শুক্রবার, ডিসেম্বর ২৯, ২০০৬

প্রিয় বাংলাদেশ

১৬ বছর আগের এই সময়টা আজ হঠাৎ মনে পড়ে গেল ।
দেশে কেমন যেন একটা ব্ল্যাক-আউট ধরনের পরিস্থিতি ।
তার মাঝে বাবার বদলি চাকুরি সূত্রে রংপুর থেকে রাজশাহী এসেছি কয়েকদিন আগে ।

স্কুলে যাই- বার্ষিক পরীক্ষা হবে কি হবে না - তার ঠিক নেই - তবুও যাই - ভাইয়া নিয়ে যায় - গুজব শুনি -পরীক্ষা হবে না - সবাইকে অটোপ্রমোশন দিয়ে দেয়া হবে । দেশের কী হবে সেটা নিয়ে চিন্তা করার বয়স আমার নয় ।
আমার পরীক্ষা দেবার ইচ্ছা - নতুন ভর্তি হয়েছি -আগামী বছরেও এই ৫৭ কিংবা ৫৮ গোছের রোল নিয়ে উপরের ক্লাসে উঠবো - সেইটা আমার পছন্দ না - তাই ।

আমার কলেজ পড়ুয়া মেজ ভাই সন্ধ্যায় বিবিসি ছেড়ে দেয় - আমিও ছোট মানুষ খুব মনোযোগ দিয়ে শুনি - বিবিসির খবর শুনে আর সন্ধ্যায় পৌঁছানো সংবাদ নামের নিউজপেপারটি থেকে যা বুঝি, তাতে মনে হয় - সামরিক ব্যারাক থেকে আসা শাসকটির পতন বোধহয় সময়ের ব্যাপার মাত্র ।
একমাত্র রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনটিতে শাসকটির বন্দনা করে নানানরকম অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় অবশ্য ।

রাজনীতি নিয়ে আমি ক্ষুদ্র মানুষটি খুব একটা না বুঝলেও দুজন নেত্রীকে দেখে মুগ্ধ হই। আপসহীন নেত্রী, গণতন্ত্রের মানসকন্যা নানানরকম প্রশংসাবাক্য শুনতে পাই আশপাশে ।
তারপর রক্তক্ষয় হয় - একদিন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনটিতে দেখি - হিটলার এর মতো গোঁফঅলা একজন মানুষ শপথ নিচ্ছেন - মানুষটির আঞ্চলিকতা মাখানো মুখে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ শুনে আমার বাবা-ভাই আশায় বুক বাঁধেন - দেশটা বদলে যাবে এই ভেবে ।
রাষ্ট্রীয় বোকার বাক্সটি বদলে যায় রাতারাতি - সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয় -দারুণ সব অনুষ্ঠান হতে থাকে, বিদায়ী শাসকটির দুশ্চরিত্র কিংবা অসদাচার অথবা দুর্নীতির হিসেব একের পর এক আসতে থাকে সংবাদপত্রগুলোতে ।

আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ি - সবার আগে পেপার পড়াটা আমাদের বাসায় একটা প্রতিযোগিতার মত ব্যাপার ।
সেই গল্প আরেকদিন বলবো ।

আমরা রক্তের হিসেব শুনি - নুর হোসেন কিংবা মিলন - নামগুলো সম্মানের সাথে উচ্চারিত হতে থাকে চারপাশে । স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা দেই।
পরীক্ষা শেষ - আমিও ভাইয়ার সাথে বিবিসি শোনা বন্ধ করে চাদর মুড়ি দিয়ে , আমার রাশগম্ভীর বাবার পাশে বসে আটটার সংবাদ শোনা শুরু করি ।
বার্ষিক পরীক্ষায় রোলও চলে আসে একেবারে সামনে , অবশ্য লাভ হয় না - পরের বছর স্কুল বদলাই - আবার চলে যেতে হয় সবার পেছনে ।

ফ্লাশব্যাকের এখানেই শেষ ।

---------------------------------------

আজকে প্রথম আলোর সান্ধ্য সংস্করণের খবর দেখি, আবদুল জলিল - যিনি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বেশিরভাগ মানুষের সমর্থন থাকা রাজনৈতিক দলটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদটিতে আছেন - ১৬ বছর আগে বিদায় নেয়া পতঙ্গসম দুর্নীতিবাজ শাসকটির পক্ষে সাফাই গাইছেন ।
এই বর্ষীয়ান মানুষটি কয়েকদিন আগে কোন এক ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সাথে কি এক চুক্তি করেছেন - ফতোয়া দেয়ার লাইসেন্স দেয়া হবে মোল্লাদের - তার বদলে তারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেবেন ।

আমি দাঁতে দাঁত চেপে একটা খুব অশ্লীল গালি দিই আমার বাবার বয়েসী এই মানুষটিকে - এই দলটির অবিবেচক নেত্রীকে ।
শুধু নির্বাচন জেতার জন্যে এরকম অশ্লীল কিছু ষড়যন্ত্র না করলেই হয় না ?
যৌন উত্তেজনায় হুঁশ-জ্ঞান লোপ পাওয়া পুরুষ জন্তু আর ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে যাওয়া এই রাজনৈতিক দল টির মাঝে কোন পার্থক্য আর চোখে পড়ছে না এই মুহুর্তে ।

আপসহীন নেত্রী টিকে এতদিন দেখতাম জটিল ধরনের মেক-আপ মেরে রাজাকার হুজুরদের সাথে পাশাপাশি বসে থাকতে ।
আর এখন গণতন্ত্রের মানসকন্যা টিকে আমরা দেখতে পাচ্ছি - চোর, জঙ্গিদের সাথে নিয়ে গোঁফে তেল দিয়ে গাছে থাকা কাঠাল এর আগাম ভাগাভাগি করতে।
এরপর আমরা কোথায় যাবো ?

প্রিয় বাংলাদেশ আর কত ধর্ষিতা হবে - এই নোংরা রাজনীতি দিয়ে ?
আমরা তো এ বাংলাদেশ চাই নি - আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে এ কোন বাংলাদেশ রেখে যাচ্ছি ?
ফিরিয়ে আনো বাংলাদেশ - বন্ধ করো এই নোংরা রাজনীতি চর্চা ।

সোমবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০০৬

কনফেশন - ২

" ......
এখন আমি সব বিমানবিক স্বপ্ন দেখি,
আগুন, কিংবা পথক্লান্তি - কোনটাকে
কারণ হিসেবে দাড় করাবো এখনো ঠিক করা হয়ে ওঠেনি ।
ভালবাসা মাখানো সম্পর্ক গুলোর কাছে
কী ই বা রেখে যাবো, জানি না ।

চাকাপিষ্ট আনন্দ দের জন্যে কষ্ট হয়না যে, তাও নয় ।
তবু্ও আমার বিলু্প্তির সব প্রস্তুতি আজ সম্পন্ন ।
বিমানবিক স্বপ্নেরা এখন তৈরি ।
"
--"বিলুপ্তি" ডিসেম্বর ১৭, ২০০৬

আমি জানি আমার মধ্যে সামান্য প্রতিভার ছিঁটেফোটাও নেই - তবুও ও কবিতাটা লেখা।
আমি জানি - যখন নতুন কিছু করতে বলা হয় আমাকে, তখন ভীষন অসহায় বোধ করতে থাকি ।
কষ্ট পেতে থাকি নিজের মধ্যে - যা আমাকে দিয়ে হবার নয় -- তাই যখন করতে হয় ।

আমি ভন্ড ।
না ধর্মে বিশ্বাসী - না অবিশ্বাসী ।
না-ইসপার, না-উসপার - একটা অর্থবিহীন মাঝামাঝি অবস্থা :: কোন দলেই নেই ।
ভেঙে পড়লে ঈশ্বরকে ডাকি - সুবিধাবাদী পার্থিব জীব আর কি ।
অন্য সবার মতো - স্বাতন্ত্র্যবিহীন - নিজের প্রতি সম্মানহীন - ধর্ম-কর্ম-ঈশ্বর করেই বা কী এসে যায়, নিজেই যখন নিজের পতনের কারণ ।
নিজেই যখন তলিয়ে যাই - তখন ভুলে থাকা ঈশ্বর এসে উদ্ধার করবেন - ব্যাপারটা বড় বেশি অপটিমিস্টিক হয়ে যায় ।

অন্যেরা কী ভাবে - এই নিয়ে মাথা ঘামাই বেশি ।
হাসি, মজা করি - মিথ্যে কথা বললাম - মজা করার ভান করি - তারপরের নীরবতাটুকু খেয়াল করে না কেউ ।
(.... ধুর শালা- এবি র গান হয়ে গেলো - কনফেশন দিতে এসে প্যানপ্যান করা শুরু করলাম )

অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করি কতো - কিছুতেই কিছু হয় না - তাই সেটা বাদ দিয়ে এখন অন্ধকারেও যাতে থাকা যায় সেই পথ খুঁজি । নিজেকে খোলা বই হিসেবে তুলে ধরি - তারপরে কেউ পড়তে চাইলে তাকে বাধা দিই ।
পরস্পরবিরোধিতা আমাকে কুরে কুরে খায় ।

ছেলেবেলায় ভাল ছিলাম বড্ড বেশি বোধহয় - গুডি গুডি ভাব - এই বড়বেলায় সেটা থেকে গেছে কিছুটা - তাই কারও আচরণে এ্যারোগ্যান্স দেখলে তার কাছাকাছিও যেতে ইচ্ছে করে না - এখন অবশ্য জোর করে মানিয়ে নিতে হয় উদ্ধত মানুষগুলোকেও - নিজের স্বার্থেই ।
অভিনয়ে কাঁচা - তাই ঔদ্ধত্য যে সহ্য করতে পারি না - এটা বুঝে ফেলে অবশ্য গৌরবে মাটিতে পা না ফেলা মৃত্তিকাজীবগুলো ।
কী আর করা - আমার মতো পুরনো তেলাপোকাও যে আজো বিলুপ্ত হয়ে যায় নি - এইটুকু বুঝুক - এটাই চাওয়া ।

মাঝে মাঝে কান্না পায় নানানরকম কারণে ।
একটা বড় মানুষ কাঁদছে - তাও আবার ছেলে মানুষ - ব্যাপারটা দেখতে খুব একটা ভালো লাগার কথা নয় ।
তাই বুকের ভেতরে বৃষ্টি ঢাকি ।

বাইরে ভীষন বৃষ্টি হচ্ছে - ঝুম বারিধারা - সেই সাতসকালে মুঠোফোনে ফরওয়ার্ড হওয়া মেইল পেয়ে ঘুম ভেঙেছে - তাই এই বছর শেষের ছুটির সময়েও ছুটে এলাম সন্দর্ভ বিষয়ক হাবিজাবি র জন্যে ।
( ....ধুর, কনফেশনটা যুতসই হচ্ছে না )

বড্ড মনে পড়ে ছেলেবেলাটা - সেই বন্ধুগুলো, পুরনো ধূসর হয়ে গেছে সব মুখ এখন ।
স্বপ টার সাথে অনেকদিন দেখা নেই - বেশ মুটিয়ে গ্যাছে শুনেছি :: একবার উল্টো পথে আসা রিকশায় আধো অন্ধকারে দেখেছিলাম - সাথে ওর বান্ধবী - তাই জোরে ডাক দিতে পারিনি ।
ইচ্ছে করেছিল অবশ্য ডাকতে ।
কিংবা অবন, সেই যে দূরত্ব তৈরি হতে থাকলো - আর কমানোর চেষ্টা করা হয়নি - শেষবার কথা হয়েছিল আহসানউল্লাহ র গেস্ট রুমের সামনে - আমি কালো চাদরে বামপন্হী টাইপের একটা ভাব নিয়ে হেঁটে যাওয়ার পথে - তোরে তো জোশ্ লাগতেসে - এরকম একটা কিছু হবে ওর বলা কথাটা ।
সব শালা ধূসর হয়ে গ্যাছে - আমার কী দোষ !
সব শালা বাস্তববাদী হয়ে গেছে ।

আমিই বা কতটা আগের মত আছি ?
বদলে গেছি অনেক ।
তবু্ও ধরি মাছ না ছুঁই পানি র স্বভাবটা বদলায় নি - ঝামেলা দেখলেই খেলবো না বলেই পালানোর স্বভাবটা পাল্টায়নি আজও ।
এই যে - জীবনটা কষ্টকর ঠেকছে বলে পালাতে চাইছি সবকিছু ছেড়ে ।
রবি রেমান তো পালায় নি ।
তবে আমি পালাই ক্যানো ?

