রবিবার, অক্টোবর ২৯, ২০০৬

অজ্ঞাতনামা আপনার প্রতি

প্রিয় নাম না জানা মানুষটি,
আমরা, বাঙালি - রাজনীতি নিয়ে মাথা বেশি ঘামাই ।
আমাদের পেটে ভাত থাকে না, বাড়িতে রাতে রান্নার চাল আছে কি না- তার ঠিক নেই, বিদ্যুত কিংবা পানি - সে অনেক পরের কথা ::
তারপরও আমরা মাথা ঘামানো থামাই না ।

আমাদেরই পকেটে চালানো নির্বাচন; কে চালাবে, না চালাবে - সেটাও ঠিক করতে আমরা ভেড়া বলি দিই ।

জানি না, আপনি সাধারণ মানুষের কাছে প্রায় অবোধ্য - রাজনীতি বা রাষ্ট্রনীতি - নামের অদ্ভূত বস্তুটির সাথে জড়িত ছিলেন কি না - তাতে অবশ্য কিছু যায় আসে না এখন আর। কারণ, আপনার আলাদা কোন অস্তিত্ব নেই, আপনি এখন ১১ জনের মাঝে একজন মাত্র

হ্যাঁ, এগারো - আজকের বলি সংখ্যা

কোথায় যেন শুনেছিলাম, নামবিহীন মৃত্যু মানুষের সবচেয়ে বড় দূর্ভাগ্য

আমি কিন্তু তা মনে করি না । কারণ, দূর্ভাগ্য কিংবা সৌভাগ্য - সবই আপেক্ষিক ব্যাপার-স্যাপার


জানি না - সকালে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আপনাকে কেউ সাবধানে থাকতে বলেছিল কি না কিংবা আপনার জন্যে অপেক্ষায় কেউ কাল রাত পার করে সকাল পর্যন্ত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে কি না


কিংবা আপনার আয়ের উপরে বেঁচে আছে বড় কোন পরিবার - আমাদের পোড়ার দেশে যা হয় ।
ঈশ্বর তার বা তাদের সহায় হোন ।
এইটুকু প্রার্থনা করা ছাড়া খবরের কাগজে একনজর আপনার ছবি দেখে - ছবিটা তো জটিল অথবা দেশটার কী হইলো - টাইপের কোন কমেন্ট করে পরের খবরে চোখ দেয়া আমরা আর কিছুই করবো না


হয়তো আপনি কোন কিছু না জেনেই পল্টন ময়দানে মানুষ দেখতে বেরিয়েছিলেন, কিংবা পেট বাঁচানোর জন্যে কোন প্রয়োজনে বাইরে বেরিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন কুকুর-শেয়ালদের মাঝখানে, যাদের কাছে আপনি কিংবা আমি - কেউ জরুরি নই - জরুরি ক্ষমতার দখল । নেতা-নেত্রীরা তাদের বাপ-স্বামীর জমিদারি ছাড়া আর কিছুই মনে করছেন না এই দেশটাকে - আপনি হয়তো ছেড়ে যাবার আগে ব্যাপারটা উপলব্ধি করেছেন । এরাই, এদের প্রতিনিধিরাই আপনার নিকটজনের কাছে ভোট চাইতে যাবে কিছুদিন পর ।

আপনি আমাদের ক্ষমা করবেন, আমাদের অভিশাপ দিতে চাইলে দিতে পারেন ।

আমরা কেউই অস্বীকার করতে পারি না - আপনার এ অসময়ে চলে যাওয়ার দায়ভার - কারণ কিছুদিন পরে আমরা এই কুকুর-শেয়ালগুলো কেই সমর্থন করবো - নির্বাচনে ।



----------
পল্টন মোড়ে প্রথম আলোর চিত্রগ্রাহক সাইফুল ইসলামের ক্যামেরায় বন্দী হওয়া সেই নাম না জানা মানুষটির উদ্দেশ্যে