শুক্রবার, ডিসেম্বর ২৯, ২০০৬

প্রিয় বাংলাদেশ

১৬ বছর আগের এই সময়টা আজ হঠাৎ মনে পড়ে গেল ।
দেশে কেমন যেন একটা ব্ল্যাক-আউট ধরনের পরিস্থিতি ।
তার মাঝে বাবার বদলি চাকুরি সূত্রে রংপুর থেকে রাজশাহী এসেছি কয়েকদিন আগে ।

স্কুলে যাই- বার্ষিক পরীক্ষা হবে কি হবে না - তার ঠিক নেই - তবুও যাই - ভাইয়া নিয়ে যায় - গুজব শুনি -পরীক্ষা হবে না - সবাইকে অটোপ্রমোশন দিয়ে দেয়া হবে । দেশের কী হবে সেটা নিয়ে চিন্তা করার বয়স আমার নয় ।
আমার পরীক্ষা দেবার ইচ্ছা - নতুন ভর্তি হয়েছি -আগামী বছরেও এই ৫৭ কিংবা ৫৮ গোছের রোল নিয়ে উপরের ক্লাসে উঠবো - সেইটা আমার পছন্দ না - তাই ।

আমার কলেজ পড়ুয়া মেজ ভাই সন্ধ্যায় বিবিসি ছেড়ে দেয় - আমিও ছোট মানুষ খুব মনোযোগ দিয়ে শুনি - বিবিসির খবর শুনে আর সন্ধ্যায় পৌঁছানো সংবাদ নামের নিউজপেপারটি থেকে যা বুঝি, তাতে মনে হয় - সামরিক ব্যারাক থেকে আসা শাসকটির পতন বোধহয় সময়ের ব্যাপার মাত্র ।
একমাত্র রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনটিতে শাসকটির বন্দনা করে নানানরকম অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় অবশ্য ।

রাজনীতি নিয়ে আমি ক্ষুদ্র মানুষটি খুব একটা না বুঝলেও দুজন নেত্রীকে দেখে মুগ্ধ হই। আপসহীন নেত্রী, গণতন্ত্রের মানসকন্যা নানানরকম প্রশংসাবাক্য শুনতে পাই আশপাশে ।
তারপর রক্তক্ষয় হয় - একদিন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনটিতে দেখি - হিটলার এর মতো গোঁফঅলা একজন মানুষ শপথ নিচ্ছেন - মানুষটির আঞ্চলিকতা মাখানো মুখে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ শুনে আমার বাবা-ভাই আশায় বুক বাঁধেন - দেশটা বদলে যাবে এই ভেবে ।
রাষ্ট্রীয় বোকার বাক্সটি বদলে যায় রাতারাতি - সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয় -দারুণ সব অনুষ্ঠান হতে থাকে, বিদায়ী শাসকটির দুশ্চরিত্র কিংবা অসদাচার অথবা দুর্নীতির হিসেব একের পর এক আসতে থাকে সংবাদপত্রগুলোতে ।

আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ি - সবার আগে পেপার পড়াটা আমাদের বাসায় একটা প্রতিযোগিতার মত ব্যাপার ।
সেই গল্প আরেকদিন বলবো ।

আমরা রক্তের হিসেব শুনি - নুর হোসেন কিংবা মিলন - নামগুলো সম্মানের সাথে উচ্চারিত হতে থাকে চারপাশে । স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা দেই।
পরীক্ষা শেষ - আমিও ভাইয়ার সাথে বিবিসি শোনা বন্ধ করে চাদর মুড়ি দিয়ে , আমার রাশগম্ভীর বাবার পাশে বসে আটটার সংবাদ শোনা শুরু করি ।
বার্ষিক পরীক্ষায় রোলও চলে আসে একেবারে সামনে , অবশ্য লাভ হয় না - পরের বছর স্কুল বদলাই - আবার চলে যেতে হয় সবার পেছনে ।

ফ্লাশব্যাকের এখানেই শেষ ।

---------------------------------------

আজকে প্রথম আলোর সান্ধ্য সংস্করণের খবর দেখি, আবদুল জলিল - যিনি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বেশিরভাগ মানুষের সমর্থন থাকা রাজনৈতিক দলটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদটিতে আছেন - ১৬ বছর আগে বিদায় নেয়া পতঙ্গসম দুর্নীতিবাজ শাসকটির পক্ষে সাফাই গাইছেন ।
এই বর্ষীয়ান মানুষটি কয়েকদিন আগে কোন এক ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সাথে কি এক চুক্তি করেছেন - ফতোয়া দেয়ার লাইসেন্স দেয়া হবে মোল্লাদের - তার বদলে তারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেবেন ।