-------------------------------------

রবিবার, নভেম্বর ১৯, ২০০৬

আমাদের ধর্ম-ইন্দ্রিয় ও প্রার্থনা

রাষ্ট্র বিষয়ক আরেকটি অর্থহীন লেখা - অনেকদিন ধরে ড্রাফট আকারে পড়ে ছিল - ভাবলাম, শেষ করে পোস্ট দিই

আশির দশকে একজন স্বৈরশাসক, যার নামের প্রথম অংশকে সংক্ষিপ্ত করে অনেকে হোমো নামে উল্লেখ করে থাকেন, আমাদের জন্যে রাষ্ট্রীয় ধর্মের ব্যবস্থা করেছিলেন । তিনি তার ধর্মের কতটুকু বিশ্বাস ও পালন করতেন, সেটা এখানে খুব একটা বিবেচ্য বিষয় নয় ; তবে তার চরিত্র কতটুকু উন্নত ছিল সেটা লিখে আমার এই পোস্টকে অপবিত্র করতে চাই না ।

তার আগে জলপাই বাহিনী থেকে আসা আরেকজন শাসক ধর্মনিরপেক্ষতা নামের অংশটি মুছে ফেলে ইসলামিকরণ করে ফেলেন রাষ্ট্রকে ; অপ্রাসঙ্গিক ভাষায় বললে, আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের খতনা দেয়ার ব্যবস্থা করেন ।

ইতিহাস ঘাঁটা আমার কাজ নয়, আর সে সুযোগ বা যোগ্যতা কিংবা পড়াশোনাও নেই খুব একটা ।
তবে, রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে জড়িত মানুষগুলো যে হাস্যকরভাবে ধর্মের প্রতি নিজেদের বিশ্বাস উপস্থাপনের চেষ্টা করেন - এটা নিশ্চয়ই অস্বীকার করবেন না কেউ ।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আন্দোলনের নেতা, যাকে আমরা ৭৫ এ মেরে ফেলেছিলাম, তাঁর কন্যা, যিনি একই সাথে তাঁর পিতার রেখে যাওয়া দলটির প্রধানও ; নির্বাচন আসলে হিজাব-টিজাব ধরা শুরু করেন । নির্বাচনের আগে পীর-মুর্শিদ খুঁজে বেড়ান বলে রাজনৈতিক বাজারে কথাও প্রচলিত আছে ।

আর সদ্যবিদায়ী সরকারপ্রধান, কিছুদিন পরপর ধর্মীয় তীর্থভ্রমণ [ হ্যাঁ, সরকারি ও আরবীয় তেল সাম্রাজ্যের একনায়কদের রাজকীয় ব্যবস্হায় অবশ্যই] করে নিজের বিশ্বাস আমাদের সামনে তুলে ধরেন ::

আমরা বিশ্বাসীরা যারপরনাই মুগ্ধ হই আর ভোটপূজার মাধ্যমে তার প্রতিদান দেয়ার ব্যবস্থা করি । আপনার-আমার ধর্মানুভূতির ব্যবহার যে করে তারা চলে যান মসনদে :: তারপর ভুলে থাকেন আমাদের - তবে তাঁরা, তাঁদের আজ্ঞাবহ রা আমাদের ধর্মানুভূতির দিকে খেয়াল রাখেন - কেউ যেন আহত না করে বসে আমাদের ধর্মেন্দ্রিয়- সে ব্যাপারে কঠোর দৃষ্টি রাখেন ;


রাষ্ট্রীয় ধর্মের নয় এমন মানুষদের পুড়িয়ে মারা হয়, লাইসেন্সপ্রাপ্ত কালো কুকুরের দল আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে বিনা বিচারে হত্যার তালিকা লম্বা করতে থাকেন, সংবাদজীবীরাও হিসাব রাখতে পারেন না সে হত্যার, সে হত্যা ধর্মসিদ্ধ কি না - এ নিয়ে ধর্মের নামে ফেনা তুলে ফেলা বিশ্বাসীরা কেউ প্রশ্ন তোলে না ।

আমাদের পোশাক-শিল্পীরা, যাদের কল্যাণে মেইড ইন বাংলাদেশ লেখা ট্যাগ শোভা পায় প্রথম বিশ্বের মানুষের পরিধেয় পোশাকে ; সম্মান ও প্রাণ হারান বাড়ি ফেরার পথে ।
পিতা-পুত্রকে টুকরো টুকরো করে ফেলে রাখা হয় রাজধানী থেকে দূরে, আমাদের ক্যাবল টিভিতে সে দৃশ্যের ঝাঁপসা ভার্সন প্রচারিত হয় ।
আরও কত কিছু ঘটে রোজ, আমরা খবর দেখে আর পড়ে শেষ করতে পারি না ।


তবুও আমাদের কোন ইন্দ্রিয়ই আহত হয় না, হয় না আঘাতপ্রাপ্ত । শাসকরাও হন না উদ্বিগ্ন ।
আমরা কেউই বলিনা যে, এই ঘটনায় আমি মানসিকভাবে আহত হয়েছি, হ্যাঁন-ত্যান... কিংবা রাষ্ট্রের কাছে দাবি করে বসি না কোন আবদার ।
আমাদের ধর্মবিশ্বাসীরা বের করেনা কোন মিছিল, যে তাদের ইন্দ্রিয় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে -যেমনটা তারা করে সুদূরে থাকা ফিলিস্তিনীদের জন্যে ।

আর কিছু না হোক, আমাদের শাসকেরা আমাদের ধর্মানুভূতির ব্যাপারের সতর্ক থাকেন, তাই হুমায়ুন আজাদ এর রচনা নিষিদ্ধ হয়, দেশের একমাত্র পূর্নাঙ্গ বিমানবন্দরে আরবিতে স্বাগতবাণী লেখা থাকে, ইসলাম ধর্মবিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে উচ্চতর শিক্ষার মর্যাদা দেয়া হয় ;

প্রফেটের কার্টুন দেখে ধর্মানুভূতি আহত হয়েছে বলে কষ্ট করে রাষ্ট্রীয়ভাবে কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানানো হয় ডেনমার্ক সরকারকে । বৈদেশিক নীতিতে যতই দূর্বলতা থাকুক না কেন, আমাদের বলা-না-বলা কোন কাজে আসুক আর নাই আসুক, সে ব্যাপারে আমরা কার্পণ্য করি না । অথচ প্রতিবেশির সাথে সম্পর্কে টানাপোড়েনে কূটনৈতিক তৎপরতার প্রয়োজনীয়তা শাসকদের কাছে গুরুত্ব পায় না ।
কারণ আমাদের ধর্ম-ইন্দ্রিয় শাসকদের কাছে বেশি জরুরি ।

কিন্তু, আসল কথাটা জোরে-সোরে বলতে আমাদের ভয় করে । আমরা ভীরু আর সবকিছু ছাপিয়ে অসহায় ছা-পোষা মধ্যবিত্ত - এত জটিল সব ব্যাপার-স্যাপারে আমাদের কিছু যায় আসে না ।

আমরা একবার আ.লী. রে ভোট দিই তো - পরের বার বা.জা.দ রে - নে তোরাই ভাগ করে নে - এরকম একটা ভাব থাকে সবার মনে ।
আমরা জানি - এরা কেউই ধর্ম নিয়ে বড়-বড় কথা নির্বাচনের পর আর বলবে না - মোল্লাগিরি ইলেকশন শ্যাষ হইলে খতম

কিন্তু, ধর্মব্যবসায়ীরা তো কম যায় না - ওরা টিকে থাকে তেলাপোকার মতো - লালসালুর মজিদ এর মতো উড়ে এসে জুড়ে বসে আপনার-আমার ধর্মের রক্ষাকর্তা হয়ে দাঁড়ায় - আমাদের ধর্ম বেচে খায় । রাষ্ট্রের প্রতিনিধিপরিষদেও বসে পড়ে ।
আমার ধর্ম ইন্দ্রিয় আমার - তার জন্যে এই তেলাপোকাগুলোর দরকার আছে কি ?

প্রার্থনা করবো - তেলাপোকাদের বিনাশ হবে , আর শাসকেরা ক্ষমতায় থাকার জন্যে ধর্মের উপরে ভর করবেন না - সেই নতুন দিনের অপেক্ষায় ।

বামের ছবি : খতমে নবুয়ত আন্দোলন নামের একটি গ্রুপের আহমদিয়া দের মসজিদ ভাঙার দৃশ্য - ডেইলি স্টার থেকে নেয়া
ডানের ছবি : লালসালু, "Tree Without Roots" ; তানভীর মোকাম্মেল এর ফিল্ম থেকে

শুক্রবার, নভেম্বর ১৭, ২০০৬

যুদ্ধ-মাতা

ভাবার সুযোগ কমে গেছে ; এরকম করে ভাবলে, জোরে কথা বললে কারা যেন আমাদের ভয় দেখায় ।
৭১ থেকে খুব কি বেশি পথ ?

অমি রহমান পিয়াল এর পোস্টে এই সম্মানিতার দৃষ্টির কাছে মাথা নত করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না । ক্ষমা চাওয়ার ভাষা আমার জানা নেই ।
ভীষণ ক্ষুদ্র মনে হচ্ছিল নিজেকে অনেকক্ষণ ।
একাত্তর এ আমার নিজের মা ও বোধহয় এমনটা বয়সের ছিলেন - আঠারো কিংবা উনিশ ।

এই ধারাবাহিক গুলো পড়তে গিয়ে বারবার চোখ ভিজে গেছে । *লিংক ১, , , ,, *
অমি রহমান এর কাছে কৃতজ্ঞতার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না ।

সূর্যের আলো দেখার সুযোগ হয়নি যে ভ্রুণের , তার আজ ভূ-খন্ডের সমান বয়স হতো :: মা অষ্টাদশ কিংবা কুড়িতে কলন্ক মাখানো সমাজের কাছে - রাষ্ট্রের স্বাধীনতা যার কাছে মূল্যহীন ।
তাঁর সম্ভ্রমহানির কথা এখনো আমরা ফিসফাস করে বলি ।

আমার জন্ম স্বাধীনতার এক যুগ পরে, আমাদের প্রজন্ম জানেনা এ দুঃখের মহাকাব্য ।

বেলা অনেক দেরি হয়ে গেছে ।
এখন আমাদের রক্তে বিদ্রোহের উদ্দামতা ডাক দেয় না ।
আমরা এখন শ্মশ্রুমন্ডিত নুরানী মুখোশের অমানুষগুলোর সাথে আলোচনায় বসি অবলীলায় ।
তারাও আমাদের কান্ডারি, নেতা, প্রতিনিধি (!)

অপরিষ্কার দাঁত মুখের কদাকার মস্তিষ্কের এই পশুগুলোর পেছনেও সাংবাদিকরা ছোটে, আমরা টেলিভিশনে তাদের উদ্ধত ভঙ্গির বক্তব্য শুনে কী করবো ভেবে পাই না ।
এখনো বোধহয় নিঃশব্দে কাঁদে কোন মা - অব্যক্ত ব্যথায় দাঁতে দাঁত পেষে কোন স্বজন ।
কতই বা বয়স হবে ?
১৮র সাথে ৩৫ যোগ করলে তো খুব বেশি হয় না ।

৭১ থেকে খুব কি বেশি পথ ?
আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলেন ?
আমরা এখন জোরে কথা বলতে ভয় পাই ।
আমাদের এখন নরকের কীটগুলোর নোংরা মানস থেকে জন্ম নেয়া রাজনৈতিক সংগঠন কে মেনে নিতে হয় ।

৮০র দশকের কথাই চিন্তা করুন, সংবাদপত্রে এই সংগঠনটিকে প্রায় নিষিদ্ধ মনে করা হত ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজামিকে জুতোপেটা করা হয়েছিল - ২০ এর ঘর পার করা যে কেউ ভুলে যান নি বোধ হয় ।
এখন আপনি-আমিই এদের ভোট দিই ।

এ কোন অভিশপ্ত সময় ?
পাকিস্তানি বাহিনীর যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবি করে আপনি কী করবেন ?
কুকুর-হায়েনারা এখন আপনার ঘরেই - সূচ হয়ে ঢুকেছে, ফাল হয়ে বেরুনোর অপেক্ষায় ।


:: *ছবির কপিরাইট সম্পর্কিত তথ্য পরবর্তীতে সংযোজন করবো *

শুক্রবার, নভেম্বর ১০, ২০০৬

ঔদ্ধত্য


"আমার ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের নিয়ে মহলবিশেষের মন্তব্য অনভিপ্রেত ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে হস্তক্ষেপের সামিল ।"

-- ইয়াজউদ্দিন আহমেদ,গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা

----------------------------------------------

একটু ঔদ্ধত্য করেই ফেলি ।

রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কথা বলায় নাকি কিসব নিষেধ-টিষেধ আছে , তারপরও ।
মাননীয়, আপনার ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের বেতন কি আপনি নিজের পকেট থেকে দেন নাকি ?
আমরা বেতনও দেবো, আবার কথা বললে ধমকও দেবেন, এতো ভারি মজার ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে ।



:: ছবিটা অপ্রাসঙ্গিক নয়, তবে কপিরাইট এই ভদ্রলোকের

বুধবার, নভেম্বর ০১, ২০০৬

আপনারা এবং ১১ ফেরেশতা !

