আশির দশকে একজন স্বৈরশাসক, যার নামের প্রথম অংশকে সংক্ষিপ্ত করে অনেকে হোমো নামে উল্লেখ করে থাকেন, আমাদের জন্যে রাষ্ট্রীয় ধর্মের ব্যবস্থা করেছিলেন । তিনি তার ধর্মের কতটুকু বিশ্বাস ও পালন করতেন, সেটা এখানে খুব একটা বিবেচ্য বিষয় নয় ; তবে তার চরিত্র কতটুকু উন্নত ছিল সেটা লিখে আমার এই পোস্টকে অপবিত্র করতে চাই না ।
তার আগে জলপাই বাহিনী থেকে আসা আরেকজন শাসক ধর্মনিরপেক্ষতা নামের অংশটি মুছে ফেলে ইসলামিকরণ করে ফেলেন রাষ্ট্রকে ; অপ্রাসঙ্গিক ভাষায় বললে, আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের খতনা দেয়ার ব্যবস্থা করেন ।
ইতিহাস ঘাঁটা আমার কাজ নয়, আর সে সুযোগ বা যোগ্যতা কিংবা পড়াশোনাও নেই খুব একটা ।
তবে, রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে জড়িত মানুষগুলো যে হাস্যকরভাবে ধর্মের প্রতি নিজেদের বিশ্বাস উপস্থাপনের চেষ্টা করেন - এটা নিশ্চয়ই অস্বীকার করবেন না কেউ ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আন্দোলনের নেতা, যাকে আমরা ৭৫ এ মেরে ফেলেছিলাম, তাঁর কন্যা, যিনি একই সাথে তাঁর পিতার রেখে যাওয়া দলটির প্রধানও ; নির্বাচন আসলে হিজাব-টিজাব ধরা শুরু করেন । নির্বাচনের আগে পীর-মুর্শিদ খুঁজে বেড়ান বলে রাজনৈতিক বাজারে কথাও প্রচলিত আছে ।
আর সদ্যবিদায়ী সরকারপ্রধান, কিছুদিন পরপর ধর্মীয় তীর্থভ্রমণ [ হ্যাঁ, সরকারি ও আরবীয় তেল সাম্রাজ্যের একনায়কদের রাজকীয় ব্যবস্হায় অবশ্যই] করে নিজের বিশ্বাস আমাদের সামনে তুলে ধরেন ::
আমরা বিশ্বাসীরা যারপরনাই মুগ্ধ হই আর ভোটপূজার মাধ্যমে তার প্রতিদান দেয়ার ব্যবস্থা করি । আপনার-আমার ধর্মানুভূতির ব্যবহার যে করে তারা চলে যান মসনদে :: তারপর ভুলে থাকেন আমাদের - তবে তাঁরা, তাঁদের আজ্ঞাবহ রা আমাদের ধর্মানুভূতির দিকে খেয়াল রাখেন - কেউ যেন আহত না করে বসে আমাদের ধর্মেন্দ্রিয়- সে ব্যাপারে কঠোর দৃষ্টি রাখেন ;
রাষ্ট্রীয় ধর্মের নয় এমন মানুষদের পুড়িয়ে মারা হয়, লাইসেন্সপ্রাপ্ত কালো কুকুরের দল আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে বিনা বিচারে হত্যার তালিকা লম্বা করতে থাকেন, সংবাদজীবীরাও হিসাব রাখতে পারেন না সে হত্যার, সে হত্যা ধর্মসিদ্ধ কি না - এ নিয়ে ধর্মের নামে ফেনা তুলে ফেলা বিশ্বাসীরা কেউ প্রশ্ন তোলে না ।
আমাদের পোশাক-শিল্পীরা, যাদের কল্যাণে মেইড ইন বাংলাদেশ লেখা ট্যাগ শোভা পায় প্রথম বিশ্বের মানুষের পরিধেয় পোশাকে ; সম্মান ও প্রাণ হারান বাড়ি ফেরার পথে ।
পিতা-পুত্রকে টুকরো টুকরো করে ফেলে রাখা হয় রাজধানী থেকে দূরে, আমাদের ক্যাবল টিভিতে সে দৃশ্যের ঝাঁপসা ভার্সন প্রচারিত হয় ।