আমি দাঁতে দাঁত চেপে একটা খুব অশ্লীল গালি দিই আমার বাবার বয়েসী এই মানুষটিকে - এই দলটির অবিবেচক নেত্রীকে ।
শুধু নির্বাচন জেতার জন্যে এরকম অশ্লীল কিছু ষড়যন্ত্র না করলেই হয় না ?
যৌন উত্তেজনায় হুঁশ-জ্ঞান লোপ পাওয়া পুরুষ জন্তু আর ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে যাওয়া এই রাজনৈতিক দল টির মাঝে কোন পার্থক্য আর চোখে পড়ছে না এই মুহুর্তে ।

আপসহীন নেত্রী টিকে এতদিন দেখতাম জটিল ধরনের মেক-আপ মেরে রাজাকার হুজুরদের সাথে পাশাপাশি বসে থাকতে ।
আর এখন গণতন্ত্রের মানসকন্যা টিকে আমরা দেখতে পাচ্ছি - চোর, জঙ্গিদের সাথে নিয়ে গোঁফে তেল দিয়ে গাছে থাকা কাঠাল এর আগাম ভাগাভাগি করতে।
এরপর আমরা কোথায় যাবো ?

প্রিয় বাংলাদেশ আর কত ধর্ষিতা হবে - এই নোংরা রাজনীতি দিয়ে ?
আমরা তো এ বাংলাদেশ চাই নি - আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে এ কোন বাংলাদেশ রেখে যাচ্ছি ?
ফিরিয়ে আনো বাংলাদেশ - বন্ধ করো এই নোংরা রাজনীতি চর্চা ।

সোমবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০০৬

কনফেশন - ২

" ......
এখন আমি সব বিমানবিক স্বপ্ন দেখি,
আগুন, কিংবা পথক্লান্তি - কোনটাকে
কারণ হিসেবে দাড় করাবো এখনো ঠিক করা হয়ে ওঠেনি ।
ভালবাসা মাখানো সম্পর্ক গুলোর কাছে
কী ই বা রেখে যাবো, জানি না ।

চাকাপিষ্ট আনন্দ দের জন্যে কষ্ট হয়না যে, তাও নয় ।
তবু্ও আমার বিলু্প্তির সব প্রস্তুতি আজ সম্পন্ন ।
বিমানবিক স্বপ্নেরা এখন তৈরি ।
"
--"বিলুপ্তি" ডিসেম্বর ১৭, ২০০৬

আমি জানি আমার মধ্যে সামান্য প্রতিভার ছিঁটেফোটাও নেই - তবুও ও কবিতাটা লেখা।
আমি জানি - যখন নতুন কিছু করতে বলা হয় আমাকে, তখন ভীষন অসহায় বোধ করতে থাকি ।
কষ্ট পেতে থাকি নিজের মধ্যে - যা আমাকে দিয়ে হবার নয় -- তাই যখন করতে হয় ।

আমি ভন্ড ।
না ধর্মে বিশ্বাসী - না অবিশ্বাসী ।
না-ইসপার, না-উসপার - একটা অর্থবিহীন মাঝামাঝি অবস্থা :: কোন দলেই নেই ।
ভেঙে পড়লে ঈশ্বরকে ডাকি - সুবিধাবাদী পার্থিব জীব আর কি ।
অন্য সবার মতো - স্বাতন্ত্র্যবিহীন - নিজের প্রতি সম্মানহীন - ধর্ম-কর্ম-ঈশ্বর করেই বা কী এসে যায়, নিজেই যখন নিজের পতনের কারণ ।
নিজেই যখন তলিয়ে যাই - তখন ভুলে থাকা ঈশ্বর এসে উদ্ধার করবেন - ব্যাপারটা বড় বেশি অপটিমিস্টিক হয়ে যায় ।

অন্যেরা কী ভাবে - এই নিয়ে মাথা ঘামাই বেশি ।
হাসি, মজা করি - মিথ্যে কথা বললাম - মজা করার ভান করি - তারপরের নীরবতাটুকু খেয়াল করে না কেউ ।
(.... ধুর শালা- এবি র গান হয়ে গেলো - কনফেশন দিতে এসে প্যানপ্যান করা শুরু করলাম )

অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করি কতো - কিছুতেই কিছু হয় না - তাই সেটা বাদ দিয়ে এখন অন্ধকারেও যাতে থাকা যায় সেই পথ খুঁজি । নিজেকে খোলা বই হিসেবে তুলে ধরি - তারপরে কেউ পড়তে চাইলে তাকে বাধা দিই ।
পরস্পরবিরোধিতা আমাকে কুরে কুরে খায় ।

ছেলেবেলায় ভাল ছিলাম বড্ড বেশি বোধহয় - গুডি গুডি ভাব - এই বড়বেলায় সেটা থেকে গেছে কিছুটা - তাই কারও আচরণে এ্যারোগ্যান্স দেখলে তার কাছাকাছিও যেতে ইচ্ছে করে না - এখন অবশ্য জোর করে মানিয়ে নিতে হয় উদ্ধত মানুষগুলোকেও - নিজের স্বার্থেই ।
অভিনয়ে কাঁচা - তাই ঔদ্ধত্য যে সহ্য করতে পারি না - এটা বুঝে ফেলে অবশ্য গৌরবে মাটিতে পা না ফেলা মৃত্তিকাজীবগুলো ।
কী আর করা - আমার মতো পুরনো তেলাপোকাও যে আজো বিলুপ্ত হয়ে যায় নি - এইটুকু বুঝুক - এটাই চাওয়া ।

মাঝে মাঝে কান্না পায় নানানরকম কারণে ।
একটা বড় মানুষ কাঁদছে - তাও আবার ছেলে মানুষ - ব্যাপারটা দেখতে খুব একটা ভালো লাগার কথা নয় ।
তাই বুকের ভেতরে বৃষ্টি ঢাকি ।

বাইরে ভীষন বৃষ্টি হচ্ছে - ঝুম বারিধারা - সেই সাতসকালে মুঠোফোনে ফরওয়ার্ড হওয়া মেইল পেয়ে ঘুম ভেঙেছে - তাই এই বছর শেষের ছুটির সময়েও ছুটে এলাম সন্দর্ভ বিষয়ক হাবিজাবি র জন্যে ।
( ....ধুর, কনফেশনটা যুতসই হচ্ছে না )

বড্ড মনে পড়ে ছেলেবেলাটা - সেই বন্ধুগুলো, পুরনো ধূসর হয়ে গেছে সব মুখ এখন ।
স্বপ টার সাথে অনেকদিন দেখা নেই - বেশ মুটিয়ে গ্যাছে শুনেছি :: একবার উল্টো পথে আসা রিকশায় আধো অন্ধকারে দেখেছিলাম - সাথে ওর বান্ধবী - তাই জোরে ডাক দিতে পারিনি ।
ইচ্ছে করেছিল অবশ্য ডাকতে ।
কিংবা অবন, সেই যে দূরত্ব তৈরি হতে থাকলো - আর কমানোর চেষ্টা করা হয়নি - শেষবার কথা হয়েছিল আহসানউল্লাহ র গেস্ট রুমের সামনে - আমি কালো চাদরে বামপন্হী টাইপের একটা ভাব নিয়ে হেঁটে যাওয়ার পথে - তোরে তো জোশ্ লাগতেসে - এরকম একটা কিছু হবে ওর বলা কথাটা ।
সব শালা ধূসর হয়ে গ্যাছে - আমার কী দোষ !
সব শালা বাস্তববাদী হয়ে গেছে ।

আমিই বা কতটা আগের মত আছি ?
বদলে গেছি অনেক ।
তবু্ও ধরি মাছ না ছুঁই পানি র স্বভাবটা বদলায় নি - ঝামেলা দেখলেই খেলবো না বলেই পালানোর স্বভাবটা পাল্টায়নি আজও ।
এই যে - জীবনটা কষ্টকর ঠেকছে বলে পালাতে চাইছি সবকিছু ছেড়ে ।
রবি রেমান তো পালায় নি ।
তবে আমি পালাই ক্যানো ?

-------------------------------------