বাংলাদেশের সংবিধান কি-ওয়ার্ড দিয়ে আপনি গুগলে ঢুঁ দিয়ে খুব একটা কিছু পাবেন না ।
এখনো ইলেকট্রনিক পৃথিবীতে আমাদের রাষ্ট্রীয় কিংবা জাতীয় তথ্য খুঁজে পাবার মত সময় আসেনি । গত সামারে একটা অনুবাদ জাতীয় কামলা খাটতে গিয়ে সংবিধান বা রাষ্ট্রনীতি নিয়ে বেশ লম্বা সময় সার্চ দিয়েও কাজে লাগার মত খুব একটা ফল পাইনি ।

সে যাইহোক, তাতে কিছু যায় আসে না ।
উল্টো, আজকাল সবই দুটো-একটা সার্চ দিয়েই কিছু একটা বের করে ফেলা বিরক্তিকর মনে হয় ।
ডিজিটাল বৈষম্য কিংবা এই জাতীয় কোন জটিল বিষয় নিয়ে আমার লেখাটা অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করি টাইপের ব্যাপার-স্যাপার হয়ে যেতে পারে :: কাজেই সেই ব্যাপারে এখানেই ফুল স্টপ দিই ।

এবার আসল কথায় আসি ।
গত কয়েকদিন ধরে এই শব্দটি সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ছে বা কানে বাজছে - সংবিধান - আমাদের জনমানুষের শতকরা ৯৯.৯ ভাগই জীবনে চোখ দিয়েও দেখেন নি কিংবা ব্যাপারটার অর্থই বুঝেন না শতকরা ৭০-৮০ ভাগ- এরকম একটি জটিল বিষয় । নির্বাচন চালানোর প্রধান ফেরেশতা ঠিক করার জন্যে সংবিধানে কত নম্বর সংশোধনীতে কী লেখা আছে - নেহায়ত পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষার্থী না হলে কেউ জানেন বলে আমার মনে হয় না ।

ইদানীং আমার ঘুমুতে বেশ ভোর হয় - ততক্ষণে টিভিতে ভোর চারটার ঘুমজাগানিয়া খবর শুরু হয়ে যায় -বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, জাপানীদের সেনস অব হিউমার খুব একটা খারাপ না হলেও ভোর চারটার সেই অনুষ্ঠানটির নাম সেই রকমই একটা কিছু, সুন্দরী উপস্থাপকরা বেশ ভয়াবহ হাসিমুখ নিয়ে মজার সব খবর নিয়ে হাজির হন - ভোরবেলা ওঠা মানুষগুলোর মন ভালো করে দেয়ার জন্যে বোধহয় ।

সেটা গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্যাপার নয় যদিও - হঠাৎ দেখলাম একটা বাংলাদেশ বাংলাদেশ টাইপের ফুটেজ ভেসে উঠছে - একটা লোককে সবাই ঘিরে ধরে পেটাচ্ছে - বাঁশ জাতীয় কিছু একটা দিয়ে পেটানো হচ্ছে - ভালো করে বুঝে ওঠার আগেই খবরটা শেষ হয়ে যায় । সুন্দরী উপস্থাপককে বেশ ব্যথিতই মনে হলো এক মুহূর্ত ।

আজকে ইউটিউব ঘাটতে গিয়ে পেয়ে গেলাম সেই দৃশ্যটা । হ্যাঁ, সুস্থ মানুষের দেখার উপযোগী নয় অবশ্যই ।

সেই অসহায় মানবসন্তানটিকে শিবি×কর্মী হিসেবে দাবি করেছে কয়েকজন ব্লগার সামহোয়্যার-ইন -এ- আমি সামহোয়্যার-ইন -এ লিখিনা - কারণ আমরা বাঙালিরা খুব সহজেই একটা প্লাটফর্মকে মাছের বাজার করে ফেলতে দেরি করি না - আর বাজাদ কিংবা বাআলী টাইপের একটা স্ট্যান্স নিয়ে লড়াই শুরু করে দিই ।

আমি ব্যক্তিগতভাবে জা×য়াত শিবি× কে রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি দিতেও ঘৃণা বোধ করি - ধর্মের দোহাই দিয়ে ভন্ডামি, আমাদের রাষ্ট্রের জন্মের বিরোধিতা এবং মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকা - সবমিলিয়েই এ ঘৃণা । একই সাথে আশংকাও বোধ করি না - তাও নয় - কারণ এরা ভীষণ সুসংগঠিত এবং বুদ্ধিমান - ইন্টারনেট এর মত একটা শক্তিশালী মাধ্যমেও যে এরা কম যায় না - এটা নিশ্চয়ই বলে দিতে হচ্ছে না ।

কিন্তু, সেই মানুষটি - হ্যাঁ সেই অসহায় মানুষটি - কোন্ দলের কিংবা আসলেই রাজনীতির সাথে জড়িত কি না - এটাও নিশ্চয়ই প্রশ্ন তোলার মত কোন বিষয় নয় । একজন মানুষকে একদল শ্বাপদ ঘিরে ফেলেছে - সে হিন্দু বা খ্রিস্টান বা নাস্তিক, উত্তরপন্হী কিংবা দক্ষিণ - কিচ্ছু যায় আসে না আমার । উল্টোপাল্টা কথা বলা শেখ হা×না র ভক্ত কি না কিংবা এক দশক আগে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে অবাঞ্চিত ঘোষিত হওয়া নিজা× এর কথায় ওঠবস করতো কি না - এটাও বিবেচ্য নয় ।

একজন মানুষ, তার জীবনের শেষ কটি ক্ষণ - সেই জিনিষ নিয়ে আপনারা গবেষণা করছেন - আপনারা মাৎস্যন্যায় এর এই যুগের জন্যে উপযুক্ত মানুষ ।

আরো বেঁচে থাকুন আপনারা - এইসব অসহায়ের অভিশাপ মাথায় নিয়ে ।
আর হ্যাঁ, আপনারা পছন্দমতো বাকি ১০ জন ফেরেশতা পেয়ে গেছেন আজ - আপনাদের সংবিধান রক্ষা হয়েছে ।
অভিনন্দন আপনাদের ।
সবার মঙ্গল হোক - এই কামনা করছি ।

-----
*
বাঁধ ভাঙার আওয়াজ এর জন্যে লেখা, প্রকাশ লিংক এখানে

সোমবার, অক্টোবর ৩০, ২০০৬

এরপর ?

এক্ষুনি খবর দেখছি । শেষ পর্যন্ত কোন গ্রহণযোগ্য সমাধান হলো না ।
এরপর কী হবে ?
ক্ষমতার লোভ মানুষকে কতোটা নীচে নামাতে পারে ?
এ কোন্ রাহু ?


আপডেট দেখুন এই লিংকগুলোতে ::
১ . bdnews24

রবিবার, অক্টোবর ২৯, ২০০৬

অজ্ঞাতনামা আপনার প্রতি

প্রিয় নাম না জানা মানুষটি,
আমরা, বাঙালি - রাজনীতি নিয়ে মাথা বেশি ঘামাই ।
আমাদের পেটে ভাত থাকে না, বাড়িতে রাতে রান্নার চাল আছে কি না- তার ঠিক নেই, বিদ্যুত কিংবা পানি - সে অনেক পরের কথা ::
তারপরও আমরা মাথা ঘামানো থামাই না ।

আমাদেরই পকেটে চালানো নির্বাচন; কে চালাবে, না চালাবে - সেটাও ঠিক করতে আমরা ভেড়া বলি দিই ।

জানি না, আপনি সাধারণ মানুষের কাছে প্রায় অবোধ্য - রাজনীতি বা রাষ্ট্রনীতি - নামের অদ্ভূত বস্তুটির সাথে জড়িত ছিলেন কি না - তাতে অবশ্য কিছু যায় আসে না এখন আর। কারণ, আপনার আলাদা কোন অস্তিত্ব নেই, আপনি এখন ১১ জনের মাঝে একজন মাত্র

হ্যাঁ, এগারো - আজকের বলি সংখ্যা

কোথায় যেন শুনেছিলাম, নামবিহীন মৃত্যু মানুষের সবচেয়ে বড় দূর্ভাগ্য

আমি কিন্তু তা মনে করি না । কারণ, দূর্ভাগ্য কিংবা সৌভাগ্য - সবই আপেক্ষিক ব্যাপার-স্যাপার


জানি না - সকালে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আপনাকে কেউ সাবধানে থাকতে বলেছিল কি না কিংবা আপনার জন্যে অপেক্ষায় কেউ কাল রাত পার করে সকাল পর্যন্ত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে কি না


কিংবা আপনার আয়ের উপরে বেঁচে আছে বড় কোন পরিবার - আমাদের পোড়ার দেশে যা হয় ।
ঈশ্বর তার বা তাদের সহায় হোন ।
এইটুকু প্রার্থনা করা ছাড়া খবরের কাগজে একনজর আপনার ছবি দেখে - ছবিটা তো জটিল অথবা দেশটার কী হইলো - টাইপের কোন কমেন্ট করে পরের খবরে চোখ দেয়া আমরা আর কিছুই করবো না


হয়তো আপনি কোন কিছু না জেনেই পল্টন ময়দানে মানুষ দেখতে বেরিয়েছিলেন, কিংবা পেট বাঁচানোর জন্যে কোন প্রয়োজনে বাইরে বেরিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন কুকুর-শেয়ালদের মাঝখানে, যাদের কাছে আপনি কিংবা আমি - কেউ জরুরি নই - জরুরি ক্ষমতার দখল । নেতা-নেত্রীরা তাদের বাপ-স্বামীর জমিদারি ছাড়া আর কিছুই মনে করছেন না এই দেশটাকে - আপনি হয়তো ছেড়ে যাবার আগে ব্যাপারটা উপলব্ধি করেছেন । এরাই, এদের প্রতিনিধিরাই আপনার নিকটজনের কাছে ভোট চাইতে যাবে কিছুদিন পর ।

আপনি আমাদের ক্ষমা করবেন, আমাদের অভিশাপ দিতে চাইলে দিতে পারেন ।

আমরা কেউই অস্বীকার করতে পারি না - আপনার এ অসময়ে চলে যাওয়ার দায়ভার - কারণ কিছুদিন পরে আমরা এই কুকুর-শেয়ালগুলো কেই সমর্থন করবো - নির্বাচনে ।



----------
পল্টন মোড়ে প্রথম আলোর চিত্রগ্রাহক সাইফুল ইসলামের ক্যামেরায় বন্দী হওয়া সেই নাম না জানা মানুষটির উদ্দেশ্যে

শনিবার, অক্টোবর ২৮, ২০০৬

ইউনুস নবী এবং তার নৌকা

ইউনুস নবীর কথায় আসি ।
না, ইউনুস নবীর নৌকা ছিল না ।
তবু আপনারা ধরে নিন, ইউনুস নবীর একটা নৌকা আছে ।
কাল্পনিক নৌকা ।

কনফুসিয়াস খারাপ লেখেননি ।
আমরা আসলেই ইউনুস সাহেবরে‍ হজম করতে পারি নি ।
আর, আমাদের বাঙালির যা হয়, সম্বর্ধনা-সমবোরধোনা জাতীয় ব্যাপার-স্যাপার এর মাধ্যমে আমরা কার কতটা এসিডিটি বাড়ছে ওই জিনিষ দেখানোর চেষ্টা করি এবং শেষ পর্যন্ত , শ্রদ্ধা করা উচিত, সব বিতর্কের উপরে রাখা উচিত এরকম মানুষকেও পচিয়ে ফেলি ।