আরও কত কিছু ঘটে রোজ, আমরা খবর দেখে আর পড়ে শেষ করতে পারি না ।
তবুও আমাদের কোন ই

আমরা কেউই বলিনা যে, এই ঘটনায় আমি মানসিকভাবে আহত হয়েছি, হ্যাঁন-ত্যান... কিংবা রাষ্ট্রের কাছে দাবি করে বসি না কোন আবদার ।
আমাদের ধর্মবিশ্বাসীরা বের করেনা কোন মিছিল, যে তাদের ইন্দ্রিয় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে -যেমনটা তারা করে সুদূরে থাকা ফিলিস্তিনীদের জন্যে ।
আর কিছু না হোক, আমাদের শাসকেরা আমাদের ধর্মানুভূতির ব্যাপারের সতর্ক থাকেন, তাই হুমায়ুন আজাদ এর রচনা নিষিদ্ধ হয়, দেশের একমাত্র পূর্নাঙ্গ বিমানবন্দরে আরবিতে স্বাগতবাণী লেখা থাকে, ইসলাম ধর্মবিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে উচ্চতর শিক্ষার মর্যাদা দেয়া হয় ;
প্রফেটের কার্টুন দেখে ধর্মানুভূতি আহত হয়েছে বলে কষ্ট করে রাষ্ট্রীয়ভাবে কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানানো হয় ডেনমার্ক সরকারকে । বৈদেশিক নীতিতে যতই দূর্বলতা থাকুক না কেন, আমাদের বলা-না-বলা কোন কাজে আসুক আর নাই আসুক, সে ব্যাপারে আমরা কার্পণ্য করি না । অথচ প্রতিবেশির সাথে সম্পর্কে টানাপোড়েনে কূটনৈতিক তৎপরতার প্রয়োজনীয়তা শাসকদের কাছে গুরুত্ব পায় না ।
কারণ আমাদের ধর্ম-ইন্দ্রিয় শাসকদের কাছে বেশি জরুরি ।
কিন্তু, আসল কথাটা জোরে-সোরে বলতে আমাদের ভয় করে । আমরা ভীরু আর সবকিছু ছাপিয়ে অসহায় ছা-পোষা মধ্যবিত্ত - এত জটিল সব ব্যাপার-স্যাপারে আমাদের কিছু যায় আসে না ।
আমরা একবার আ.লী. রে ভোট দিই তো - পরের বার বা.জা.দ রে - নে তোরাই ভাগ করে নে - এরকম একটা ভাব থাকে স

আমরা জানি - এরা কেউই ধর্ম নিয়ে বড়-বড় কথা নির্বাচনের পর আর বলবে না - মোল্লাগিরি ইলেকশন শ্যাষ হইলে খতম ।
কিন্তু, ধর্মব্যবসায়ীরা তো কম যায় না - ওরা টিকে থাকে তেলাপোকার মতো - লালসালুর মজিদ এর মতো উড়ে এসে জুড়ে বসে আপনার-আমার ধর্মের রক্ষাকর্তা হয়ে দাঁড়ায় - আমাদের ধর্ম বেচে খায় । রাষ্ট্রের প্রতিনিধিপরিষদেও বসে পড়ে ।
আমার ধর্ম ইন্দ্রিয় আমার - তার জন্যে এই তেলাপোকাগুলোর দরকার আছে কি ?
প্রার্থনা করবো - তেলাপোকাদের বিনাশ হবে , আর শাসকেরা ক্ষমতায় থাকার জন্যে ধর্মের উপরে ভর করবেন না - সেই নতুন দিনের অপেক্ষায় ।
বামের ছবি : খতমে নবুয়ত আন্দোলন নামের একটি গ্রুপের আহমদিয়া দের মসজিদ ভাঙার দৃশ্য - ডেইলি স্টার থেকে নেয়া
ডানের ছবি : লালসালু, "Tree Without Roots" ; তানভীর মোকাম্মেল এর ফিল্ম থেকে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন