শনিবার, এপ্রিল ১৫, ২০০৬

আমাদের কিছু যায় আসে না

এ লেখার প্রথম অংশটা অনেকদিন আগে লিখতে চেয়েছিলাম । লেখা হয়ে ওঠেনি ।

রাষ্ট্রের নাগরিক তালিকায় আমার নাম আছে কি না আমি জানি না :: এ জাতীয় কোন বস্তুর অস্তিত্ব আদৌ আছে কি না জানতেও ইচ্ছে করছে না , তথাকথিত গণতন্ত্রে মত প্রয়োগের সুযোগও হয়নি কখনো :: তবু এ লেখাটা আমি লিখবো ।

বাঙালি অথবা বাংলাদেশী জনগোষ্ঠী সমালোচনা অথবা আলোচনার মত ব্যাপারে ভীষণ অপটু ; বাঙালির রাজনৈতিক আলোচনার তাপমাত্রা সাধারণত খুব সহজেই বেড়ে ওঠে , উষ্ণ থেকে হয়ে ওঠে উত্তপ্ত , হালকা থেকে মোড় নেয় ভারী কোন ব্যক্তিগত আক্রমণে ।
এরকম কোন একটা অলস আলোচনায় 'র ' আদ্যোক্ষরের এলিট ফোর্স এর বদান্যতায় আমাদের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কীভাবে বদলাচ্ছে - এ নিয়ে সবাইকে বেশ ইতিবাচক একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে দেখে ভালো লাগছিল ।

ভালো লাগছিল এই জন্যে যে আমরা তাহলে বদলাতে পেরেছি , সুবিধাবাদী ধনতান্ত্রিকতা দিয়ে বানানো রিসাইকল্ যোগ্য প্যাকেটে মোড়ানো গণতন্ত্রের সুফল আমরা পেয়ে গেছি এবং বুঝে গেছি যে , ব্যাপারটা ভীষণ সুস্বাদু, যদি আমরা হেরে যাওয়া-দের দলে না থাকি ।

আমরা খুব সহজেই প্রশংসা করবো এমন কোন কিছুর যেটা আমার (শব্দটা 'আমাদের' নয় ) পক্ষে যায় এবং মাথা ঘামাবো না এমন কিছু নিয়ে যেটার কোন প্রভাব আমার জীবনে নেই :: আমাদের দাতা প্রভূদের দেশের গণতন্ত্রের ম্যানুয়ালে এমনটাই লেখা আছে এবং সেটাই ট্রেন্ড এখনকার । আমরা এখন ২৪ ঘন্টা আপটুডেট থাকবো বিভিন্ন কারওয়ানবাজার ভিত্তিক ক্যাবল চ্যানেলের মাধ্যমে, সরাসরি সিলেট থেকে দেখতে পাবো আমাদের এলিট ফোর্সের কর্মদক্ষতা :: প্রমাণ করবো যে আমরা আসলে এগিয়ে গেছি ।

এরপর আমরা টাইম পড়বো ; এর অনেক রকম ভার্সন এর কোন একটায় চপার এর জানলা দিয়ে অপলক তাকিয়ে থেকে পোজ দেয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তার শব্দমালা আমাদের মুগ্ধ করবে :: আমরা জানবো না বা জানার চেষ্টা করবো না এর পেছনের কারাকুরি ....


কানা বক্কর , মুরগী মিলনদের বিচার না করে রাষ্ট্র আমাদের বুঝিয়ে দেবে যে , আসলে বিচারব্যবস্থাটা চোর-ছ্যাঁচরদের জন্যে ; কানা এবং মুরগী জাতীয় পদবীধারীদের জন্যে সেটার দরকার নেই , আমরা হ্যাঁ ও বলবোনা , না ও বলবোনা কারণ তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না :: আমরা দেখবো আমাদের পাশের বাড়ির শান্ত ক্রিকেটপাগল ছেলেটাও একদিন এলিট ফোর্সের দপ্তর থেকে ফিরে আসবে না - আমরা ব্যাপারটা জানবো কোন সুন্দরী সংবাদ উপস্থাপকের আধুনিক বাংলা উচ্চারণ এবং হৃদযন্ত্রের অসুখ আছে এমন মানুষদের দেখা বারণ সব তথ্যচিত্র সমৃদ্ধ কোন রিপোর্ট থেকে :: কারণ আমরা এখন ভীষণ ট্রেন্ডি ।


আমরা দেখবো আলোয় ভরা মেগাসিটি থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে কোথাও কিছু চাষাভুসো মানুষ হাইসাঁও এবং লাঠিসোটা নিয়ে আলোর জন্যে বিদ্রোহ করে বসবে -

আমরা হ্যাঁ ও বলবোনা , না ও বলবোনা কারণ তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না :: আমরা রাষ্ট্রের কর্মদক্ষতা দেখবো এবং অপেক্ষা করবো বিজ্ঞাপনের পর আরো আপডেটের জন্যে :: কারণ আমরা এখন ক্ষুধার্ত আপডেটেড থাকার জন্যে ।

আদ্যোক্ষরের একজন মেয়র-কাম-এমপি ( যাকে তার শহরের মানুষ অনেকদিন থেকে দেখে আসছে, প্রতি ঈদে শহরের সবচেয়ে বড় জামাতে হাজির হয়ে আশ্বাস দেন শহরটাকে এশিয়ার সেরা শহর বানানোর , আমরা যারা চোখে দেখতে পেতাম তারা শহরটার কোন পরিবর্তন দেখিনি কখনো যদিও, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে আমরা চোখে দেখতে পেতাম ) - তার আশ্বাসবাণী দিয়ে ভোলানোর চেষ্টা করবেন সেই চাষাভুসো মানুষগুলোকে :: এবং ব্যর্থ হবেন , কারণ ওরা অনেকবার একই আশ্বাস শুনেছে বিভিন্ন ফরম্যাটে ।

আমরা দেখবো, একজন মা তার ছেলের রক্তমাখা শার্ট দেখাচ্ছেন , কিংবা একজন ঘরকুনো গিন্নির হাতে হাইসাঁও


আসুন, আমরা এর থেকে মেগাসিরিয়াল দূরের মানুষ অথবা সাঁড়ে একানব্বই দেখবার জন্যে চ্যানেল বদলাই । আমাদের কী যায় আসে এরকম খবরে ?

--------------
১ :: জাপানি শব্দ ; অর্থ : মেকানিজম :: শব্দটার উদ্ভব চাবি ঘুরিয়ে চালানো যায় এরকম পাপেট থেকে
২ :: ভারী এবং বাঁকানো কাস্তে , রাজশাহী অঞ্চলে ব্যবহৃত প্রতিশব্দ

২টি মন্তব্য:

নামহীন বলেছেন...

tomak ki rab dhore niye gelo naki?onek din kisu lekho na je?

Tareq Nurul Hasan বলেছেন...

আপনি দারুন লিখেন!
মুগ্ধ হয়ে পড়লাম পুর লেখাটা।
এবং এখন থেকে নিয়মিত পড়ব।