আমরা চেষ্টা করি সবার আগে ফুলের মালা নিয়ে দৌড় দিতে , সম্মানিত মানুষটির পাশে নিজের পিতৃপ্রদত্ত বদনখানা দাঁড় করিয়ে ফ্রেম-বন্দি করে ফেলার । ফতুয়া পরা সাদাসিধে মানুষটির পাশে আমাদের চকচকে বিদেশি স্যুট মানায় না, প্রায় চামড়া তুলে ফেলা মেকআপ নেয়া চেহারার নিজের পাশে আমাদের এই বামনের দেশে মহাকায় মানুষ ইউনুসকেও বামন মনে‍ হয় । আর তক্কে তক্কে থাকি, নিজের কৃতিত্বখানা জাহির করতে অন্যদের কাছে, জোর করে সে গল্প টেনে আনি বিভিন্ন জটলায় ।

নির্বাচনের আগে আগে আমরা যেমনটা দেখি, অমুক ভাই-তমুক ভাই আপনাদের দোয়াপ্রার্থী - টাইপের পোস্টারে নেত্রী কিংবা নেত্রীপুত্রের সাথে তমুক ভাইয়েরা ছবি দিয়ে দেয়াল নষ্ট করে ফেলেন , ব্যাপারটা অনেকটা সেইরকম ।

আদনান সামি র সেই লিফট্ করা দো .. গানটা নিশ্চয় শুনেছেন; আমরা আসলে সবসময় লিফট্ এর অপেক্ষায় থাকি । তাই আপনি, আমিও ইউনুস নবীর নৌকায় লিফট্ নেয়ার চেষ্টা করি, এই সময়ে এসে ।


----------------
:: ইদানীং বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ঢোকার মুখেই ডক্টর ইউনুস এর হাস্যোজ্জ্বল ছবির অপ্রাসঙ্গিক ব্যবহার দেখে প্রতিক্রিয়া
:: বামনের দেশে মহাকায় - শব্দাংশটুকু প্রয়াত হুমায়ুন আজাদ এর প্রবন্ধ থেকে ধার নেয়া - তিনি এর ব্যবহার করেছিলেন আহমদ শরীফ সম্পর্কে বলতে গিয়ে

জিরো আওয়ার

শেষ পর্যন্ত আমরা পৌঁছে গেছি শূন্য ঘন্টায় ।

যখন এই লেখা লিখছি, তখন ৪৮ মিনিট ধরে আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাঁর পাঁচ বছরে তিনি এবং তাঁর মহান ও বিশাল মন্ত্রীবহর কী কী উপহার দিয়েছেন তার ফিরিস্তি দিয়েছেন ; আর গত সময়গুলোতে আমরা কখনোই পাশে পাইনি যাদের, সেই দায়িত্বজ্ঞানহীন বিরোধী দল স্বপ্ন দেখছে লগি-বৈঠা নিয়ে একটা বিপ্লব-টিপ্লব করে ফেলা র । তারা পল্টন ময়দানে নাকি খুঁটি গাঁড়ছেন ।

সবাই আগামী কয়েকদিন বাড়ির বাইরে যাতে না যেতে হয়, সেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন, বাস-ট্রেনের টিকেট বাতিল করছেন শুনছি ।
ছোটখাটো যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব, বলছেন এক সাংবাদিক বিবিসি তে ।

একজন চামুচ, যার অস্হায়ী শাসনের দায়িত্ব নেওয়ার কথা, তিনি ভুলে যাচ্ছেন যে তার প্রথম যোগ্যতা হওয়া উচিত প্রায় সবাই তাকে গ্রহণ করবে সেই পার্সোনালিটি । আমার সাদা চোখে ই এই ভদ্রলোককে লজ্জা-শরম কম শ্রেণীর কেউ বলে মনে হচ্ছে ..আর ..

কে শোনে কার কথা , আমাদের এ হবুচন্দের দেশে ?

কল্পনা করা হয়নি এমন কোন ব্যাপার নয় যদিও , কিন্তু অনাকাঙ্খিত, আর অস্বস্তি মাখানো এ শূন্য ঘন্টা ।


সংযুক্তি:: অক্টোবর ২৮ : জিরো আওয়ার থেকে বেরুবার বোধহয় একটা পথ পাওয়া গেছে

শুক্রবার, অক্টোবর ২৭, ২০০৬

লিখছি

প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি লম্বা নীরবতার জন্যে ।
কারণ অনেকগুলো, তবে উল্লেখ করার মতো দুটো হচ্ছে অহেতুক ব্যস্ততা আর অগোছালো জীবনযাপন ।
আর মাঝেমধ্যে শরীরযন্ত্রের বেঁকে বসা ।
ভীষণ ক্লান্ত সবকিছু নিয়েই ।

ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ বাদ দিই ।
অনেকবারই লিখতে শুরু করে শেষ করা হয়ে ওঠেনি ।
অন্যেরা কী লিখছেন তা ও পড়ার সুযোগ হয় নি ।
যাইহোক, আবার পড়ছি এবং লিখছি।

শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০০৬

দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে

ছবিটা দেখে বাগদাদ কিংবা বৈরুত মনে করেছিলাম ।
তবে ক্যাপশন পড়ার পর আর অবাক হই নি ।
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যেমনটা হয় !

লিস্টিটা লম্বা হয়েছে ।
কানসাট, শনির আখড়া র পর মিরপুর, নারায়ণগঞ্জ, বাঘা, সিলেট, সিরাজগঞ্জ .......
পাতানো টেলিফোন-টেলিফোন খেলার দিকে চোখ রাখার মত অবস্থা আমাদের নেই।
সরকারে গেলে সবার চোখ-কান দুটোই বন্ধ হয়ে যায় । ক্ষমতায় গেলে সবাই প্যাঁদানি দেয় । হোক তা বাআলী কিংবা বাজাদ ।
দুটোর পার্থক্য খুব কম । ধুর, একেবারেই নেই ।
আমরা জানি ।
তবে আমরা যে জানি - এটা রাজনীতিবিদ নামের লজ্জ্বা-শরম কম মানুষগুলো বোধহয় জানেনা ।

তারা কি দুটো-একটা ছাগল বিলা হওয়ার অপেক্ষা করছেন ?

ছবি কৃতজ্ঞতা : The Daily Star

রবিবার, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০০৬

এর থেকে নির্বাসনে গেলে ভালো হত

এর থেকে নির্বাসনে গেলে ভালো হত
তাহলে এতদিন আমার কথা মনে ছিল ?
প্রশ্নটার একটা জবাব দেয়া যেত ।
কিন্তু, আমার এ না-দন্ডবাস
না-নির্বাসনের পর আমি
উত্তরহীন থাকা ছাড়া আর কী-ই বা করতে পারি ।


এর থেকে নির্বাসনে গেলে ভালো হত
ঘাস আর আকাশের জন্যে ভালোবাসাটা আরও মজবুত হত
হয়তবা; তাহলে এই অবেলায় তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করত না
রিকশা নেই একটা ফাঁকা শহরে তোমার পাশে হেঁটে যেতেও
ইচ্ছে করতো না, টুপটাপ বৃষ্টির মাঝে ।
মনে মনে বলতুম, রিকশা না পাওয়া গেলেই ভালো ।



এর থেকে নির্বাসনে গেলে ভালো হত
আমার মেশিনে শোভা পেত তনুশ্রী দত্ত কিংবা কিম শর্মার ওয়ালপেপার, হতাম
গতানুগতিক একটা যন্ত্রপ্রিয় মানুষ ।
মাথার ভিতর ঘুরপাক করতো মোজাভি, পার্ল কিংবা
সন্দর্ভ লেখার মালমশলা কোত্থেকে যোগাড় করা যায়, সেই চিন্তা ।



কিন্তু, কোনোটাই তো হইনি
তাহলে আমি এ কোন্ না-দন্ডবাস না-নির্বাসনে ছিলাম ?
যেখানে আমার সব দুঃখ মেঘ হয়ে থাকে ।
আর তার মাঝে আমি না-মানুষ না-আমি হয়ে যাই ::



মন্তব্য :: এটি অবশ্যই কবিতা নয়, নয় ছড়া(!)ও, আমি কবিতা লিখতে পারি না, আমি জানি । এটা আর অন্য সব পোস্টের মতই আরেকটা অর্থহীন অবাস্তব অনু-গাদ্যিক প্যাঁচাল

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১২, ২০০৬

ভন্ডামি

আজকাল রোদের মধ্যেই বৃষ্টি আসে, আমরাও খেঁকশেয়ালির গান গাই - রোদ হচ্ছে, বৃষ্টি হচ্ছে ...
দিবাস্বপ্নের মধ্যে আমি ইউলিসিস হয়ে যাই, নাউজিকার খোঁজ করি ; ধ্যাত্তেরিকা, ওইটা পেনেলোপি হবে বোধহয়, সে যাইহোক, এই প্রায়-ভ্যাপসা গরমে আমরা আড্ডায় আগুন ধরাই, মোজো খাই, মজা পাই ।

কে যেন খবর দিলো কবিরা সব আইজুদ্দির ভক্ত হয়ে গেছে, বেশি বেশি কষ্টে থাকে - সব শালা এখন মোবাইল আর কর্পোরেট, আমি একটা সেন্সর করা উচিত - গাল দিই, উদ্দেশ্যহীন ::
উদ্দেশ্য নিয়া মাথা ঘামায় কোন ××× - এইখানেও একটা গালি হবে - শূন্যস্থান পূরণের দায়িত্ব কিন্তু আপনার ।

এর মধ্যে বজ্জাত এসে হাজির ওর শ্লীলবিহীন সব গল্প নিয়ে, এই ব্যাটা ভাল কোন কথা জানে বলে আমরা মনে করি না, বজ্জাতের আসল নামটা দুটো-একটা অক্ষর এদিক-ওদিক হবে - আমরা নানানরকম মিথ শুনি, তাল মিলাই- কোনও এক শালা প্রেম করতে গিয়া ধরা পইড়া নাকি কইসে, আসলে ওর না অনেক দুঃখ- ও আসচিল আমার সাথে দুঃখ শেয়ার করতে - আমরা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ি - একে অপরকে পচাই - আমরা নির্ঘাত হাবিয়া দোযখে যাবো - আমি ভবিষ্যৎবাণী করি ।

:: আমি আবার বিবেক কি না - এই পট এর ::

বাড়ি ফেরার পথে ভিত্তিপ্রস্তর দেখে আমি মুগ্ধ হই - কালকেও এইখানে কিছুই ছিল না -খালদা জিয়া আইবো বুলে -রিকশাঅলা বলে ওঠে - আমি সন্ত্রস্ত হই - কারণ আমার নার্ভ দুর্বল এবং আমি মহান ব্যক্তিদের ভয় পাই।

ভিভিআইপি নিরাপত্তার ব্যাপার আগে - অন্য কোন এক মহান ব্যক্তি বলেছেন - প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরের জন্যে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আটকা পড়া জরুরী যান প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ::
মারহাবা, মারহাবা ।
আজকাল নাকি মারহাবা টাই ফ্যাশন ।

টিভিতে সুন্দরী সংবাদ উপস্থাপক খবর পড়েন - জাতীয় জীবনে জনগণের উন্নতিকল্পে ....... নিউজের বা×ছা× .....
উপরের × স্থানে ল হবে - আশা করছি আপনি একেবারে নিস্পাপ কোনও মানুষ নন ::
ফোনটা বাজে - আরেকটা অশ্লীল গালি দেই - মনে মনে - যেই হোক না কেন ।
আমি গালি দিয়ে পাপ ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করি - আমি আবার নিস্পাপ হয়ে যাই - আবার চারপেয়ের মাংস খাওয়ার চেষ্টা করি - টম-এন-জেরি দেখে হাসার চেষ্টা করি - নাইন-ইলেভেনের স্মরনে মানুষের কান্না দেখে আমার পেট মোচড় দেয় ।


আমি আবার ইউলিসিস হওয়ার চেষ্টা করি ।
আমার ভন্ডামি বেশিরভাগই ফাঁস হয়ে যায় ।

বুধবার, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০০৬

জড়তা



:: কৃতজ্ঞতা :: এই ছবিটাতে যান্ত্রিকভাবে সামান্য তেলজল মাখানোর চেষ্টা করেছি ,
মজার সেই সফটওয়্যারটির জন্যে ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ যার কাছে, ছবিটা তাঁকেই উপহার।
কনফুসিয়াস , অনেক কিছু শেখার আছে আপনার কাছে ; (লিংক , )
ভালোবাসা রইল

