ত্রের মানসকন্যা টিকে আমরা দেখতে পাচ্ছি - চোর, জঙ্গিদের সাথে নিয়ে গোঁফে তেল দিয়ে গাছে থাকা কাঠাল এর আগাম ভাগাভাগি করতে।
এরপর আমরা কোথায় যাবো ?
প্রিয় বাংলাদেশ আর কত ধর্ষিতা হবে - এই নোংরা রাজনীতি দিয়ে ?
আমরা তো এ বাংলাদেশ চাই নি - আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে এ কোন বাংলাদেশ রেখে যাচ্ছি ?
ফিরিয়ে আনো বাংলাদেশ - বন্ধ করো এই নোংরা রাজনীতি চর্চা ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন