মঙ্গলবার, আগস্ট ২৯, ২০০৬

প্লিজ, আমাদের আর স্বপ্ন দেখাবেন না

আমি এই দেশের কোন ভবিষ্যৎ দেখি না । আমি এই দেশের কোন ভবিষ্যৎ দেখি না।
- আনিসুল হক, গদ্যকার্টুন, আগস্ট ২৯ এর প্রথম আলো

শুধু প্রথম আলো থেকে উদ্ধৃতি দিই বলে কেউ বিরক্তিবোধ করলেও করতে পারেন, সেরকম কেউ থেকে থাকলে আপনার বিরক্তিবোধের প্রতি শ্রদ্ধা রইল ।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর লেখার সাথে প্রথম পরিচয় কপোট্রনিক সুখ-দুঃখ এর মাধ্যমে, মুগ্ধ হয়েছিলাম; তারপর প্রত্যাশা বেড়েছে, মোটামুটি অর্ধেক বই-ই পড়া হয়েছে, সময়ের সাথে সাথে সাই-ফাই গুলো কিছুটা গতানুগতিক হয়ে ওঠেনি, তা নয় অবশ্য :: [ তাঁর সমালোচনা বহন করার যোগ্যতা এই ব্লগের নেই, তবু মুক্তবাজার অর্থনীতির এই যুগে তার বইয়ের একজন ক্রেতা হিসেবে এইটুকু র জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করছি ]

কিন্তু, তাঁর সাদাসিধে কলাম পড়ে মস্তিষ্কে স্পন্দন অনুভব করেছি, আমরাও একদিন গ্রহণের এই কাল থেকে বের হয়ে আসব - নিজেকে নতুন করে বিশ্বাস করাতে ইচ্ছে করেছে :: মাঝেমধ্যে মনে হতো, আমাদের শাসন ব্যবস্থার সাথে জড়িত সবার বাধ্যতামূলক পাঠ্য হওয়া উচিত দেশের জন্যে অসাধারণ ভালোবাসা মাখানো এই লেখা গুলো :: বাচ্চাদের স্কুলে কিংবা সব পাঠাগারে অবশ্যই এই স্বপ্ন দেখানো মানুষটির সব বই রাখা উচিত ।

আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের আবাস হবে তাঁর লালন করা স্বপ্নের বাংলাদেশ; সাধারণ জনমানুষের অর্থে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয় দিনের পর দিন তালা লাগানো থাকবে না, তুচ্ছ অজুহাতে পরীক্ষা পেছাও আন্দোলন হবে না ; ছাত্রেরা শিক্ষককে উদ্দেশ্য করে তোরে ফালাইয়া দিমু টাইপের শব্দমালা ব্যবহার করবেনা কিংবা সংখ্যালঘু অথবা আদিবাসী, শব্দগুলোর মাধ্যমে মানুষের মাঝে বিভাজনের চেষ্টা কেউ করবেন না - যারা তাঁর লেখা পড়েন - আন্দোলিত হন না এরকম কেউ আছেন বলে আমি মনে করি না ।

আমার মত নৈরাশ্যবাদী প্রাণিও তখন আশাবাদী হয়ে ওঠে, তাঁর স্বপ্নের মিছিলের পেছনের সারিতে দাঁড়িয়ে পড়তে ইচ্ছে করে । ভোরের কাগজ পড়তাম আগে , এখন প্রথম আলো পড়ি - মুহম্মদ জাফর ইকবাল লিখেন বলে - খবরের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ পোষণের কোন কারণ থাকলে তিনি লিখবেন না - এই বিশ্বাস আছে তাই ।

আনিসুল হক একটা কল্পকাহিনী লিখেছিলেন - আমার এই মুহূর্তে নাম মনে পড়ছে না - দেশের শাসনক্ষমতা অন্ধ, কূপমন্ডুক ধর্মীয় মৌলবাদীরা দখল করে ফেলেছে, প্রগতিশীল সব মানুষের বিচার করা হচ্ছে - বিষয়বস্তু এরকম ::

এই মুহূর্তে চিন্তা করলে সেটা আর কল্পকাহিনী বলে মনে হয় না , আমরা অন্ধকারের পথে অনেকদূর চলে এসেছি , শ্বাপদেরা এখন নখর দেখায় খোলাখুলি :: আমরা স্তম্ভিত হই, কিন্তু কোন প্রতিবাদ করার সাহস পাই না, আমাদের রাষ্ট্রশাসনের সাথে জড়িত কদাকার মস্তিষ্কের মানুষগুলো তাদের অপরিষ্কার দাঁত দেখায় :: আমাদের স্বপ্ন দেখানোর মানুষগুলো ভয় পান না অবশ্য, তারা বাতির আলোটা আরো একটু বাড়িয়ে দেন

কিন্তু আমাদের ভয় করে, আমরা যে ঘরপোড়া গরু - সাম্প্রতিককালে প্রিয়জনদের নিরাপত্তা আমরা দিতে পারিনি - আমরা স্বপ্ন দেখা বন্ধ করতে বাধ্য হই ।

স্বপ্ন দেখা বন্ধ করার বিনিময়ে যদি প্রিয় মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়, আমরা তাতে প্রস্তুত ।


-------
[১. আমি সারাজীবনই ব্যাকবেঞ্চার, সেজন্যে]
[২. প্রথম আলো আসার আগে, ১৯৯৩-'৯৭ ]

বুধবার, আগস্ট ২৩, ২০০৬

শুক্রবার, আগস্ট ১৮, ২০০৬

কবি-মহীরুহ

যেখানে সূর্যের তলে আকাঙ্খিত সুন্দরের গাঁথা
নিসর্গে মধুর মতো, ফুলের পাঁপড়ির মতো ঝরে
অথবা যেখানে গাঢ় চন্দ্রবোড়া সঙ্গিনীর শাখায় আকুল

ঋতুর মতো রণে পরাক্রান্ত, সেখানে আমার অভিলাষ অভিসারী–

সুন্দরের গাঁথা ; "প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে"
শামসুর রাহমান ( ১৯২৯, অক্টোবর ২৪ - ২০০৬, আগস্ট ১৭ )
...............................................................................

প্রিয়জন হারানোর বেদনা অনুভব করছি ::
আমাদের মননের অভিভাবক চলে গেছেন আমাদের উদ্ভট উটের পিঠে ফেলে রেখে ;
জীবনবিরোধী শ্বাপদেরা যখন সময়ের লাগাম টেনে ধরে আমাদের যাত্রাকে প্রতিহত করার চেষ্টায় রত, তখন আমাদের এই ক্ষতি ।
তিনি থাকবেন মহীরুহের মত অসীম সময়কাল পর্যন্ত ।

শুক্রবার, আগস্ট ১১, ২০০৬

কবির জন্য ভালোবাসা

সম্প্রতি আপনি খুব আশাবাদী আর প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিলেন
কিন্তু আপনি কি জানেন যে আমরা কোথাও নেই ? যারা
স্বপ্ন দেখে সুন্দরের , পচে যাওয়া সমাজ-রাষ্ট্রকে যারা গোলাপের
মতো সুন্দর দেখতে চায় , যারা মনুষ্যত্ব-মানবিকতাকে
ভোরের আলোর মতো সত্য বলে মানে , আপনি কি জানেন তারা
কোথাও নেই ? আমরা তো উদ্বাস্তুর মতোই রয়েছি বাঙলায়

আপনি কি খুব জোর দিয়ে বলতে পারবেন যে আপনার
পায়ের নিচের মাটি খুব শক্ত ? শক্ত মাটি তো শুধু নষ্টদের
পদতলে । আমরা, শামসুর রাহমান , চোরাবালির ওপর
দাঁড়িয়ে রয়েছি


"শামসুর রাহমানকে দেখে ফিরে" - হুমায়ুন আজাদ
( আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে , নন্দন প্রকাশন , ঢাকা ১৯৯০ )
............................................................................

প্রয়াত হুমায়ুন আজাদ লিখেছিলেন ১৬ বছর আগে, সেই সময় হাসপাতালে চিকিত্সাধীন কবি শামসুর রাহমান কে দেখে ফেরার পর :: ধন্যবাদ প্রথম আলো কে, কবিতাটা পুনর্মুদ্রণের জন্যে।

কবি অসুস্থ ।
আসাদের শার্ট রক্তাক্ত করে কিংবা সখিনা বিবির কপাল ভেঙে, হরিদাসীর সিঁথির সিঁদুর মুছে ফেলে আসা স্বাধীনতা যখন বিপন্ন , পুরনো শকুনদের ছোবলে ; নব্য সামন্ততন্ত্র, মৌলবাদ, মন্ত্রীতন্ত্র আর রাষ্ট্রনীতির পাতানো খেলা নামের একগাদা অসুখে যখন আমাদের মানবিক স্বপ্নগুলো আক্রান্ত, তখন আপনি ভালো নেই । আপনার কি হাসপাতালে শুয়ে থাকলে চলে ?
প্রিয় কবি , আপনি সেরে উঠুন ; আপনাকে আমাদের প্রয়োজন :: আপনার কলম আবার জেগে উঠুক ।
আমরা হুমায়ুন আজাদ কে হারিয়েছি আজ থেকে ২ বছর আগে ; মন কু ডাকে, আপনাকে হারাতে চাই না ।
কবি, আপনার জন্যে ভালোবাসা ।

------
পাদটীকা::
১. টাইটেল টা আজকের প্রথম আলোয় প্রকাশিত কবিপত্নীর লেখা থেকে নেয়া
২. কিছুটা হলেও স্বত্ব বিষয়ক ব্যাপার-স্যাপার গুলো মেনে চলার চেষ্টা করি , তাই পুরো কবিতা তুলে দিচ্ছি না

বৃহস্পতিবার, আগস্ট ০৩, ২০০৬

লজ্জা

দেখছিলাম আসাহি র ১০টার নিউজ - মূল ক্যাস্টার ইচিরো ফুরুতাচি কে ছাড়াই আজকের নিউজ - সুন্দরী সংবাদ উপস্থাপক মূল দায়িত্বে - বড় অংশ জুড়ে আবহাওয়া সংবাদ :: না, জাপানের আবহাওয়া নিয়ে নয় - পৃথিবীজুড়ে উষ্ণতার মাত্রা বৃদ্ধি কিংবা সম্পর্কিত অন্য কিছু ।

হ্যাঁ, গরম পড়ছে - আজকের টোকিও ৩২°সে. - না, সংবাদের বিষয় সেটা নয় - খবর হচ্ছে, স্যাম চাচাদের দেশে গরম বাড়ছে - আজকের আসাহি নিউজ স্লটের প্রায় পুরোটাই স্যাম চাচাদের উদ্দেশ্যে নিবেদন ; শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার থেকেও বেশি - ইসস্ ... মুখ দিয়ে অজান্তেই চুকচুক টাইপের একটা অশ্লীল শব্দ করে ফেলি ।



ব্যস্ত ছিলাম কয়েকটা দিন - এমন একটা জায়গায় ছিলাম, ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ হয়নি, বোকার বাক্স ছিল - তবে খোলার সময় হয়নি :: Qana নামের একটা জায়গার নামও জানা ছিল না :: লেবানন নিয়ে খুব একটা তথ্য জানার সুযোগ হয়নি - পৃথিবী ঘোরার সুযোগ খুব একটা হয়নি বলে :: এই নামে লেবাননে একটা গ্রাম আছে -এটা জানার কোন কথাও নয় ।

হঠাৎ জেনে ফেললাম, সব্বাই জেনে গেল ; ধুর ভুল বকি - সব্বাই নয় বোধহয়, এই আধাযান্ত্রিক আর স্বার্থবাদী পৃথিবীর অনেক দোপেয়ে-ই জানে না -ওদের কাছে স্যাম চাচাদের দেশে গরম পড়ে, সিরিয়াল কিলার ধরা পড়ে - সেই নিউজ বেশি গুরুত্ব পায় ;

কম গুরুত্বপূর্ণ নিউজ হিসেবে আসে রক্তাক্ত মানুষের ছবি, কংক্রিটের ধ্বংসস্তুপ :: একজন বাবা তার সন্তানকে ক্যামেরার সামনে তুলে ধরেন, প্রাণহীন কিংবা রক্তাক্ত - ইসরায়েল কী জিনিষ, সেইটুকু বোঝার মত বুদ্ধিবৃত্তির বয়সে পৌঁছায় নি এখনো - তবুও মূল্যটা তাকে দিতে হয় ।
আমার লজ্জা লাগে - আমি আমেরিকার মুভি দেখে মুগ্ধ হই, সুকৌশলে আমেরিকান প্রপাগান্ডা এমবেড করে দেয়া পপ্ , কান্ট্রি মিউজিক শুনি, আমেরিকান KFC (হোক জাপানি ভার্সন ) চিকেন খেয়ে কর্ণেল সাহেবের রান্নার রেসিপির প্রশংসা করে কূল পাই না ::

আমি কী করবো ভেবে পাই না - আপাততঃ টিভি বন্ধ করি, Orkut কিংবা Gree তে লগইন করি - সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং নামের এই ভার্চুয়ালিটি - সবাই বেশ এনজয় করছে, মনে হয় - আমি নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পাই না কোথাও ।

নাম না জানা মানুষগুলো, যারা স্যাম চাচাদের কুকুরের হামলার শিকার হয় - তাদের কাছে আমার ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়া কিছু করার থাকে না - অভিশাপ দেওয়া ছাড়া তুচ্ছ ক্ষমতার এই আমি কী ই বা করতে পারি ?

আমার ভীষণ লজ্জা করতে থাকে ।