একটি প্রায়-রাজনৈতিক প্রলাপ

দেশে এসে পড়লাম , অল্প সময়ের জন্যে ।
খুব চোখে পড়ছে মুঠোফোন বিপ্লব, লোডশেডিং আর অনিশ্চয়তা - অনেক কিছু নিয়ে ।

মুঠোফোন বিপ্লব এই অর্থে বলছি , মনোপলি কিংবা প্রায় মনোপলি ভেঙে বেড়েছে প্রতিযোগিতা - আমাদের বাণিজ্য সংস্কৃতির দিক থেকে চিন্তা করলে প্রায় অন্যজগতের টার্ম - ক্রেতা অধিকার কিংবা কাস্টমার সার্ভিস - নামের জিনিষগুলো কিছুটা হলেও অনুভূত হচ্ছে :: সে যাই হোক, মুক্তবাজার অর্থনীতির সেই টুকু সুফল অবশ্যই অভাবিত নয় । আর স্থূল দৃষ্টিতে এই সময়ের ইতিবাচক উন্নতি বলতে সেটুকুই ।

কিন্তু - কিন্তু, অসমতা প্রকট মানুষের মাঝে - মধ্যবিত্তের দারিদ্রের সূচক নামেনি, অর্থনৈতিক পার্থক্য নিয়েছে অন্যরকম উর্ধ্বগতি । বাজারে অর্থের আনাগোনা বেড়েছে, অর্থের রং নিয়ে কোন প্রশ্ন করব না - পকেট গরম মানুষের মাঝে টাউট আর বাটপার এর সংখ্যা বেশি, এর অস্বীকার কেউ করবেন না নিশ্চয়ই , রাতারাতি টিভি চ্যানেল বানিয়ে ফেলা আলু টাইপের নামের মানুষেরা যে অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণে, সেখান থেকে এর থেকে বেশি প্রত্যাশা আমরা করতে পারি না ।

বিদ্যুৎ এর আনাগোনা - একটা সময় আগে হাইস্কুল পাসের রাষ্ট্রীয় পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে যেরকম অনুভব করেছিলাম - অবস্থা তার থেকেও দিনদিন খারাপের দিকে গেছে - মফস্বলের জন্যে আমাদের আলোর বরাদ্দ নেই- কানসাটের কথা আমাদের স্মৃতি থেকে মুছে যায়নি - আমি এই মুহূর্তে যে জায়গাটাতে আছি, সেটা কানসাট থেকে খুব বেশি দূরে নয় কিংবা ফুলবাড়ি থেকেও - না, অবস্থা পাল্টায়নি - এই মুহূর্তে আমার মেশিন চলছে ব্যাটারিতে - আমাদের মতো ভেঁড়া গোত্রের মানুষ কখনো স্বস্তি পাবে বলে মনে হয় না ।

ও হ্যাঁ, আমাদের অতি-রাজনীতি-সচেতন মানুষদের জন্যে সামনে আসছে নির্বাচন - হিসাব-নিকাশও শুরু করে ফেলেছে কদাকার রাজনৈতিক দলগুলো - ঘাতকদের দল আর ১৬ বছর আগে জনমানুষের লাথি খেয়ে বিদায় নেয়া নির্লজ্জ বেহায়া - এই সময়টাতে নিজেদের মূল্যবান মনে করে জিহ্বা দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে নেয় - সব অদ্ভূত মস্তিস্কের সুযোগসন্ধানীরা আগামী পাঁচ বছর আমাদের পশ্চাৎদেশে লাথি দেবার অধিকারটুকু অর্জনের জন্যে হায়েনা আর কুকুর সব্বাইকে সাথে নেয় । যে পক্ষ হায়েনা আর কুকুরকে সাথে পায়, তারা তাদের দূর্গন্ধযুক্ত মুখ দিয়ে পুরনো হিসাব মুছে ফেলতে বলে, আর অন্য পক্ষ পুরনো খাতা নিয়ে চিৎকার করতে থাকে ।

ঈশ্বর, সেই পুরনো গল্প, সেই পুরনো নাটকের রূপায়ন - এমনকি হয়না - আমরা একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখবো - সব হায়েনা, কুকুর আর সুযোগসন্ধানী শেয়াল মরে গেছে ? আমি এই প্রথম কারো মৃত্যু কামনা করছি ।

আমি বিপ্লবের সমর্থক নই - ফুলবাড়ি কিংবা কানসাট এর মতো ঘটনা বিচ্ছিন্ন কিছু - এটাই কামনা করবো - স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রখন্ডে মতের প্রতিফলন করার জন্যে জনমানুষেরই অর্থে পরিচালিত শৃঙ্খলাবাহিনীর মুখোমুখি হতে হবে - এটা কারও আশা হতে পারে না ।

ও, স্যরি - আমি এই রাষ্ট্রের তালিকাভুক্ত নাগরিক কি না - সে ব্যাপারে কোন সমর্থন আমার কাছে নেই - আমার ভোটাধিকার নেই - আর থাকলেই বা কী করতাম ?

কাকেই বা ভোট দিতাম ?

মঙ্গলবার, আগস্ট ২৯, ২০০৬

প্লিজ, আমাদের আর স্বপ্ন দেখাবেন না

আমি এই দেশের কোন ভবিষ্যৎ দেখি না । আমি এই দেশের কোন ভবিষ্যৎ দেখি না।
- আনিসুল হক, গদ্যকার্টুন, আগস্ট ২৯ এর প্রথম আলো

শুধু প্রথম আলো থেকে উদ্ধৃতি দিই বলে কেউ বিরক্তিবোধ করলেও করতে পারেন, সেরকম কেউ থেকে থাকলে আপনার বিরক্তিবোধের প্রতি শ্রদ্ধা রইল ।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর লেখার সাথে প্রথম পরিচয় কপোট্রনিক সুখ-দুঃখ এর মাধ্যমে, মুগ্ধ হয়েছিলাম; তারপর প্রত্যাশা বেড়েছে, মোটামুটি অর্ধেক বই-ই পড়া হয়েছে, সময়ের সাথে সাথে সাই-ফাই গুলো কিছুটা গতানুগতিক হয়ে ওঠেনি, তা নয় অবশ্য :: [ তাঁর সমালোচনা বহন করার যোগ্যতা এই ব্লগের নেই, তবু মুক্তবাজার অর্থনীতির এই যুগে তার বইয়ের একজন ক্রেতা হিসেবে এইটুকু র জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করছি ]

কিন্তু, তাঁর সাদাসিধে কলাম পড়ে মস্তিষ্কে স্পন্দন অনুভব করেছি, আমরাও একদিন গ্রহণের এই কাল থেকে বের হয়ে আসব - নিজেকে নতুন করে বিশ্বাস করাতে ইচ্ছে করেছে :: মাঝেমধ্যে মনে হতো, আমাদের শাসন ব্যবস্থার সাথে জড়িত সবার বাধ্যতামূলক পাঠ্য হওয়া উচিত দেশের জন্যে অসাধারণ ভালোবাসা মাখানো এই লেখা গুলো :: বাচ্চাদের স্কুলে কিংবা সব পাঠাগারে অবশ্যই এই স্বপ্ন দেখানো মানুষটির সব বই রাখা উচিত ।

আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের আবাস হবে তাঁর লালন করা স্বপ্নের বাংলাদেশ; সাধারণ জনমানুষের অর্থে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয় দিনের পর দিন তালা লাগানো থাকবে না, তুচ্ছ অজুহাতে পরীক্ষা পেছাও আন্দোলন হবে না ; ছাত্রেরা শিক্ষককে উদ্দেশ্য করে তোরে ফালাইয়া দিমু টাইপের শব্দমালা ব্যবহার করবেনা কিংবা সংখ্যালঘু অথবা আদিবাসী, শব্দগুলোর মাধ্যমে মানুষের মাঝে বিভাজনের চেষ্টা কেউ করবেন না - যারা তাঁর লেখা পড়েন - আন্দোলিত হন না এরকম কেউ আছেন বলে আমি মনে করি না ।

আমার মত নৈরাশ্যবাদী প্রাণিও তখন আশাবাদী হয়ে ওঠে, তাঁর স্বপ্নের মিছিলের পেছনের সারিতে দাঁড়িয়ে পড়তে ইচ্ছে করে । ভোরের কাগজ পড়তাম আগে , এখন প্রথম আলো পড়ি - মুহম্মদ জাফর ইকবাল লিখেন বলে - খবরের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ পোষণের কোন কারণ থাকলে তিনি লিখবেন না - এই বিশ্বাস আছে তাই ।

আনিসুল হক একটা কল্পকাহিনী লিখেছিলেন - আমার এই মুহূর্তে নাম মনে পড়ছে না - দেশের শাসনক্ষমতা অন্ধ, কূপমন্ডুক ধর্মীয় মৌলবাদীরা দখল করে ফেলেছে, প্রগতিশীল সব মানুষের বিচার করা হচ্ছে - বিষয়বস্তু এরকম ::

এই মুহূর্তে চিন্তা করলে সেটা আর কল্পকাহিনী বলে মনে হয় না , আমরা অন্ধকারের পথে অনেকদূর চলে এসেছি , শ্বাপদেরা এখন নখর দেখায় খোলাখুলি :: আমরা স্তম্ভিত হই, কিন্তু কোন প্রতিবাদ করার সাহস পাই না, আমাদের রাষ্ট্রশাসনের সাথে জড়িত কদাকার মস্তিষ্কের মানুষগুলো তাদের অপরিষ্কার দাঁত দেখায় :: আমাদের স্বপ্ন দেখানোর মানুষগুলো ভয় পান না অবশ্য, তারা বাতির আলোটা আরো একটু বাড়িয়ে দেন

কিন্তু আমাদের ভয় করে, আমরা যে ঘরপোড়া গরু - সাম্প্রতিককালে প্রিয়জনদের নিরাপত্তা আমরা দিতে পারিনি - আমরা স্বপ্ন দেখা বন্ধ করতে বাধ্য হই ।

স্বপ্ন দেখা বন্ধ করার বিনিময়ে যদি প্রিয় মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়, আমরা তাতে প্রস্তুত ।


-------
[১. আমি সারাজীবনই ব্যাকবেঞ্চার, সেজন্যে]
[২. প্রথম আলো আসার আগে, ১৯৯৩-'৯৭ ]

বুধবার, আগস্ট ২৩, ২০০৬

শুক্রবার, আগস্ট ১৮, ২০০৬

কবি-মহীরুহ

যেখানে সূর্যের তলে আকাঙ্খিত সুন্দরের গাঁথা
নিসর্গে মধুর মতো, ফুলের পাঁপড়ির মতো ঝরে
অথবা যেখানে গাঢ় চন্দ্রবোড়া সঙ্গিনীর শাখায় আকুল

ঋতুর মতো রণে পরাক্রান্ত, সেখানে আমার অভিলাষ অভিসারী–

সুন্দরের গাঁথা ; "প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে"
শামসুর রাহমান ( ১৯২৯, অক্টোবর ২৪ - ২০০৬, আগস্ট ১৭ )
...............................................................................

প্রিয়জন হারানোর বেদনা অনুভব করছি ::
আমাদের মননের অভিভাবক চলে গেছেন আমাদের উদ্ভট উটের পিঠে ফেলে রেখে ;
জীবনবিরোধী শ্বাপদেরা যখন সময়ের লাগাম টেনে ধরে আমাদের যাত্রাকে প্রতিহত করার চেষ্টায় রত, তখন আমাদের এই ক্ষতি ।
তিনি থাকবেন মহীরুহের মত অসীম সময়কাল পর্যন্ত ।

শুক্রবার, আগস্ট ১১, ২০০৬

কবির জন্য ভালোবাসা

সম্প্রতি আপনি খুব আশাবাদী আর প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিলেন
কিন্তু আপনি কি জানেন যে আমরা কোথাও নেই ? যারা
স্বপ্ন দেখে সুন্দরের , পচে যাওয়া সমাজ-রাষ্ট্রকে যারা গোলাপের
মতো সুন্দর দেখতে চায় , যারা মনুষ্যত্ব-মানবিকতাকে
ভোরের আলোর মতো সত্য বলে মানে , আপনি কি জানেন তারা
কোথাও নেই ? আমরা তো উদ্বাস্তুর মতোই রয়েছি বাঙলায়

আপনি কি খুব জোর দিয়ে বলতে পারবেন যে আপনার
পায়ের নিচের মাটি খুব শক্ত ? শক্ত মাটি তো শুধু নষ্টদের
পদতলে । আমরা, শামসুর রাহমান , চোরাবালির ওপর
দাঁড়িয়ে রয়েছি


"শামসুর রাহমানকে দেখে ফিরে" - হুমায়ুন আজাদ
( আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে , নন্দন প্রকাশন , ঢাকা ১৯৯০ )
............................................................................

প্রয়াত হুমায়ুন আজাদ লিখেছিলেন ১৬ বছর আগে, সেই সময় হাসপাতালে চিকিত্সাধীন কবি শামসুর রাহমান কে দেখে ফেরার পর :: ধন্যবাদ প্রথম আলো কে, কবিতাটা পুনর্মুদ্রণের জন্যে।

কবি অসুস্থ ।
আসাদের শার্ট রক্তাক্ত করে কিংবা সখিনা বিবির কপাল ভেঙে, হরিদাসীর সিঁথির সিঁদুর মুছে ফেলে আসা স্বাধীনতা যখন বিপন্ন , পুরনো শকুনদের ছোবলে ; নব্য সামন্ততন্ত্র, মৌলবাদ, মন্ত্রীতন্ত্র আর রাষ্ট্রনীতির পাতানো খেলা নামের একগাদা অসুখে যখন আমাদের মানবিক স্বপ্নগুলো আক্রান্ত, তখন আপনি ভালো নেই । আপনার কি হাসপাতালে শুয়ে থাকলে চলে ?
প্রিয় কবি , আপনি সেরে উঠুন ; আপনাকে আমাদের প্রয়োজন :: আপনার কলম আবার জেগে উঠুক ।
আমরা হুমায়ুন আজাদ কে হারিয়েছি আজ থেকে ২ বছর আগে ; মন কু ডাকে, আপনাকে হারাতে চাই না ।
কবি, আপনার জন্যে ভালোবাসা ।

------
পাদটীকা::
১. টাইটেল টা আজকের প্রথম আলোয় প্রকাশিত কবিপত্নীর লেখা থেকে নেয়া
২. কিছুটা হলেও স্বত্ব বিষয়ক ব্যাপার-স্যাপার গুলো মেনে চলার চেষ্টা করি , তাই পুরো কবিতা তুলে দিচ্ছি না

বৃহস্পতিবার, আগস্ট ০৩, ২০০৬

লজ্জা

দেখছিলাম আসাহি র ১০টার নিউজ - মূল ক্যাস্টার ইচিরো ফুরুতাচি কে ছাড়াই আজকের নিউজ - সুন্দরী সংবাদ উপস্থাপক মূল দায়িত্বে - বড় অংশ জুড়ে আবহাওয়া সংবাদ :: না, জাপানের আবহাওয়া নিয়ে নয় - পৃথিবীজুড়ে উষ্ণতার মাত্রা বৃদ্ধি কিংবা সম্পর্কিত অন্য কিছু ।

হ্যাঁ, গরম পড়ছে - আজকের টোকিও ৩২°সে. - না, সংবাদের বিষয় সেটা নয় - খবর হচ্ছে, স্যাম চাচাদের দেশে গরম বাড়ছে - আজকের আসাহি নিউজ স্লটের প্রায় পুরোটাই স্যাম চাচাদের উদ্দেশ্যে নিবেদন ; শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার থেকেও বেশি - ইসস্ ... মুখ দিয়ে অজান্তেই চুকচুক টাইপের একটা অশ্লীল শব্দ করে ফেলি ।



ব্যস্ত ছিলাম কয়েকটা দিন - এমন একটা জায়গায় ছিলাম, ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ হয়নি, বোকার বাক্স ছিল - তবে খোলার সময় হয়নি :: Qana নামের একটা জায়গার নামও জানা ছিল না :: লেবানন নিয়ে খুব একটা তথ্য জানার সুযোগ হয়নি - পৃথিবী ঘোরার সুযোগ খুব একটা হয়নি বলে :: এই নামে লেবাননে একটা গ্রাম আছে -এটা জানার কোন কথাও নয় ।

হঠাৎ জেনে ফেললাম, সব্বাই জেনে গেল ; ধুর ভুল বকি - সব্বাই নয় বোধহয়, এই আধাযান্ত্রিক আর স্বার্থবাদী পৃথিবীর অনেক দোপেয়ে-ই জানে না -ওদের কাছে স্যাম চাচাদের দেশে গরম পড়ে, সিরিয়াল কিলার ধরা পড়ে - সেই নিউজ বেশি গুরুত্ব পায় ;

কম গুরুত্বপূর্ণ নিউজ হিসেবে আসে রক্তাক্ত মানুষের ছবি, কংক্রিটের ধ্বংসস্তুপ :: একজন বাবা তার সন্তানকে ক্যামেরার সামনে তুলে ধরেন, প্রাণহীন কিংবা রক্তাক্ত - ইসরায়েল কী জিনিষ, সেইটুকু বোঝার মত বুদ্ধিবৃত্তির বয়সে পৌঁছায় নি এখনো - তবুও মূল্যটা তাকে দিতে হয় ।
আমার লজ্জা লাগে - আমি আমেরিকার মুভি দেখে মুগ্ধ হই, সুকৌশলে আমেরিকান প্রপাগান্ডা এমবেড করে দেয়া পপ্ , কান্ট্রি মিউজিক শুনি, আমেরিকান KFC (হোক জাপানি ভার্সন ) চিকেন খেয়ে কর্ণেল সাহেবের রান্নার রেসিপির প্রশংসা করে কূল পাই না ::

আমি কী করবো ভেবে পাই না - আপাততঃ টিভি বন্ধ করি, Orkut কিংবা Gree তে লগইন করি - সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং নামের এই ভার্চুয়ালিটি - সবাই বেশ এনজয় করছে, মনে হয় - আমি নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পাই না কোথাও ।

নাম না জানা মানুষগুলো, যারা স্যাম চাচাদের কুকুরের হামলার শিকার হয় - তাদের কাছে আমার ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়া কিছু করার থাকে না - অভিশাপ দেওয়া ছাড়া তুচ্ছ ক্ষমতার এই আমি কী ই বা করতে পারি ?

আমার ভীষণ লজ্জা করতে থাকে ।

বৃহস্পতিবার, জুলাই ২০, ২০০৬

নির্বিকার

'নির্বিকার '
:: মাউসের আঁকিবুকি :: জুলাই ২০, ২০০৬ - ল্যাব

সোমবার, জুলাই ১৭, ২০০৬

নৈরাশ্য

আমার গল্প দিয়েই শুরু করি ।
অনেকগুলো পোস্ট শুরু করেছিলাম মাঝে, কোনোটাই প্রকাশের দেখা পায় নি ; শেষ করা হয়নি বলে, বিক্ষিপ্ত আমি র উপরে আমার নিয়ন্ত্রণ নেই :: সেটাও একটা কারণ অবশ্য ।

বিক্ষিপ্ত সময় হেঁটে চলা, পাঁড় মাতালের মতো :: কিংবা ভণ্ড দিন কাটানো, প্রোগ্রামড্ ও প্রায় হিপনোটাইজড্ কোনো পরীক্ষণ পাত্রের মত ; পরীক্ষণকে সাফল্যের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্যে তারও সামান্য ভূমিকা থাকে, তাই ।

বৃষ্টি ভেজা দিন - না, বৃষ্টির মাঝে রোমান্টিকতা খুঁজে ফেরা বাঙালি আদিখ্যেতা আমার মধ্যে নেই - বৃষ্টি আমার মন খারাপ করে দেয় ; আমার কাছে বর্ষণের পরের শুভ্রতাই বেশি শিহরণ জাগানিয়া মনে হয় :: কারণ আমি একজন নৈরাশ্যবাদী ।
নৈরাশ্যবাদীরা মৃত্যুতে রোমান্টিকতা খুঁজে পায় না, পায় না প্রথম বর্ষার মাটি ভেজানো সোঁদা গন্ধেও - তাদের কাছে শৈশব অচেনা মনে হয়, ভবিষ্যত্ও ধূসর - আর বর্তমান - মন খারাপ করে দেয়া সময় পার করতে পারলেই বাঁচে তারা ।

আমরা আলোকিত জনমানুষের কাছাকাছি আসতে পছন্দ করি ; অন্যের আলোর ছোঁয়ার পরশ পাবার জন্যে মানব রসায়নের জেনেটিক এই ব্যাকুলতা -উত্তরাধিকার পরম্পরায় ছড়িয়ে যাওয়া- মানুষের সৌন্দর্য বলতে সেটুকুই ; আলোর ধারায় অব-গাহনের আকুতি।

পেসিমিস্টদের আমরা ( প্লিজ, আমি এবং আমি কে কেউ এক করে ফেলবেন না ) অপছন্দ করি, কারণটা বোধহয় জানেন :: আমরা সবাই প্রকৃতিগত ভাবে স্বার্থবাদী ; আর আলোর বেসাতি করে না এমন কারো সংস্পর্শে আসাটা প্রয়োজনে আসেনা - তাই মুসলমানের মুরগী পোষা র বাইরে আমরা যেতে পারি না ~ আঁধারে ভরা নৈরাশ্যবাদীদের দেবার মত কিছু নেই, তারা শুধু নিতেই জানে ।

পজিটিভভাবে পক্ষপাতিত্ব করলে অবশ্য, ওরা বেসাতি টা ঠিকমত বোঝে না - এই মূল্যায়নই যৌক্তিক মনে হয় । গান শেষের রেশটুকু মন থেকে হারিয়ে যাবে না - এরকম একটা গানের প্রতীক্ষায় তারাও একটা যুগ কাটিয়ে দেয় - কুয়াশাঘেরা স্মৃতির শৈশব তাদেরও মস্তিষ্কের তথ্যসম্ভারে রিন্ রিন্ নস্টালজিয়া জাগানো একটা অনুভূতির ধারা নিয়ে বয়ে চলে ; ভবিষ্যত্ এর স্বপ্নকাঠামোও কোনরকম একটা আকারে - হোক তা নড়বড়ে - তারাও গড়ে :: সবকিছুর পর বর্তমান তাদের কাছে নিষ্ঠুর মনে হয়, সেজন্যে তারা জিততেও ভয় পায় ।

জিততে যে ভয় পায়, তার জয়ের প্রত্যাশা করে কে ?

শনিবার, জুন ২৪, ২০০৬

ভাব !!

"ত্যালের দাম বাড়লে তোর ডাবের দাম বাড়ে, আমার কলার দাম বাড়ে, যে রিশকা চালাইতে ত্যাল লাগেনা, সেই রিশকাভাড়াও বাড়ে । চাল-ডাল, তরিতরকারির দাম বাড়ে, মাস্তানগো চান্দা বাড়ে, পুলিশের টোল বাড়ে, সবটি বাড়ে, সব... ক্যামনে বাড়ে এখন চিন্তা কইরা দ্যাখ ।"

মশিউল আলম এর লেখা থেকে :: প্রথম আলো :: ১৪ই জুলাই



অনেকদিন পর লিখছি । লিখবো-লিখবো করেও হয়ে ওঠে না :: আর কাকে স্থান দেবো লেখায় - ভেবে পাই না সেটাও । চারপাশের পৃথিবীর স্মার্ট মানুষদের, পরাবাস্তব আমিকে, না কি আমার জাতিসত্তা ধারণ করে থাকা রাষ্ট্রযন্ত্রকে :: সবই অস্পষ্ট যদিও - অন্ততঃ আমার নিজের কাছে ।

রাত জাগা হয় না খুব বেশি, তাই ব্লগেও আঁচড় রাখা হয় না ; ভার্চুয়াল কম্যুনিটিতেও পা দেয়া হয় না :: সবকিছু ঠিকমতো চলে - কোন অনুপস্থিতিতেই কিছু যায় আসে না বলেই সবকিছু সহজে পার পেয়ে যাই । পড়ে পড়ে ঘুমিয়ে দেরি করা সকাল, একই পথে অভিন্ন গন্তব্য :: সব দিনই একরকম, সেই এভিয়ান, সেই ক্যালরিমেট, সেই স্কলার - রথী-মহারথীদের অনেক চিন্তা আর পরিশ্রমের ফলাফল - মাত্র এক নজর দেখে - আমারে দিয়া হবে না টাইপের কমেন্ট করে আইয়ুব বাচ্চুর গানে মন বসানো - খোলা আকাশের নিচে ...

আমাকে দিয়ে আসলেই হবে না - আমি জানি । শুধু অভিনয় করে যাওয়া, সহজ বাংলায় বললে ভাব ধরা :: আইজকাল দুনিয়ায় ভাব না ধরলে খাইতে পাবা না - কেউ একজন শুভাকাঙ্খী বলেছিলেন ; নিজে অবশ্য বাস্তব জীবনে ভাব ধরতে না পারায় যে তিমিরে ছিলেন , সেখানেই থেকে গেছেন । তাই খাওয়ার জন্যে ভাব ধরা আর কি !

তত্ত্বকথা লিখতে ইচ্ছে করে না - তেলের দাম বাড়লে জিনিষের দাম কেন বাড়ে - মশিউল আলমের এই প্রশ্নের জবাব দিতেও ইচ্ছে করে না - আজকাল আমিও ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার সমর্থক - কী যায় আসে আমার ? আমার রাষ্ট্রে দুই রাষ্ট্রপতি, পাঁচ ডজন মন্ত্রী থাকুক এবং অর্থহীন বিরোধী দল লম্ফঝম্ফ করুক - কী যায় আসে ?

তার থেকে আসল কথায় আসি, তত্তকতা লিইখ্যা এত্ত ভাব ধরার আমার কী দরকার ?

শুক্রবার, মে ২৬, ২০০৬

অনু্ভব

সকালে আজ সারা আকাশ কেবল মেঘ
ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি আসে, উড়েও যায়
থেকে থেকেই ঝোড়ো বাতাস এদিক ওদিক
ঢ্যাঙা মতন ঝাঁকড়াচুল অনেক গাছ
মাথা ঝাঁকায়, যেমন রাগি বাচ্চারা
খাবার ছুঁড়ে ফেলে

যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল :: জয় গোস্বামী ; পঞ্চম মুদ্রণ : পৃষ্ঠা ৮৩ :: আনন্দ পাবলিশার্স


লম্বা নীরবতার পর আবার শুরু করছি ।

বাস্তব এবং ভার্চুয়াল - সব অর্থহীন পথচলা থেকে কিছুদিন নিজেকে সরিয়ে নিজেকে স্হির রেখে চারপাশের ভীষণ দ্রুত ছুটেচলা মানুষগুলোকে দেখার সুযোগ :: অদ্ভুত একটা অনুভূতি - আত্মপরিচয় ভোলা কারও সাথে নিজের খুব বেশি পার্থক্য খুঁজে না পাওয়া ;
ছোটখাটো কিছু অস্ত্রচিকিত্সা এবং বড়সড় একটা অভিজ্ঞতা :: হঠাত্ বয়স বেড়ে যাওয়ার অপ্রিয় অনুভব, প্রসঙ্গকাঠামোয় দর্শকের ভূমিকাটা স্থায়ী নয়, নয় কাঙ্খিতও । কাজেই নিজের ভূমিকা রূপায়নের একটা অনিবার্য তাড়া ~

অপ্রিয় ব্যক্তিগত প্রসঙ্গের এখানেই সমাপ্তি ::

শনিবার, এপ্রিল ১৫, ২০০৬

আমাদের কিছু যায় আসে না

এ লেখার প্রথম অংশটা অনেকদিন আগে লিখতে চেয়েছিলাম । লেখা হয়ে ওঠেনি ।

রাষ্ট্রের নাগরিক তালিকায় আমার নাম আছে কি না আমি জানি না :: এ জাতীয় কোন বস্তুর অস্তিত্ব আদৌ আছে কি না জানতেও ইচ্ছে করছে না , তথাকথিত গণতন্ত্রে মত প্রয়োগের সুযোগও হয়নি কখনো :: তবু এ লেখাটা আমি লিখবো ।

বাঙালি অথবা বাংলাদেশী জনগোষ্ঠী সমালোচনা অথবা আলোচনার মত ব্যাপারে ভীষণ অপটু ; বাঙালির রাজনৈতিক আলোচনার তাপমাত্রা সাধারণত খুব সহজেই বেড়ে ওঠে , উষ্ণ থেকে হয়ে ওঠে উত্তপ্ত , হালকা থেকে মোড় নেয় ভারী কোন ব্যক্তিগত আক্রমণে ।
এরকম কোন একটা অলস আলোচনায় 'র ' আদ্যোক্ষরের এলিট ফোর্স এর বদান্যতায় আমাদের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কীভাবে বদলাচ্ছে - এ নিয়ে সবাইকে বেশ ইতিবাচক একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে দেখে ভালো লাগছিল ।

ভালো লাগছিল এই জন্যে যে আমরা তাহলে বদলাতে পেরেছি , সুবিধাবাদী ধনতান্ত্রিকতা দিয়ে বানানো রিসাইকল্ যোগ্য প্যাকেটে মোড়ানো গণতন্ত্রের সুফল আমরা পেয়ে গেছি এবং বুঝে গেছি যে , ব্যাপারটা ভীষণ সুস্বাদু, যদি আমরা হেরে যাওয়া-দের দলে না থাকি ।

আমরা খুব সহজেই প্রশংসা করবো এমন কোন কিছুর যেটা আমার (শব্দটা 'আমাদের' নয় ) পক্ষে যায় এবং মাথা ঘামাবো না এমন কিছু নিয়ে যেটার কোন প্রভাব আমার জীবনে নেই :: আমাদের দাতা প্রভূদের দেশের গণতন্ত্রের ম্যানুয়ালে এমনটাই লেখা আছে এবং সেটাই ট্রেন্ড এখনকার । আমরা এখন ২৪ ঘন্টা আপটুডেট থাকবো বিভিন্ন কারওয়ানবাজার ভিত্তিক ক্যাবল চ্যানেলের মাধ্যমে, সরাসরি সিলেট থেকে দেখতে পাবো আমাদের এলিট ফোর্সের কর্মদক্ষতা :: প্রমাণ করবো যে আমরা আসলে এগিয়ে গেছি ।

এরপর আমরা টাইম পড়বো ; এর অনেক রকম ভার্সন এর কোন একটায় চপার এর জানলা দিয়ে অপলক তাকিয়ে থেকে পোজ দেয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তার শব্দমালা আমাদের মুগ্ধ করবে :: আমরা জানবো না বা জানার চেষ্টা করবো না এর পেছনের কারাকুরি ....


কানা বক্কর , মুরগী মিলনদের বিচার না করে রাষ্ট্র আমাদের বুঝিয়ে দেবে যে , আসলে বিচারব্যবস্থাটা চোর-ছ্যাঁচরদের জন্যে ; কানা এবং মুরগী জাতীয় পদবীধারীদের জন্যে সেটার দরকার নেই , আমরা হ্যাঁ ও বলবোনা , না ও বলবোনা কারণ তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না :: আমরা দেখবো আমাদের পাশের বাড়ির শান্ত ক্রিকেটপাগল ছেলেটাও একদিন এলিট ফোর্সের দপ্তর থেকে ফিরে আসবে না - আমরা ব্যাপারটা জানবো কোন সুন্দরী সংবাদ উপস্থাপকের আধুনিক বাংলা উচ্চারণ এবং হৃদযন্ত্রের অসুখ আছে এমন মানুষদের দেখা বারণ সব তথ্যচিত্র সমৃদ্ধ কোন রিপোর্ট থেকে :: কারণ আমরা এখন ভীষণ ট্রেন্ডি ।


আমরা দেখবো আলোয় ভরা মেগাসিটি থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে কোথাও কিছু চাষাভুসো মানুষ হাইসাঁও এবং লাঠিসোটা নিয়ে আলোর জন্যে বিদ্রোহ করে বসবে -

আমরা হ্যাঁ ও বলবোনা , না ও বলবোনা কারণ তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না :: আমরা রাষ্ট্রের কর্মদক্ষতা দেখবো এবং অপেক্ষা করবো বিজ্ঞাপনের পর আরো আপডেটের জন্যে :: কারণ আমরা এখন ক্ষুধার্ত আপডেটেড থাকার জন্যে ।

আদ্যোক্ষরের একজন মেয়র-কাম-এমপি ( যাকে তার শহরের মানুষ অনেকদিন থেকে দেখে আসছে, প্রতি ঈদে শহরের সবচেয়ে বড় জামাতে হাজির হয়ে আশ্বাস দেন শহরটাকে এশিয়ার সেরা শহর বানানোর , আমরা যারা চোখে দেখতে পেতাম তারা শহরটার কোন পরিবর্তন দেখিনি কখনো যদিও, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে আমরা চোখে দেখতে পেতাম ) - তার আশ্বাসবাণী দিয়ে ভোলানোর চেষ্টা করবেন সেই চাষাভুসো মানুষগুলোকে :: এবং ব্যর্থ হবেন , কারণ ওরা অনেকবার একই আশ্বাস শুনেছে বিভিন্ন ফরম্যাটে ।

আমরা দেখবো, একজন মা তার ছেলের রক্তমাখা শার্ট দেখাচ্ছেন , কিংবা একজন ঘরকুনো গিন্নির হাতে হাইসাঁও


আসুন, আমরা এর থেকে মেগাসিরিয়াল দূরের মানুষ অথবা সাঁড়ে একানব্বই দেখবার জন্যে চ্যানেল বদলাই । আমাদের কী যায় আসে এরকম খবরে ?

--------------
১ :: জাপানি শব্দ ; অর্থ : মেকানিজম :: শব্দটার উদ্ভব চাবি ঘুরিয়ে চালানো যায় এরকম পাপেট থেকে
২ :: ভারী এবং বাঁকানো কাস্তে , রাজশাহী অঞ্চলে ব্যবহৃত প্রতিশব্দ

শনিবার, এপ্রিল ০৮, ২০০৬

এপ্রিল

আমাকে আজ দাও না ছুটি , একলা একা রোদে হাঁটি
ভাল্লাগেনা মেঘে ঢাকা শহুরে এ বসত-বাটি
মানুষ আমি, আমারও তো ইচ্ছে করে মন ভরাতে
তোমরা অনেক দ্রুত হাঁটো, ক্লান্ত লাগে তাল মেলাতে
............................................................
অঞ্জন দত্তের গান থেকে

অনেকটা সময় পর লিখতে বসা :: পুরোপুরি নিজস্ব গল্প ।
অন্য সবকিছুর মত আরেকটা এপ্রিল এসে হাজির এবং সেই সাথে একটা খারাপ সময়ও ::
এপ্রিল মাস হিসেবে অর্থহীন হলেও অনেক ব্যাপারে একটা স্টপেজ এর মত , একটা যাত্রা শেষ অথবা আরেকটা নতুন পথে হাঁটা শুরু করা :: গ্রাজুয়েশনের শেষ বছরে পা দেয়া এবং অনেক গুলো সিদ্ধান্তহীন পরিস্থিতির মুখোমুখি ;

শরীরে স্বাভাবিক নিয়মে অস্বাভাবিক ব্যথা এবং খুব সাধারণ ও প্রায়-পূর্ব নির্ধারিত কোন ঘটনার মত নার্ভে স্টেরয়েড এর প্রবাহ দিয়ে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার কৃত্রিম এবং ব্যর্থ চেষ্টা :: আমরা এখনো সাই-ফাই এর জগতে প্রবেশ করিনি যে বেগুনি রঙের কোন কৃত্রিম তরল মনের ব্যথা ভুলিয়ে দেবে কিংবা সামান্য আর্টিফিসিয়াল স্টেরয়েড ভুলিয়ে দেবে অসহ কোন শারীরিক যন্ত্রণা :: কাজেই আপাতত শারীরিক যন্ত্রণার কাছে পরাজয়ের শিকার এবং অহংকারী একজন হোমো স্যাপিয়েন্স* হিসেবে পরাজয়কে অস্বীকার করা ।

অনেকদিন পর স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা হিসেবে রান্না-বান্না ; ডাল , ট্যুনা কাবাব এর বেটা ভার্সান ; সামান্য অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা - ক্রেডিট কার্ড এর উপরে চাপানো ভার :: আগামীকালকে অস্বীকার করে পকেটের শীতলতা ঢাকার মোটামুটি সফল একটা প্রচেষ্টা ।

নিজেকে বদলে ফেলার অনেকগুলো প্রয়োজন অনুভব এবং সেটা করতে পারবো না - প্রায় জানা বলেই যেমনটা আছি, যেমনটা চলে যাচ্ছে - তেমনটা চলে যাক - ভেবে অর্ধেক হেরে বসে থাকা । বদলে যাওয়া পৃথিবীতে, দৌড়ুতে থাকা স্মার্ট সব অতিআধুনিক মানুষের মাঝে আনস্মার্ট এবং অর্থোডক্স এক জীবনযাপন ।

নিজের জন্যে নিজেরই প্রার্থনা - স্বাভাবিক জীবন এবং ভাল সময়ের প্রত্যাশায় ।

*হোমো স্যাপিয়েন্স :: Homo Sapiens শব্দটার সরাসরি অর্থ :: জ্ঞানী মানুষ :: মানুষ কতটা অহংকারী, এর থেকেই বোঝা যায় ।

বৃহস্পতিবার, মার্চ ৩০, ২০০৬

বসন্ত





বসন্ত ; চেরি সমারোহ
::March 29, 2006 : Tokyo Institute of Technology, Ookayama Campus, Tokyo ::

শুক্রবার, মার্চ ২৪, ২০০৬

না আঁকা একটা ছবি

একটা ছবি আঁকতে ইচ্ছে করছে ।
যান্ত্রিকতার মাঝে সামান্য নির্মল নীল মিশিয়ে ; আর্টিফিশিয়াল শব্দকে ছাপিয়ে একটা টুং টাং - নূপুর ? নূপুর নয় বোধহয় পিঠে বাঁধা ছোট্ট ব্যাগে ঝুলতে থাকা ছোট্ট একটা ভালুকের সাথে ছোট্ট একটা বেল । টুং টাং টুং টাং ......
বিবর্ণ মেঘের মাঝে হেসে ওঠা একটা সাজানো সুরের রংধনু

ছোট্ট একটা মানুষ, ছোট্ট হাতটা বাঁধা একটা বড় হাতের সাথে :: হেঁটে চলে যায় । নির্ভরশীল একটা সেতু ; না, ভেঙে পড়ে কখনো কখনো ; সব্বাই যখন বড় হয়ে যায় ::

একজন আহত মানুষ, সাথে আরেকজন , বন্ধনে জড়ানো সম্ভবতঃ সদ্য অথবা অনেকদিনের - তাতে কিছু যায় আসে না - বর্তমানটাই আসল । আর স্থিরচিত্রে সময়টা কোন ফ্যাক্টর নয় ।

একটা ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে বোর্ড, একগাদা সংখ্যা এবং লোগোগ্রাম এর প্রবাহ - অর্থপূর্ণ :: অপেক্ষায় থাকা একদল মানুষ - কখন লোগোগ্রামের প্রবাহে নিজের নম্বরটা ভেসে উঠবে ::
ঘুমজড়ানো আমিও সে দলে , অনেকদিন পর সকাল দেখা । বড্ড ঘুমুতে ইচ্ছে করছে ~ মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে - টুং টাং টুং টাং ......
সামনে আরেকটা ছোট ডিসপ্লে বোর্ড, একটা নাম লেখা । ছবিটা শেষ এখানেই ।

আজকের দিনের সবটুকু শ্রদ্ধা এই ডিসপ্লে বোর্ডে লেখা নামের মানুষটার প্রতি , হয়ত কখনো আর দেখা হবে না , হয়ত হতেও পারে পথচলতি কোন সরলরেখায় , কে জানে ? দেখা হোক আর নাই হোক, ছবিটা এই মানুষটাকে উতসর্গ ~




ছবিটা আঁকা হবে না , আমি জানি : আমি ছবি আঁকতে পারি না , পুরো স্কুলজীবনে এই একটা বিষয়ে আমাকে প্রায় এমনি মার্কস দিয়ে দেয়া হতো অন্ততঃ আমার তাই ধারণা : অন্য প্রায়-সব বিষয়ের সাথে ড্রইং এর নম্বরটা ভালো দেখাত না , সেজন্যে হবে হয়ত~

বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৬, ২০০৬

ভালো থাকা

আশা । আমরা কি আশা করবো ? আশা খুব প্রশংসিত , আশার প্রশংসায় পৃথিবী পঞ্চমুখ , কিন্তু আশার কিছু নেই পৃথিবীতে , আশা করার স্থান নয় জীবন । স্থূল জীবন যাপনের জন্যে স্থূল ছোটো ছোটো আশা আমরা করে থাকি , ভুলে থাকি জীবনের বিশাল আশাহীনতাকে ; কিন্তু যদি আশা করি যে জীবনের নিরর্থকতাকে অতিক্রম করতে পারবো , তাহলে জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তুলি না , বরং আত্মহত্যা করি দার্শনিকভাবে ।

:::: "আমার ইন্দ্রিয়গুলো" - হুমায়ুন আজাদ



ভালো আছি ... আমরা সবসময় যেমনটা বলি তেমন ভালো থাকা~

ভালো থাকা র কোন সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা আছে কি ? নিজের জগতের অন্যের সাথে তুলনা মস্তিষ্ককে হয়তো বা ভালো থাকার অনূভুতি দেয় , জীবনের ক্লান্তিকর পুনরাবৃত্তি :: ইন্দ্রিয়ের সুখ এর প্রাচুর্য কিংবা রোববার এর পর সোমবার- এভাবে হয়তবা একটা আকার আমরা নিজেরাই তৈরি করি , সংজ্ঞায়িত করি ভালো থাকা কে এবং সেই মানদণ্ডে ফেলে দিই নিজেকে ।

নিজেরাই সেই মানদণ্ডের স্কেলটা বদলে ফেলি , একই অবস্থায় রোববারে নিজেকে সুখী মনে করলেও নিজেদের তৈরি করা বদলে যাওয়া মাপকাঠিতে নিজেরাই অসুখী হই এবং সোমবারে ভালো থাকি না ।

ব্যাপারটা বোধহয় অনেকটা Nerve Block Therapy** র মত ।

অর্থহীন মাপকাঠি দিয়ে মূল্যায়ন করতে হয় যে জীবন - সে জীবনে বাঁধা পড়া - নিজেকে মাঝেমধ্যে ল্যাবরেটরীতে আটকা পড়া গিনিপিগের চেয়ে বেশি কিছু মনে হয় না ।


** শরীরে কোন নির্দিষ্ট জায়গায় ব্যথা কমিয়ে দেয়ার জন্যে অনূভুতি নাশক দিয়ে ব্যথা-অনুভূতির স্কেল উপরে বাড়িয়ে তোলা , স্কেলের সীমা বাড়িয়ে অনুভূতি মস্তিষ্কে পৌঁছাতে বাধা দেয়া :: ব্যাপারটা এককথায় সম্ভবতঃ এরকম - আমি মেডিক্যাল সায়েন্স পড়িনি - কাজেই আমার ব্যাখ্যাটা হয়ত অসম্পূর্ণ :: তবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ব্যাপারটার সাথে আমার পরিচয় **

মঙ্গলবার, মার্চ ১৪, ২০০৬

মৃত্যু

কাকেরা রোজ ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে
অন্য একটা কাকের মৃত্যু
,
নিজের খাবারের অংশ বাড়বে এই প্রতীক্ষায়
::

খাবারে ভীষণ টান
নতুন নতুন আইন, নতুন ব্যবস্থা
রাস্তা-উঠোন ধুয়েমুছে রাখে সব্বাই ;
দূর্ভিক্ষ না এসে যায় এবার - বলে সবচেয়ে বয়েসি কাকটা
সেবারের মত, সেই সেবার
..... গল্পে কান দেয়না কেউ

দূরে আরেকটা জটলা ,
কোনও মৃত্যু , খাবারের ভাগাভাগি অথবা কোন বিবাদ
প্রথমটা হলে কোনও লাভ নেই যদিও

আজকাল কাকের মৃত্যু
খাবারের বরাদ্দ বাড়ার কোন নিশ্চয়তা দেয় না ।

মঙ্গলবার, মার্চ ০৭, ২০০৬

ইচ্ছে


মাঝেমাঝে ইচ্ছে করে এই ভীড়ে হারিয়ে যেতে~

মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারী ২৮, ২০০৬

এখন

এখন খাদের পাশে রাত্তিরে দাঁড়ালে
চাঁদ ডাকে আয়, আয়, আয়
এখন গঙ্গার তীরে ঘুমন্ত দাঁড়ালে
চিতা কাঠ ডাকে আয়, আয়, আয় ।

যেতে পারি,
যে কোন দিকেই আমি চলে যেতে পারি
কিন্তু কেন যাবো ?

*শক্তি চট্টোপাধ্যায় :: "যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো "



অনেকদিন কিছুই লেখা হয়নি, সত্যি বললে লেখার কিছু নেই, তাই :: ঘটনাবিহীন জীবন - এক কথায় বললে ~
ইদানীং কী করছি - কেউ জিজ্ঞেস করলেও উত্তর দেওয়া হয় না :: উত্তরটা জানা নেই বলে । জীবনের একটা ম্যানুয়াল যদি তৈরি করা থাকতো !

মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারী ২১, ২০০৬

গতানুগতিক

সব বৃষ্টি ঝরে গেছে, সবটুকু অশ্রুও,
বৃষ্টিমন্ত্রী বলছেন, এ বছরের বৃষ্টির বরাদ্দ শেষ,
অশ্রুমন্ত্রক বলছে জরিমানা করবে ,এর পর কেউ কাঁদলে::
তবুও আমি এই পথ ধরে হাঁটি,
আমার কিছু জল পাওনা ছিল বলে ::


অনেকদিন পরে একটা গতানুগতিক পোস্ট করতে ইচ্ছে হলো ...
অনেকটা লম্বা সময় কোন পোস্ট করিনি ; না, এর কোন অজুহাত এই পোস্টে দেখাবো না :: আমাদের বেশির ভাগ কাজই অর্থহীন এবং লজিক ছাড়াই, নয় কি? পোস্টিং বন্ধ রাখা এবং আবারো শুরু করা - না, বিশেষ কোন কারণ নেই ।

এই একটা টার্ম সময়ের কাছে হেরে গেছি বহুবার, সারা রাত না ঘুমিয়েও অসম্পূর্ণ অবস্থায় অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়া :: লেকচার নোটস্ স্পর্শ না করেই পরীক্ষা দেয়া :: যাই হোক, বাদ দিই সে গল্প (: অলস মানুষদের গল্প, সারা জীবন ১১টা ৫৭ মিনিটে ১২টার ট্রেন ধরার প্রস্তুতি নেয়া মানুষদের টিপিক্যাল গল্প~

একটা অদ্ভূত জিনিষ পড়লাম, মানুষের দেহঘড়ির সময় ২৪ ঘন্টা ১১ মিনিট, বাস্তব সময়ের চেয়ে ১১ মিনিট বেশি :: দিনের আলোয় সময়ের হেরফেরটা ঠিক করে ফেলে আমাদের অসাধারণ প্রসেসর ; ব্যাপারটা বোধহয় বেশ পুরনো :: আমি জানতাম না । নিজের উপরে এক্সপেরিমেন্ট করে দেখতে ইচ্ছে করছে হেরফের টা লম্বা সময় রিসেট না হলে কেমন হবে :::

রবিবার, ফেব্রুয়ারী ১২, ২০০৬

কাকতাড়ুয়া

সবকিছু বোধহয় এখনও শেষ হয়ে যায়নি - এমনটা সান্ত্বনা শুনিয়েছিলাম কাকে যেনো ; সান্ত্বনা কিংবা সহানুভুতি কীভাবে দিতে হয় কোন বইয়ে পড়া হয়নি কখনো যদিও ;

এখন আর সেই ব্যর্থ চেষ্টা করি না, ভীষণ হাস্যকর শোনাতে পারে তাই ।
এখন মাঝেমধ্যে নিজেকে জিবরানের কবিতায় আবিষ্কার করি, অক্লান্ত কাকতাড়ুয়ার ভূমিকায় ; যাকে দেখে কাকেরা ভয় পায়নি কখনো ::
সম্ভবতঃ কাকতাড়ুয়া কে অবজ্ঞা করে চলা কাকের চরিত্র টা পেলেই স্বস্তি বোধ করতাম ;

সে যাই হোক :: জিবরানকে ধন্যবাদ এই জন্যে, আমার জন্যে একটা অবয়ব তৈরিই আছে - হোক তা খড়নির্মিত এবং এক পা এর ::
*তোমাকে কানে কানে বলে রাখি, আমার অবশ্য দ্বিপদই পছন্দ * ।

কে একজন বলেছিল জীবনটার উপরে ব্যাকট্র্যাকিং অ্যালগরিদম খাটানো গেলে ভালো হতো :: আমি এত কী বুঝি - কীভাবে ভয় দেখানো যায় এটুকুই শিখতে পারলাম না, আর .....
তাই সায় দিতে ইচ্ছে করে নি ।

রবিবার, জানুয়ারী ০১, ২০০৬

প্রথম সূর্য


মেঘে ঢাকা অদেখা সূর্যের প্রথম আলো :: ২০০৬-০১-০১ ০৬:৫৫